বিগত কয়েক বছরে কোভিডের কারণে অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে। ঘরে বসে কাজ করার কারণে জীবনযাপনকে আরও উন্নত করার পরিকল্পনা করেছেন অনেকে। সর্বোপরি বিগত এক থেকে দেড় বছরে নতুন ভাবে গতি পেয়েছে রিয়েল এস্টেট সেক্টর। প্রত্যেকেই চান মনের মতো, স্বপ্নের মতো একটা বাড়ি। তবে বাড়ি কেনার খরচ প্রচুর। পরিসংখ্যান বলছে ভারতে যত জন বাড়ি কেনেন তার মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষই কোনও না কোনও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে লোন বা ঋণ নেন। এবং সেই ঋণ দীর্ঘকাল ধরে ইএমআই বা মাসিক কিস্তিতে টাকা দিয়ে পরিশোধ করতে হয় গ্রহীতাকে।
অনেকেই এই দীর্ঘমেয়াদি ঋণকে স্রেফ বোঝা বলে মনে করেন। অথচ এই গৃহঋণ কিন্তু আপনার রোজকার উপার্জনকে বাঁচাতে অনেকাংশে সাহায্য করে। কিন্তু কী ভাবে? কী কী সুবিধা দেয় গৃহঋণ? চলুন দেখে নিই
গৃহঋণের সুবিধা: আয়করে সুবিধা: আমরা প্রত্যেকেই জানি যে বাড়তি আয় মানেই বাড়তি করের বোঝা। অর্থাৎ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আয়ের পরিমাণ যত বাড়বে, প্রদেয় করের পরিমাণও ঠিক ততটাই বাড়বে। বাড়ি কেনার জন্য নেওয়া ঋণ নিয়ে কোনও ব্যক্তি কিন্তু আয়কর প্রদানের সময় ব্যপক ছাড় পেতে পারেন। কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত গৃহঋণের ক্ষেত্রে ‘মূল পরিমাণের পরিশোধ’ এবং ‘সুদের পরিশোধ’ উভয় ক্ষেত্রেই কর ছাড়ের সুবিধা রয়েছে।
সময়ের সঙ্গে দাম বৃদ্ধি: বিগত কয়েক বছরে রিয়েল এস্টেট সেক্টর এই ভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ হল দাম বৃদ্ধি। কোনও বাড়ি ক্রয়ের পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটির দাম বাড়তে থাকে। ফলে যদি স্রেফ বিনিয়োগের হিসেবে বাড়ি কেনা হয়, তা হলে এর রিটার্ন ব্যপক।
দীর্ঘমেয়াদে টাকা ফেরানোর সুবিধা: কোনও ক্রেতা যদি বাড়ি কিনে সেটিকে প্রথম দিন থেকেই ভাড়া দিয়ে দেন, তা হলে ‘ইএমআই’ এর টাকা সহজেই ফেরত পাওয়া যায়। উপরন্তু মেয়াদ শেষে সেই বাড়ির মূল্যও অনেকটা বেড়ে যায়।
দায়িত্ববোধের বিকাশ: বাড়ি আসলে এমন একটি অ্যাসেট যা আপনার সঙ্গে সারা জীবন থেকে যাবে। এটি কেনার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধের জন্য সঠিক পরিকল্পনা তৈরি, নিয়মিত ভাবে অর্থ প্রদানের তারিখ, ব্যাঙ্ক ব্যালান্স এবং আরও অন্যান্য বিষয় ট্র্যাক করতে পারার ফলে এটি যথেষ্ট দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে।
তবে গৃহ ঋণের এতগুলি সুবিধা থাকলে এই ঋণ অনেক ক্ষেত্রেই বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এর মূল কারণ হল এটি দীর্ঘমেয়াদি। ঋণ নেওয়ার পরে ধীরে ধীরে মানসিক ক্লান্তির শিকার হতে পারেন ঋণগ্রহীতা। তবে গৃহ ঋণের এতগুলি সুবিধা থাকলে এই ঋণ অনেক ক্ষেত্রেই বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এর মূল কারণ হল এটি দীর্ঘমেয়াদি। ঋণ নেওয়ার পরে ধীরে ধীরে মানসিক ক্লান্তির শিকার হতে পারেন ঋণগ্রহীতা।
তাই গৃহ ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয়ে বিবেচনা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। যা আখেরে শুধু ঋণ গ্রহীতার অর্থই বাঁচায় না, সঙ্গে মানসিক শান্তি ও চিন্তামুক্ত জীবন প্রদান করে।
প্রি-পেমেন্ট বা অগ্রিম অর্থ প্রদান: অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ঋণ গ্রহণের প্রাথমিক পর্যায়ে অগ্রিম অর্থ প্রদান করলে খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যেতে পারে গৃহ ঋণ। অগ্রিম অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহীতাকে সুদ বাবদ কম টাকা জমা দিতে হবে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার নিয়মানুসারে, ব্যাঙ্ক বা এনবিএফসি থেকে ফ্লোটিং রেটে গৃহঋণ নিলে কোনও ঋণগ্রহীতাকে প্রি-পেমেন্টের ক্ষেত্রে কোনও জরিমানা করা হবে না।
গৃহ ঋণ ট্রান্সফার: একটি ব্যাঙ্ক থেকে গৃহঋণ নেওয়ার পরে যদি বোঝা যায় যে অন্য একটি ব্যাঙ্কে অনেক ভাল হারে গৃহ ঋণ পাওয়া যাচ্ছে, তবে খুব সহজেই এটি স্থানান্তরিত করা যায়। তবে একটি প্রসেসিং ফি দিতে হয়।
বেশি ইএমআই দেওয়ার চেষ্টা করুন: যদি সম্ভব হয়, তবে চেষ্টা করুন বেশি পরিমাণে ইএমআই দেওয়ার। এর ফলে ঋণের সময় কমিয়ে আনা যায়। এতে ঋণের মোট পরিমাণ অনেকটাই কমে আসবে।
বেশি ডাউনপেমেন্ট: ডাউন পেমেন্ট যদি করতে পারেন, তবে তা সাহায্য করবে অনেকটাই। ডাউন পেমেন্ট যত বেশি হবে, ঋণের বোঝা ততই কম হবে।
বাড়ি কেনার স্বপ্ন থাকে সবারই। গৃহঋণের ক্ষেত্রে তার সুবিধে, অসুবিধে দুটি দিকই বর্তমান। কাজেই নির্দিষ্ট পরিকল্পনার প্রয়োজন। এবং তার সঙ্গে যথেষ্ট ধৈর্য রাখা দরকার। তবে পরিকল্পনা করার সময়ে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া যায়, তবে তা অনেকটা সাহায্য করবে।