আস্তাকুঁড় থেকে ককপিটে মাদারের শিশু

পোলিও চিকিত্সার খরচ জোগাতে না পেরে তিন বছরের আমিকে পথেই ছেড়ে গিয়েছিল হা-ঘরে বাবা-মা। আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় মাদার টেরিজার মিশনারিজ অব চ্যারিটিতে। লিখছেন গৌতম লুইস

Advertisement

গৌতম লুইস

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০৩
Share:

বিমানের ককপিটে পাইলট গৌতম।

পোলিও চিকিত্সার খরচ জোগাতে না পেরে তিন বছরের আমিকে পথেই ছেড়ে গিয়েছিল হা-ঘরে বাবা-মা। আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় মাদার টেরিজার মিশনারিজ অব চ্যারিটিতে। জীবনের দুটো বছর শিশু ভবনে কাটানোর পর আমাকে পাঠানো হয় রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ফর চিলড্রেনে। সেখানেই আলাপ হয়েছিল নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট প্যাট্রিসিয়া লুইসের সঙ্গে। অনাথ আমার দিকে তাঁর দরদী হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন প্যাট্রিসিয়া। সেই হাত ধরেই সারাজীবনের মতো ইংল্যান্ডে পাড়ি দিই। মাদার হাউজের অনাথ শিশু তখন প্যাট্রিসিয়ার দত্তক পুত্র গৌতম লুইস। ইংল্যান্ডের প্রেস্টিজিয়াস বেডলস স্কুলে শুরু হল আমার পড়াশোনা। নতুন নাম, নতুন পরিচয়, নতুন জীবন। ধীরে ধীরে বিজনেস ডিগ্রি পাশ করে নিজেকে ডুবিয়ে দিলাম সঙ্গীতচর্চায়। তখনও বাকি ছিল স্বপ্নপূরণ।

Advertisement

আরও খবর- মানবতা সম্পর্কে ধারণা পাল্টে দিয়েছেন মাদার

এক সময় শিশুভবনের ছাদ থেকে আকাশ দেখে মুক্তির স্বাদ পেতাম। সেই আমি কি না এ বার মাত্র ছ’মাসের মধ্যে পাশ করে ফেললাম পাইলট হওয়ার সব গ্রাউন্ড ও এয়ার এগজামিনেশন। তখন ২০০৭। পোলিওর ভয়ানক প্রকোপ কাটিয়ে উঠে দাঁড়াতে পেরেছি বটে, কিন্তু এই তিরিশ বছর বয়সেই ক্রাচ আমার সর্ব ক্ষণের সঙ্গী। ওই বছরেই তৈরি করি ‘ফ্রিডম ইন দ্য এয়ার’। শারীরিক ভাবে অক্ষমদের জন্য ফ্লাইং স্কুল। ব্রিটেনের প্রথম এই ধরনের স্কুল। হার্টফর্ডশায়ারের এলসট্রিতে শারীরিক ভাবে অক্ষমদের বিশেষ ফ্লাইং ট্রেনিং দেয় এই স্কুল।

Advertisement


মাদার টেরিজার সঙ্গে মা প্যাট্রিসিয়া ও বোন লিন্ডির সঙ্গে কিশোর গৌতম

এর পাশাপাশি ইউনিসেফের সঙ্গে পার্টনারশিপে গ্লোবাল পোলিও ইরাডিকশন ইনিসিয়েটিভের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরও হই। যে সব জায়গায় সামাজিক, সাংস্কৃতিক কারণে ভ্যাক্সিনেশনকে অবহেলা করা হয়, সেই সব দেশে পোলিও ভ্যাক্সিনেশনের সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা। আল জাজিরা টিভির ‘পাসপোর্ট ফ্রম পোলিও’ তথ্যচিত্রে দ‌েখানো হয়েছে আস্তাকুঁড়ের এই গৌতমের কলকাতায় ফেরা, বস্তিতে মোবাইল ভ্যাক্সিনেশনের মাধ্যমে সচেতনতা গড়ে তোলার কাজ। বস্তুত, কলকাতার এই অভিজ্ঞতা ফটোগ্রাফিক এগজিবিশন ফুল সার্কেলের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আমার জীবনে মাদার টেরিজার অবদান কোথায়? এই উত্তর দিতেই তো মাদারকে নিয়ে এক ঘণ্টার তথ্যচিত্র ‘মাদার টেরিজা অ্যান্ড মি’ তৈরি করেছি। তৈরি করেছি ফিউশন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘মরা গাং’। ৪ সেপ্টেম্বর মাদার টেরিজার সন্তায়নের দিন দু’শোরও বেশি দেশে মুক্তি পাচ্ছে সেই গান।
মাদার আমার ঈশ্বর। মাদারই আমায় আকাশ দেখিয়েছিলেন। আজ সেই আকাশের কোলে যে আশ্রয় পাই, তা তো আসলে মাদারেরই আশ্রয়!

দেখুন গানের ভিডিও:

আরও খবর- তিলোত্তমার মাদার

আরও খবর- ফিরে দেখা: মাদারের মহাপ্রয়াণ

আরও খবর- বিপন্ন বিস্ময়

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement