তৃণমূলের শহিদ সমাবেশে বিজেপি, সিপিএমকে এক পঙ্ক্তিতে ফেলে আক্রমণ শানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হুঁশিয়ারি দিলেন নিজের দলের কর্মীদেরও। তার মধ্যে গুরুত্বের ১২।
ভাসবে বিজেপি: ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ সমাবেশে বৃষ্টি হওয়াটাই দস্তুর। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হল না। বৃষ্টি দেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বৃষ্টি দেখে বিজেপি, সিপিএম হেসেছিল। ভেবেছিল, তৃণমূলের মিটিং শেষ হয়ে যাবে! কিন্তু এত বৃষ্টিও তৃণমূলকে নড়াতে পারে না। এক জনও বৃষ্টির ভয়ে ফিরে যাননি।’’ তার পরেই বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘চব্বিশে মানুষের বৃষ্টিতে ভেসে চলে যাবে বিজেপি।’’
সিপিএমকে হুঁশিয়ারি: সম্প্রতি শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে সরগরম রাজ্য। সেই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘আমি শুনেছি, সিপিএম আমলে তাদের মুখপত্রে যে সব লোকেরা চাকরি করতেন, তাঁদের স্ত্রীদের অন্য কোথাও চাকরির ব্যবস্থা করে দিত সিপিএম।’’ এর পরই সিপিএম সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের নাম করে তিনি বলেন, ‘‘কি বিকাশবাবু, আপনি একা সাধুপুরুষ! ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানেন না! আপনার আমলে কাদের বার্থ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল? বার করব সেই ফাইলগুলো?’’ এই প্রসঙ্গে বিজেপিকেও একহাত নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘১৭ হাজার শিক্ষকের চাকরি তৈরি হয়ে আছে। আদালত বললেই চাকরি হয়ে যাবে। আমরা চাকরি দিই, আর বিজেপি চাকরি খায়।’’
মুড়ি: ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে ভাষণ দিতে গিয়ে মমতার মুখে উঠে আসে মুড়িতে জিএসটি বসানোর প্রসঙ্গ। জনতার কাছ থেকে মুড়ি চেয়ে নেন মমতা। সেই মুড়ি দেখিয়ে বিজেপিকে প্রশ্ন করেন, ‘‘মুড়িতেও জিএসটি! খাব কী? মানুষ খাবে কী? বিজেপির বন্ধুরা মুড়ি খাবেন না?’’ মমতা স্লোগান তোলেন, ‘‘আমাদের মুড়ি ফিরিয়ে দাও, নইলে বিজেপি বিদায় নাও।’’
রোগীর বিছানা, মড়ার খাট— সবেতেই জিএসটি: মমতা অভিযোগ করেন, মোদী সরকার চিকিৎসা করাতে যাওয়া রোগীদেরও নিস্তার দিচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে রোগীর বিছানাতেও জিএসটি দিতে হবে। মড়ার খাটে কত জিএসটি বসিয়েছেন, জবাব দিন!’’
দিল্লি ঘেরাও: ১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার। এ ছাড়াও একাধিক খাতে বহু টাকা বকেয়া। মমতার অভিযোগ, বাংলা বিজেপিকে ভোট দেয়নি বলে এ ভাবে বাংলাকে ভাতে মারার চক্রান্ত করছে কেন্দ্রীয় সরকার। মমতা বলেন, ‘‘১০০ দিনের বকেয়া টাকা দিচ্ছে না। গরিব মানুষগুলো কাজ করে টাকা পাচ্ছে না। যদি টাকা না দেওয়া হয়, তা হলে বাসে-ট্রেনে দিল্লি গিয়ে ঘেরাও করব। এ ভাবে বাংলাকে বঞ্চনা মেনে নেব না।’’
জয় বাংলা দিচ্ছে ডাক, জয় ভারত বেঁচে থাক: ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে নতুন স্লোগান তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘যে ভাবে অতীতে বাংলা ভারতকে পথ দেখিয়েছে, সে ভাবে এখনও দেশ বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে বাংলাকে। আমার সঙ্গে সকলে বলুন, জয় বাংলা দিচ্ছে ডাক, জয় ভারত বেঁচে থাক।’’
বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও: ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। ধর্মতলার মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঘোষণা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বললেন, ‘‘বিজেপি সামনের বার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। আর বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেই অন্যান্য দল এক ছাতার তলায় আসবে।’’ মমতার কথায়, ‘‘দেশের বড়লোক প্রধানমন্ত্রী চাই না, গরিবের প্রধানমন্ত্রী চাই।’’
সব আসন জিততে হবে: লোকসভায় সব আসন জেতার লক্ষ্যমাত্রা রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘শুধু বাংলাই নয়, অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয় থেকে উত্তরপ্রদেশ— যার যেখানে যেমন ক্ষমতা, বিজেপিকে হারাতে হবে। যেখানে আমাদের বন্ধুরা লড়বেন, আমরা পাশে দাঁড়াব।’’
তৃণমূল থাকলে সুবিধা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বললেন, ‘‘তৃণমূল ক্ষমতায় থাকলে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে। এখন যেমন বিনামূল্যে রেশন থেকে শুরু করে ভাতা, পেনশন, কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার, সবুজসাথী পাচ্ছেন, তেমনই চলবে। তাই সরকারি সুবিধা পেতে তৃণমূলকেই রাখতে হবে।’’
রাজ্য জুড়ে প্রকল্প: মমতা জানান, তাজপুরে বন্দর, নতুন সিলিকন ভ্যালিতে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এ ছাড়াও বীরভূমের ডেউচা পাচামিতে খনির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী ১০০ বছর বাংলাকে বিদ্যুতের জন্য ভাবতে হবে না। বরং বাংলা অন্যদের বিদ্যুৎ দিতে পারবে।
টাকা তুললে পুলিশে জানান মমতা স্পষ্ট জানিয়েছেন, মানুষের পাশে থেকেই মানুষের কাজ করতে হবে নেতা-কর্মীদের। বৈভব দেখানোর জায়গা তৃণমূল নয়। তিনি বলেন, ‘‘এ রকম দু’একটা অভিযোগ আমি পেয়েছি। কেউ তৃণমূলের নাম করে টাকা তুলবেন না। তৃণমূলের নাম করে কাউকে টাকা তুলতে দেখলে সোজা থানায় জানাবেন। তাকে ধরে থানায় নিয়ে যাবেন।’’
দল কেমন হবে? ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমি চাই দেশে একটি আদর্শ রাজনৈতিক দল থাকুক। সেটা হোক তৃণমূল। একটা আদর্শ সাংস্কৃতিক দল থাকুক। সেটা হোক তৃণমূল।’’