ছুটির দিনগুলি আনন্দে কাটাতে নতুন নতুন জায়গার খোঁজে থাকেন ভ্রমণপিপাসু ভারতীয়রা। সেই জায়গাগুলিকে কেউ চোখবন্ধ করে মনে ধরে রাখেন। আবার কেউ নতুন জায়গার সৌন্দর্যকে ক্যামেরাবন্দি করে রাখতেই বেশি স্বচ্ছন্দ।
চোখের রসনা তৃপ্তির জন্য ভারতে একাধিক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। তবে এই পর্যটনস্থলগুলির মধ্যে কয়েকটি এমন জায়গাও রয়েছে, যেগুলি ভারতের একেবারে প্রান্তসীমায়। সেই বিরল চরিত্রের জন্য এই জায়গাগুলিতে সারা বছর ধরে ভিড় জমান পর্যটকরা।
ভারতের একদম সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত এই দর্শনীয় জায়গাগুলির মধ্যে একটি হল ‘হিন্দুস্তান কি অন্তিম দুকান’। অর্থাৎ ‘ভারতের শেষ দোকান’। এই দোকানের এই অদ্ভুত নাম হওয়ার কারণ কী?
উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার এই দোকানটি সত্যি সত্যিই ভারত-চিন সীমান্তের এক্কেবারে লাগোয়া শেষ দোকান। এই দোকানটির কিছু দূর থেকেই শুরু হয়ে যায় চিন সীমান্ত।
প্রায় ২৫ বছর আগে চন্দর সিংহ বাদওয়াল নামে এক ব্যক্তি এই চায়ের দোকানটি চালু করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই চায়ের দোকানটিই ওই গ্রামের প্রথম চায়ের দোকান।
সমতল থেকে প্রায় ৩,১১৮ মিটার উচ্চতায় ছোট্ট এই দোকানটি হিমালয়ের কোলে অবস্থিত। দোকানটি আক্ষরিক অর্থেই চিন সীমান্ত থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে।
ইন্দো-তিব্বত ও চিন সীমান্তের কাছে থাকা চিতকূল গ্রাম আক্ষরিক ভাবেই ভারতের শেষ গ্রাম। কিন্তু ভারতের শেষ গ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় অবস্থিত মানা গ্রাম ।
মানা গ্রাম বদ্রীনাথের নিকটবর্তী অন্যতম সেরা আকর্ষণ। বদ্রীনাথ থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে এই গ্রাম। সরস্বতী নদীর তীরে ছোট্ট এই গ্রাম সমতল থেকে প্রায় ৩,২১৯ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। হিমালয় পর্বতমালায় ঘেরা এই গ্রাম মে-জুন মাসে পর্যটকদের ভিড়ে ঠাসা থাকে। কারণ, এই দু’মাসে পর্যটকরা ভিড় জমান বদ্রীনাথেও।
একই রকম ভাবে ধনুষকোডি ভারতের শেষ ভূখন্ড হিসাবে পরিচিত। এখানে এমন একটি রাস্তা রয়েছে, যাকে ‘ভারতের শেষ রাস্তা’ বলা হয়। ধনুষকোডির এই রাস্তা থেকে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার দূরত্ব মাত্র ৩১ কিলোমিটার।
ধনুষকোডি তামিলনাড়ু রাজ্যের পামবান দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বের একটি পরিত্যক্ত শহর। এটি পামবানের দক্ষিণ-পূর্বে এবং শ্রীলঙ্কার তালাইমান্নার থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। শহরটি ১৯৬৪ সালে রামেশ্বরম ঘূর্ণিঝড়ের সময় ধ্বংস হয়ে যায়। তার পর থেকেই এই এলাকা জনবসতি শূন্য।
পৌরাণিক কাহিনি মতে, ধনুষকোডি শহরকে সেই জায়গা বলে মনে করা হয়, যেখানে হনুমানকে লঙ্কা পর্যন্ত সেতু তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন রাম। রাম এই সেতু দিয়েই লঙ্কা পৌঁছন এবং সীতাকে রাবণের হাত থেকে মুক্ত করেন বলে কথিত।
ভারতের ‘শেষ’ হিসেবে চিহ্নিত একটি জায়গা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। মালদহ জেলার হবিবপুরে ভারতের প্রাচীন এবং শেষ রেলওয়ে স্টেশন সিঙ্গাবাদ। এই রেল স্টেশনটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত। স্বাধীনতার আগে তৈরি এই স্টেশনটিই ভারতীয় ভূখন্ডের শেষ রেল স্টেশন।
ভারতের দক্ষিণে কন্যাকুমারী রেল স্টেশনকেও অবশ্য ‘ভারতের শেষ রেল স্টেশন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ভারতের পূর্বে লিডো স্টেশন, ভারতের উত্তরে জম্মু-কাশ্মীরের বারামুল্লা স্টেশন এবং পশ্চিমে গুজরাটের নালিয়া স্টেশনকেও ভারতের অন্তিম স্টেশনের তকমা দেওয়া হয়ে থাকে।
কন্যাকুমারী সমুদ্র সৈকত ভারতের সবচেয়ে সুন্দর এবং শেষ সৈকতের তকমা পেয়েছে। দারুণ সব সুস্বাদু সামুদ্রিক খাবারের পাশাপাশি মনোরম দৃশ্যও উপভোগ করা যায় এই সৈকতে।
কন্যাকুমারী সমুদ্র সৈকত আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরের সংযোগস্থলে। এই সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখলে জীবন সার্থক হয় বলেও প্রচলিত।