সারা জীবনের হাড়ভাঙা খাটুনির পর অবসর জীবন উপভোগ করতে কে না চান! নিজের পেশায় যতই টান থাকুক না কেন, অনেকেই কর্মজীবন থেকে আগেভাগেই অবসর নিতে চান। তার পর নিশ্চিন্তের জীবন কাটানোই যেন তাঁদের পাখির চোখ! অবসরের জন্য ৬০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি নন তাঁরা। কর্মজীবন শেষ করতে চায় অস্ট্রেলিয়ার এক খুদে স্কুলপড়ুয়াও। তবে তার জন্য ৪০ বা ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চায় না সে। বরং ১৫ বছর বয়স হলেও কর্মজীবনে ইতি টানতে চায় পিক্সি কার্টিস।
যে বয়সে বেশির ভাগ বাচ্চাই রং পেন্সিল দিয়ে আঁকিবুকি কাটে, সে বয়সেই দু’দুটি ব্যবসা সামলাচ্ছে এই খুদে পড়ুয়া। নিজের ব্যবসার মুনাফা থেকেই মাত্র ১০ বছর বয়সে ধনকুবের হয়ে গিয়েছে পিক্সি।
শুধু তা-ই নয়, ১০ বছরের পিক্সির আর মাত্র পাঁচ বছর কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে। ফলে ১৫-তেই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে পারে সে। এমনই দাবি পিক্সির মা রক্সি জাসেন্কো-র। গত বছরের ডিসেম্বরে রক্সির এই ঘোষণায় সাড়া পড়ে গিয়েছিল আন্তর্জাতিক মহলে। বিশ্ব জুড়ে এক সময় তা শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছিল।
নিশ্চয়ই ভাবছেন, কিসের ব্যবসা করে পিক্সি? তার আগে বলে নেওয়া যাক, এখনও প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পার না করলেও পিক্সির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লাখো টাকার ছড়াছড়ি। থুড়ি, বরং বলা ভাল তার অ্যাকাউন্টটি অস্ট্রেলীয় ডলারে ডলারে ছয়লাপ।
পিক্সির প্রথম ব্যবসা শুরু হয়েছিল একেবারে শিশু বয়সে। সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র দু’বছর। যদিও তার নামে সে ব্যবসা শুরু করেছিলেন পিক্সির মা। ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি নিজেও অত্যন্ত সফল।
সিডনির একটি প্রথম সারির জনসংযোগ সংস্থার সিইও রক্সি জানিয়েছেন, কচিকাঁচাদের চুলের সাজসজ্জার জন্য রকমারি জিনিসপত্র তৈরি করাই ছিল তাঁর মেয়ের প্রথম ব্যবসা। তার একটি গালভরা নামও রয়েছে— ‘পিক্সিস বাওস’। সালটা ২০১৪।
জনসংযোগে পটু রক্সি যে মেয়ের ব্যবসায় যাবতীয় সাহায্য করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তা-ই করেছিলেন রক্সি। কিছু দিনের মধ্যেই সে ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছিল। তবে মুনাফার অঙ্ক দেখে থেমে থাকেনি পিক্সি।
গত বছরের মার্চে দ্বিতীয় ব্যবসা শুরু করে পিক্সি। এ বার বাচ্চাদের খেলনা তৈরির সংস্থা— ‘পিক্সিস ফিজেটস’। প্রথম মাসেই অভাবনীয় মুনাফা। এক মাসেই ২ লক্ষ ডলারের বিক্রি। প্রথম ৪৮ ঘণ্টাতে সমস্ত খেলনা বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। দু’টি ব্যবসাই ‘পিক্সিস পিক্স’ নামে মূল সংস্থার আওতাধীন।
এই বয়সেই খুদে পিক্সির অবসরের পরিকল্পনার কথা জানাজানি হতেই নেটমাধ্যমে সাড়া প়ড়ে গিয়েছে। তবে একেবারেই অবাক হননি রক্সি। সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পরিবারে একটা রসিকতা চালু রয়েছে। আমি ১০০ বছর পর্যন্ত কাজকর্ম করব আর পিক্সি ১৫ বছর বয়সে অবসর নেবে। কে যে স্মার্ট, সে তো বোঝাই যাচ্ছে!’’
এই বয়সেই ঝানু ব্যবসাদারের মতো কিছু স্বপ্নও রয়েছে পিক্সির। খুদে পড়ুয়ার মা বলেন, ‘‘পিক্সির অনেক স্বপ্ন রয়েছে। তার মধ্যে একটি হল সমুদ্রের ধারে একটা বিচহাউস। গ্যারাজে ল্যাম্বরঘিনির মতো দামি গাড়ি। অবশ্যই একটা ল্যাম্বরঘিনি এসইউভি-র কিনতে চায় সে।’’
বিলাসবহুল জীবনের প্রতি আকর্ষণ থাকলেও তাঁর মেয়ের মাথা ঘুরে যায়নি বলে দাবি রক্সির। উল্টে মেয়ের কর্মদক্ষতায় মুগ্ধ তিনি। রক্সি বলেন, ‘‘আমি ওকে কুর্নিশ জানাই। এই ১০ বছরেই জীবনের অনেকটাই দেখে ফেলেছে ও। তবে এখনও বিনয়ী, দয়ামায়া হারায়নি। বরং মাটির মেয়ে বলতে হবে। বিচহাউস বা ল্যাম্বরঘিনির এসইউভি-র মতো বাড়ি-গাড়ির স্বপ্নপূরণে ওকে অনেক খাটাখাটনি করতে হবে। তবে আমার মনে হয়, সে ওই পথেই এগোচ্ছে।’’
এই বয়সেই মেয়ে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় যারপরনাই খুশি রক্সি। তবে একই সঙ্গে খুদেকে সাবধানও করে দিয়েছেন তিনি। রক্সি বলেন, ‘‘সাফল্যের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কী ভাবে নানা খাতে বিনিয়োগ করা যায়, তা ওকে শেখানো। সেই সঙ্গে এত টাকাপয়সা যাতে নয়ছয় না করে, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।’’