এখন তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রাম আন্দোলন বিরোধী নেত্রী হিসেবে রাজ্যে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু বাংলার রাজনীতিতে তাঁর উপস্থিতিতে আন্দোলনের সিলমোহর পড়েছিল ২৯ বছর আগের ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই।
১৯৯৩ সালে যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি ছিলেন মমতা। ক্ষমতায় তখন বাম সরকার। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। ভোটে কারচুপির অভিযোগে আন্দোলনে নামে যুব কংগ্রেস।
ভোটে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করার দাবিতে ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দেন তৎকালীন যুব কংগ্রেসের সভাপতি মমতা।
১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই সকাল ১০টা থেকে মহাকরণ অভিমুখী জমায়েত শুরু হয়। মহাকরণ ঘিরে পাঁচটি এলাকা দিয়ে এগোতে থাকেন যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা।
রাস্তায় নামেন মমতাও। বিভিন্ন মিছিলে ছিলেন সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মদন মিত্র, অধুনাপ্রয়াত পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়রা।
যুব কংগ্রেসের মিছিল মহাকরণে পৌঁছনোর আগে পাঁচ দিক থেকে ব্যারিকেড করে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। তাতেই ধুন্ধুমার শুরু হয়।
বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায় যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের। পুলিশকে লক্ষ্য করে শুরু হয় ইট-পাথরবৃষ্টি। পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ।
ব্রেবোর্ন রোডে ধাক্কাধাক্কি এবং কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন মমতা। তাঁর নিরাপত্তারক্ষী সার্ভিস রিভলভার উঁচিয়ে পুলিশের মোকাবিলায় এগিয়ে যান।
অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় মেয়ো রোড-রেড রোডের মোড়ে। বোমাও পড়ে। সেই উত্তেজনার আঁচ ছড়িয়ে পড়ে গোটা মধ্য কলকাতায়। রেড রোডে পুলিশের ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের তাড়া খেয়ে পুলিশের পদস্থ অফিসারেরা পালাতে থাকেন।
মারমুখী হয়ে ওঠে পুলিশবাহিনী। গুলি চালাতে শুরু করে তারা। পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৩ জন মারা গিয়েছেন। জখম বহু।
তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেন, ‘‘ওরা মহাকরণ দখল করতে আসছিল। পুলিশ গুলি চালিয়েছে।’’
ওই ঘটনার ব্যাপক রাজনৈতিক প্রভাব তৈরি হয় রাজ্যে। মমতা হয়ে ওঠেন বাম সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান মুখ। পরের বছর থেকেই তাঁর উদ্যোগে শুরু হয় ‘শহিদ দিবস’ পালন। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল তৈরি করেন মমতা। তৃণমূলের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি হয়ে ওঠে ২১ জুলাই পালন।