পর পর চার বছর বিশ্বের সব চেয়ে দূষিত রাজধানী হিসাবে উঠে এল দিল্লি।
বিশ্বের নানা শহরে বায়ু দূষণের পরিমাপ করে যে সংস্থা, তাদের ‘ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট’ অনুযায়ী বিশ্বের সব চেয়ে দূষিত ৫০টি শহরের মধ্যে ৩৫টিই ভারতের। দিল্লি ছাড়া এই তালিকায় রয়েছে বিভাড়ি, গাজিয়াবাদ, জৌনপুর, নয়ডা, গ্রেটার নয়ডা, বাঘপাট, হিসার, ফরিদাবাদ, রোহতক, লখনউ, ঝিন্দ, গুরুগ্রাম, কানপুর। এর পর রয়েছে মুজফ্ফরপুর, বারাণসী, বুলন্দশহর, মেরঠ, কাদৌরা, পটনা, ধারুহেরা, দুর্গাপুর, আনরোহা, চরখি দাদরি, আগরা, যমুনা নগর, মুজফ্ফর নগর, আলমপুর, লুধিয়ানা, সোনিপথ, কুরুক্ষেত্র, জোধপুর, সিংগরৌলী, আঙ্কলেশ্বর, অম্বালা।
ভারতের কোনও শহরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-র বেঁধে দেওয়া বায়ু দূষণের মাপকাঠি (প্রতি কিউবিক মিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম)-র নীচে নেই। দূষণ-তালিকায় কলকাতা রয়েছে ৬০ নম্বরে। কলকাতায় দূষণের মাত্রা প্রতি কিউবিক মিটারে ৫৯.০ মাইক্রোগ্রাম। আসানসোল ৫৮ নম্বরে। বর্ধমান শহর ১৩৬ নম্বরে। শিলিগুড়ি ১৯১ নম্বরে। হলদিয়া রয়েছে ৩৭১ নম্বরে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের মাত্র তিন শতাংশ শহর এই মাপকাঠির নীচে রয়েছে। কোনও দেশই তাদের দূষণমাত্রা এই মাপকাঠির মধ্যে রাখতে পারেনি।
সুইৎজারল্যান্ডের সংস্থা ‘আইকিউ এয়ার’ বিশ্বের ১১৭টি দেশের ৬ হাজার ৪৭৫টি শহরে বায়ু দূষণের মাত্রা পরিমাপ করে এই রিপোর্ট তৈরি করেছে।
বিশ্বের সব চেয়ে দূষিত রাজধানী দিল্লি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের ঢাকা। তৃতীয় স্থানে রয়েছে মধ্য আফ্রিকার দেশ চাদ-এর রাজধানী এন’জামেনা। চতুর্থ স্থানে তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবে। পঞ্চম স্থানে ওমানের রাজধানী মাস্কাট।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১-এ দিল্লির দূষণমাত্রা প্রায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০-তে দূষণমাত্রা ছিল প্রতি কিউবিক মিটারে ৮৪ মাইক্রোগ্রাম, যা বেড়ে ২০২১ সালে হয়েছে ৯৬.৪ মাইক্রোগ্রাম প্রতি কিউবিক মিটার।
২০২১-এ ভারতের গড় বায়ুদূষণ মাত্রা প্রতি কিউবিক মিটারে ৫৮.১ মাইক্রোগ্রাম। ভারতের বায়ুদূষণের মাত্রা ২০১৯-এর করোনা-পূর্বের অবস্থায় ফিরে গিয়েছে বলে ওই রিপোর্টে দাবি। দেশের একটি শহরও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া বায়ুদূষণের মাপকাঠির মধ্যে নিজেদের রাখতে পারেনি।
দেশের ৪৮ শতাংশ শহরের দূষণমাত্রা প্রতি কিউবিক মিটারে ৫০ মাইক্রোগ্রাম ছাড়িয়ে গিয়েছে। যা কি না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া বায়ু দূষণের মাপকাঠির চেয়ে ১০ গুণ বেশি।
সব চেয়ে দূষিত দেশের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। রিপোর্টে দাবি, সে দেশের গড় দূষণের মাত্রা প্রতি কিউবিক মিটারে ৭৬.৯ মাইক্রোগ্রাম।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মধ্য আফ্রিকার দেশ চাদ। সে দেশের গড় দূষণের মাত্রা প্রতি কিউবিক মিটারে ৭৫.৯ মাইক্রোগ্রাম। তৃতীয় স্থানে থাকা পাকিস্তানের গড় দূষণের মাত্রা প্রতি কিউবিক মিটারে ৬৬.৮ মাইক্রোগ্রাম। চতুর্থ স্থানে থাকা তাজিকিস্তানের গড় দূষণের মাত্রা প্রতি কিউবিক মিটারে ৫৯.৪ মাইক্রোগ্রাম। ভারত রয়েছে তালিকায় পঞ্চম স্থানে।
বিশ্বের ২০টি সব চেয়ে দূষিত দেশের ১৬টি দেশই এশিয়ার। দু’টি দেশ আফ্রিকা এবং ইউরোপের। তালিকায় ইউরোপের এক মাত্র দেশ মন্টিনেগ্রো।
ওই তালিকায় মধ্য আফ্রিকার দেশ চাদ-এর নাম উপরের দিকে রয়েছে বলে এই নয় যে, আফ্রিকা বা দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশের বাতাসের মান ভাল।
ওই সংস্থার দাবি, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকায় বায়ুদূষণের রিপোর্ট জানার জন্য সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামের অভাব রয়েছে, তাই অনেকের দূষণের মাত্রা জানা বেশ কঠিন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বিশ্বের প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষ উচ্চ বায়ু দূষণ এবং বিপজ্জনক এলাকায় বাস করেন।
বায়ু দূষণ বৃদ্ধির ফলে বিশ্ব জুড়ে ডায়াবিটিস, হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা, ক্যানসার এবং বিভিন্ন রোগের হার বাড়ছে।
আমাদের বাতাসে বিভিন্ন দূষণকারী উপাদান রয়েছে। সব চেয়ে বেশি দূষণকারী কণাগুলির মধ্যে অন্যতম পিএম ২.৫ নামক খুব ছোট এবং সূক্ষ্ম কণা।
এই কণা খুব সহজেই আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়িয়ে ফুসফুস ও রক্তে পৌঁছে যেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বায়ু দূষণ বিশ্ব জুড়ে প্রায় ৭ কোটি মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী।