একটুর জন্য ‘দৃশ্যম’ হল না। মাথার উপর ৮৫ লক্ষ টাকার দেনার বোঝা! সেই দেনার দায় মেটাতে কী না করলেন এক সরকারি কর্মচারী। জালিয়াতি, খুনের চক্রান্ত— বাদ গেল না কিছুই। শেষে এক নিরপরাধ ব্যক্তিকে আগুনে পুড়িয়ে খুনও করলেন তিনি। তেলঙ্গানার এই ঘটনায় পুলিশ ওই সরকারি কর্মচারীকে সপরিবার গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই সরকারি কর্মচারী তেলঙ্গানার রাজ্য সচিবালয়ের সহকারী বিভাগীয় কর্তা (অ্যাসিসট্যান্ট সেকশন অফিসার বা এএসও )। তাঁর নাম প্রকাশ না করলেও কুকর্মের বিশদ ফিরিস্তি দিয়েছেন তদন্তকারীরা।
তাঁরা জানিয়েছেন, শেয়ার বাজারে ৮৫ লক্ষ টাকা খুইয়ে জীবনবিমার টাকা পাওয়ার ছক কষেছিলেন ওই সরকারি কর্মী। তার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে ধীরে ধীরে সাজিয়েছিলেন নিখুঁত পরিকল্পনা।
পরিকল্পিত অপরাধ নিয়ে তৈরি বলিউডের ছবি ‘দৃশ্যম’-এর কথা মনে পড়ে যেতে পারে। এই সরকারি কর্মচারীও খানিকটা একই অধ্যাবসায়ে সাজিয়েছিলেন গোটা ঘটনা।
দেনার দায়ে জর্জরিত ওই এএসও এক বছর ধরে ২৫টি জীবনবিমার পলিসি করান। যার মূল্য প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। সেই বিমা করানোর পর শুরু হয় পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ বিমার টাকা পাওয়ার চেষ্টা।
জীবনবিমার টাকা। সেই টাকা মৃত্যুর পরই পাওয়ার কথা বিমাকারীর। ওই সরকারি কর্তা এর পর খুঁজতে শুরু করেন এমন এক জনকে, যাঁর সঙ্গে তাঁর চেহারার মিল রয়েছে। পেয়েও যান।
পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি মেদক জেলারই একটি গ্রামের সীমান্তে একটি খাদের গভীরে পাওয়া যায় পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া একটি দেহ। আগুনে জ্বলে যাওয়া একটি গাড়ির চালকের আসনে বসানো ছিল দেহটি।
মৃত্যুর তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে মৃত ব্যক্তি একজন সরকারি কর্মচারী। হায়দরাবাদে রাজ্যের সচিবালয়ের কর্তা তিনি। বয়স ৪৪।
কিন্তু তদন্ত এগোতে জানা যায়, যাঁর মৃত্যুর তদন্তে তাঁরা নেমেছেন, তিনি বহাল তবিয়তে বেঁচে আছেন।
পুলিশ জানতে পারে, ঘটনাটি ঘটে গত ৮ জানুয়ারি। ওই সরকারি কর্তা তাঁর এক আত্মীয়ের সঙ্গে নিজামাবাদ রেল স্টেশন থেকে এক ব্যক্তিকে কথায় ভুলিয়ে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে আসেন।
জানা যায়, মধ্যবয়সি ওই ব্যক্তিকে এর পর নিজের মাথার চুল কামিয়ে ফেলতেও বাধ্য করেন তাঁরা। পরিয়ে দেন অফিসারের পোশাক।
তার পর একটি গাড়িতে পেট্রল ঢেলে তাঁকে তার ভিতরে বসতে নির্দেশ দেন ওই সরকারি কর্তা।
পুলিশের অনুমান, ওই ব্যক্তি তাতে আপত্তি জানালে তাকে খুন করে গাড়িতে বসিয়ে দেওয়া হয়। তার আগে তাঁর পোশাকের ভিতর ঢুকিয়ে দেন নিজের পরিচয় পত্র।
পুলিশ এই ঘটনায় ওই সরকারি কর্মী, তাঁর স্ত্রী এবং দুই আত্মীয়কে গ্রেফতার করেছে।
‘দৃশ্যম’ ছবিতে মূল চরিত্রাভিনেতা অজয় দেবগণের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। সেই খুনে জড়িত ছিলেন তাঁর স্ত্রী এমনকি, দুই কন্যাও। অপরাধ সংক্রান্ত সিনেমাপ্রেমী অজয় নিখুঁত পরিকল্পনায় আইনের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিয়েছেলেন চার জনকেই। এ ক্ষেত্রে তেমন পরিকল্পনা করেও শেষ রক্ষা হল না।
বাস্তবের ‘দৃশ্যম’-এ অবশ্য অন্য দৃশ্য দেখল তেলেঙ্গানা। যেখানে পরিকল্পনা সাজিয়েও শেষটায় বাঁচতে পারলেন না পরিকল্পনাকারী।