স্বপ্ন তো অনেকেই দেখেন। কিন্তু মনের মণিকোঠায় তিল তিল করে লালন-পালন করা স্বপ্নকে সত্যি আর ক’জন করতে পারেন? লক্ষ্য স্থির থাকলে দেরি হলেও স্বপ্নপূরণ যে হয়, তা দেখিয়ে দিয়েছেন গুজরাতের ‘নানাজি’।
বয়স ৮৫। অবসরের পর আর চার-পাঁচ জনের মতো বাড়িতে বসে থাকেননি। বরং বলা ভাল, নয়া উদ্যমে নিজের ব্যবসা শুরু করেছেন। আর সেই ব্যবসার দৌলতেই তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
আজীবন কঠোর পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু সাফল্যের মুখ দেখেছেন বৃদ্ধ বয়সে। জীবনে প্রথম গাড়ি কিনেছেন রাধাকৃষ্ণ চৌধুরি। তিনি নানাজি নামেই পরিচিত।
৫০ বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছেন এই ব্যবসায়ী। অবসরের পর মেয়ের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন ওই বৃদ্ধ ও তাঁর স্ত্রী।
মেয়ের বাড়িতেই যেন নানাজির স্বপ্নের বীজ বপন হয়। নানাজির ভাগ্য প্রসন্ন হয় তাঁর মেয়ের বাড়িতেই।
আচমকাই দেখেন, তাঁর মেয়ের মাথা থেকে অকালে পড়ছে চুল। চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে নাজেহাল অবস্থা।
কোনও কিছুতেই চুল পড়ার সমস্যা মিটছে না। এই অবস্থায় নানাজির শরণাপন্ন হন তাঁর মেয়ে।
মেয়ের এই পরিণতি দেখে স্বভাবতই চিন্তায় পড়েন ওই বৃদ্ধ। চুল পড়ার সমস্যা নিরসনে রীতিমতো পড়াশোনা শুরু করেন।
প্রায় এক বছর ধরে এ বিষয়ে পড়াশোনা করার পর আয়ুর্বেদিক তেলের একটি মিশ্রণ বানান। তাতেই বাজিমাত হয়। এর পরই স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, ‘হেয়ার কেয়ার কোম্পানি’ তৈরি করবেন।
যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ২০২১ সালের জুন মাসে স্ত্রী শকুন্তলা চৌধুরিকে সঙ্গে নিয়ে তৈরি করলেন আয়ুর্বেদিক হেয়ার কেয়ার কোম্পানি। যার নাম ‘আভিমি হার্বাল’।
নানাজির কথায়, ‘‘আমার মেয়েই এখন আমার ব্যবসার পার্টনার। ওর যখন মারাত্মক চুল পড়ছিল, আমায় সমাধান খুঁজতে বলেছিল। প্রায় এক বছর ধরে পড়াশোনা করি এ নিয়ে। আয়ুর্বেদিক তেলের একটি মিশ্রণ বানাই, যা মেয়ের চুল পড়ার সমস্যা নিরসনে সাহায্য করে।’’
পথচলা শুরুর মাত্র ছ’মাসের মধ্যেই সাফল্য পায় নানাজির সংস্থা ‘আভিমি হার্বাল’।
তাঁর কথায়, কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। সাফল্যের চূড়ায় উঠতে তাঁর সময় লেগেছিল ২৫ বছর, এ কথাও জানিয়েছেন রাধা কৃষান।
নানাজির এই আয়ুর্বেদিক কোম্পানি একটা কেলেঙ্কারি! এমন অপবাদও দেন অনেকে। তবে বিশ্বাস হারাননি তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা জানতাম, আমরা কোনও অন্যায় করছি না, এটাই আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছে।’’
গুজরাতের ওই বৃদ্ধ বলেছেন, টিম ওয়ার্ককে কখনও হেয় করা উচিত নয়। কারণ সাফল্যের পিছনে এর বড় ভূমিকা থাকে। সাফল্যের নেপথ্যে পরিবারেরও যে বিরাট অবদান রয়েছে, সে কথা উল্লেখ করতেও ভোলেননি নানাজি। গুজরাতের এই বৃদ্ধের স্বপ্নপূরণের কাহিনি অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে বলেই আশা করা যায়।