প্রতি বছর ডিসেম্বর পেরিয়ে জানুয়ারি পড়লেই কর্পোরেট কর্মচারী থেকে ব্যবসায়িক জগত— যেন হুলস্থুল পড়ে যায়। আয়কর দাখিল করার তারিখ এগিয়ে এল বলে! কিছু ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি সব কিছু করতে গিয়ে অনেক বিষয়ে খেয়ালই রাখা হয় না। কেউ কেউ আবার স্বাচ্ছন্দ্যে সমস্ত কিছু গুছিয়ে আয়কর জমা দেন। আপনি কি জানেন যে আয়কর রিটার্ন ফাইল করতে দেরি হলে যেমন মোটা অঙ্ক জরিমানা দিতে হয়, ঠিক তেমনই সময় মতো আয়কর রিটার্ন ফাইল করলে বেশ কিছু সুবিধাও পাওয়া যায়!
আয়কর আইন অনুযায়ী সাধারণত আয়কর ফাইলের তারিখ থাকে ৩১ জুলাই। কোভিডের কারণে চলতি অর্থবর্ষ অর্থাৎ ২০২১-২০২২ সালে আয়কর রিটার্ন দাখিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত। পরে আয়কর অডিটের ক্ষেত্রে সেই সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অবশ্যই নির্ধারিত তারিখ পার হয়ে গেলেও মার্চ পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন ফাইল করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে জরিমানা দিতে হবে।
চলতি অর্থবর্ষের বাজেট অনুযায়ী আয়করের রিটার্ন দাখিল সে সমস্ত ব্যক্তিকেই করতে হবে যাঁদের বার্ষিক আয় আড়াই লক্ষ টাকার উপরে। যদিও বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগের পরে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কর প্রদানের কোনও দায় না থাকলেও বেশ কয়েকটি সুবিধা উপভোগ করার জন্য সময়মতো আয়কর রিটার্ন ফাইল করা উচিত।
প্রথমত, সময় মতো আয়কর জমা দিতে না পারলে প্রদেয় করের উপরে সুদ দিতে হতে পারে। এই সুদের অঙ্কটা অনেকটাই। সেই ক্ষেত্রে আয়কর আইনের ধারা ২৩৪এ, ২৩৪বি এবং ২৩৪সি-এর অধীনে কোনও ব্যক্তি সময়মতো আয়কর রিটার্ন দাখিল করে প্রদেয় করের উপর প্রযোজ্য সুদ দেওয়ার দায় থেকে বাঁচতে পারেন।
আয়কর আইনের নিয়ম আনুসারে, যদি এক জন করদাতা আগে থেকে আয়কর জমা না দিয়ে থাকেন অথবা তাঁর প্রদেয় অর্থের ৯০ শতাংশের কম জমা করেন, তা হলে ধারা ২৩৪বি অনুসারে সেই ব্যক্তি অবশিষ্ট কর প্রদান করতে যত দিন সময় নেবেন তত দিন প্রতি মাসে এক শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে।
আয়কর রিটার্ন দেরিতে দাখিলের জন্য জরিমানার ক্ষেত্রে কোনও ছাড় নেই। আয়কর আইনের ২৩৪এফ অনুসারে নির্ধারিত তারিখের পরে আয়কর রিটার্ন দাখিল করলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এই জরিমানার অঙ্ক নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আয়ের উপরে। কোনও করদাতার বার্ষিক আয় আড়াই থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা হলে এক হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়। পাঁচ থেকে ১০ লক্ষ টাকা হলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়। এবং আয়ের অঙ্ক ১০ লক্ষের গণ্ডি পার হলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয়।
আয়কর ফাইল করা থাকলে ঋণের আবেদনও অনেক সহজ হয়ে যায়। কারণ যখন কোনও ব্যক্তি ব্যাঙ্কের কাছে ঋণের জন্য আবেদন করেন, তখন ব্যাঙ্ক সেই ব্যক্তির কাছে আয়ের প্রমাণ হিসাবে আয়কর রিটার্ন স্টেটমেন্টের অনুলিপি চায়। বলা যেতে পারে ব্যবসায়ীদের জন্য তো বটেই ঋণের অনুমোদন পাওয়ার জন্য আয়কর রিটার্নের রিপোর্ট একটি বাধ্যতামূলক ও বিশ্বাসযোগ্য দলিল। আয়কর দাখিল না করলে ঋণগ্রহীতার পক্ষে ঋণের অনুমোদন পাওয়া বেশ কঠিন হতে পারে।
নির্ধারিত সময়ের আগে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে আয়কর বিভাগ থেকে নোটিস আসে। যা সত্যিই বড়সড় মাথাব্যথার কারণ। সেই সঙ্গে এটি সমাজে আপনার ভাবমূর্তিও খারাপ করে।
আয়করের নিয়ম অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়সীমার আগে আয়কর রিটার্ন ফাইল করলে কোনও ব্যক্তি আগামী বছরগুলিতে সেই বছরের লোকসান বহন করতে পারেন। যা আখেরে ভবিষ্যতের সার্বিক আয় থেকে ওই ব্যক্তির উপরে থাকা করের দায় কমাতে সাহায্য করে।
তা ছাড়া সময়ানুবর্তীতা মেনে চলা করদাতাদের কর ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রেও সুবিধা রয়েছে। যে করদাতারা সময়মতো তাঁদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন তাঁরা অন্যদের তুলনায় অনেক দ্রুত প্রদেয় কর ফেরত পেয়ে যান। এটিকে আয়করের ভাষায় বলা হয় ‘ট্যাক্স রিফান্ড’।