Personal Finance 2023

সর্বোচ্চ রিটার্নের লোভে পা দিয়ে ঘটি বাটি হারাবেন না

দেখুন, ১০০ টাকা থেকে কমে যখন সঞ্চয় ৫০ টাকায় নামে তখন কিন্তু সেটা ৫০ শতাংশ ক্ষয়। কিন্তু ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় তোলা মানে হল ১০০ শতাংশ লাভ। তাই সঞ্চয়ের ঝুলি তৈরির সময় যাতে এই পতন না হয় তার ব্যবস্থা করা জরুরি।

Advertisement

প্রসূনজিত মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:০৩
Share:

প্রতীকী ছবি

অনেকেই ভাবেন যে সঞ্চয় নিয়ে এত ভাবনার কি আছে? সত্যিই তো কেন এত ভাবব? আর তার পরেই যখন দেখব মন্দার বাজারে একই টাকা বিনিয়োগ করে একজন প্রায় সর্বস্বান্ত আর অপরজনের বিনিয়োগে শুধু অল্প টোল এবং মূলধনে আঁচড়ও পড়েনি তখন? তখন তো অবশ্যই এই প্রশ্নটা আসবেই। “কী করে হল?”

Advertisement

আমি বলি, এটা হল কারণ ওই লোকটা সঞ্চয় নিয়ে এত ভেবেছেন বলেই ওঁর সঞ্চয়ের ঝুলিতে ফুটো হয় নি।

আমরা যখন বিনিয়োগ করি, তা যেখানেই হোক, সেই টাকা কিন্তু বাজারে কোনও বা কোনও ভাবে চলতি কথায় বললে খাটে। শেয়ার বাজারের অঙ্কটা একটু অন্যরকম। আমরা যখন কোনও সংস্থার শেয়ারে বিনিয়োগ করি তখন সেই সংস্থা আগে কেমন করেছে তার উপর ভিত্তি করে আগামী দিনে কেমন করবে তার ধারণার ভিত্তিতে কিনি। অর্থাৎ সংস্থাটির শেয়ারের আজকের দাম আগামী দিনের সম্ভাব্য লাভের প্রতিফলক হিসাবে দেখা হয়।

Advertisement

এই প্রসঙ্গ তোলার কারণ একটাই। আপনার বিনিয়োগ কিন্তু সময় নিরপেক্ষ নয়। একই ভাবে আজকের বিনিয়োগ থেকে যে লাভ আপনি ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন সেই লাভ একই বিনিয়োগে যে আগামীতেও করবেন তার কিন্তু কোনও গ্যারান্টি নেই। কারণ কোনও সংস্থাই একই দক্ষতায় চিরকাল ব্যবসা করতে পারে না এবং বাজারের চরিত্রও চিরকাল একই রকম থাকে না।

তাই বিনিয়োগের ঝুলিতে আজকে যা ভরছেন কালকেও যে তা একই ভাবে রাখতে হবে তার কোনো মাথার দিব্যিকেউ দেয়নি। আসলে এই ঝুলিটা তৈরি করাও কিন্তু এক দক্ষতার দাবি করে। সেই দক্ষতাটা হল এই ঝুলি কতদিন বাদে সাফসুতরো করে নতুন বিনিয়োগ ভরবেন সেই সিদ্ধান্ত। আর এখানেই আসে রাশিবিজ্ঞানের স্ট্যাটিসটিকসের খেলা।

প্রশ্নটা ছিল বিনিয়োগের ঝুলি ভরতে এত কী ভাবার আছে তা নিয়ে। তা হলে বলি, আমরা তো চাইবই আমাদের সঞ্চয়ের ঝুলিতে যে লগ্নি থাকবে তা থেকে যেন সব থেকে বেশি লাভ ঘরে তুলতে পারি। তো অসংখ্য সম্ভাবনার মধ্যে কোন লগ্নি আপনার মনোবাঞ্ছা পূরণ করবে তা জানবেন কী করে? আর এখানেই আসে রাশি বিজ্ঞানের খেলা।

ধরুন আজ একটা শেয়ার আপনার খুব মনে ধরল। কারণ আপনি দেখলেন সে বাজারে খুব ভাল করছে। আর আপনিসেটি কিনে নিজের ঝুলিতে ঢোকালেন। আর তার পরপরই দেখলেন শেয়ারটির দাম পড়ে গেল। এবং যখন উঠছেওতখন তা আপনার কেনা দামের কাছেও আসছে না। আপনি সঞ্চয় উপদেষ্টাকে ধরলেন। তিনি বললেন যে শেয়ারটির দামের ‘ক্যারটোসিস’ বলছে আপনার ওই দামে কেনা উচিত হয়নি।

আসলে উনি আপনাকে যেটা বললেন তা হল শেয়ারটির বিভিন্ন সময়ের দামের ওঠাপড়ার ইতিহাস বলছে আপনি যে দামে শেয়ারটি কিনেছেন সেই দামে শেয়ারটির ফেরার সম্ভাবনা খুব কম নিকট ভবিষ্যতে। উনি হাত দেখে এ কথা বলেননি। উনি বলেছেন রাশি বিজ্ঞানের উপর নির্ভর করে।

একজন দক্ষ সঞ্চয় উপদেষ্টা আসলে একজন ইঞ্জিনিয়ারের মতোই। একজন ইঞ্জিনিয়ার যেমন একটা যন্ত্র তৈরি করতে একটি একটি করে যন্ত্রাংশ এবং তাদের নিজেদের মধ্যে তালমিল কতটা তা মিলিয়ে একটা দক্ষ যন্ত্র তৈরি করে, একজন সঞ্চয় উপদেষ্টাও ঠিক একই ভাবে রাশিবিজ্ঞানকে অবলম্বন করে আপনার সঞ্চয়ের ঝুলি তৈরি করে। আজকে একটা বিনিয়োগ আপনাকে ভাল রিটার্ন দিল, কিন্তু তার ইতিহাস বলছে এটা ব্যতিক্রমী। তা হলে জানবেন দ্বিতীয়বার এই ব্যতিক্রম দেখার সম্ভাবনা খুবই কম। তা হলে কিন্তু সেটা আপনার ঝুলিতে ঢুকবে না। তাই সেই বিনিয়োগই ভাল যা বিভিন্ন সময়ে রিটার্নের একটা স্থিতীশীলতা বজায় রেখেছে।

এই কারণেই আমার উপদেশ হল, যে মিউচুয়াল ফান্ড সর্বোচ্চ রিটার্ন দিচ্ছে তাকে এড়িয়ে যেতে। কারণ এটা হতে পারে যে এই মুহূর্তে যে রিটার্ন দেখে আপনি কিনছেন তা তার রিটার্নের ইতিহাসের সঙ্গে খাপ খায় না। কিন্তু সেটা জানার রাশিবিজ্ঞানের হাতিয়ারটি আপনার কাছে নেই। হয়ত খাপ খায়। কিন্তু যখন জানেন না তখন এড়িয়ে চলুন হারানোর সম্ভাবনা।

ঝুঁকির কথাই যখন উঠল তখন বলি সঞ্চয়ের ঝুলি ভরার সঙ্গে তার ঝুঁকিও কিন্তু তৈরি হচ্ছে। তাই এই ঝুলি ভরার সময়ে ঝুঁকির চরিত্র ঠিক ঠাক বুঝে নেওয়াও কিন্তু জরুরি। দেখুন, ১০০ টাকা থেকে কমে যখন সঞ্চয় ৫০ টাকায় নামে তখন কিন্তু সেটা ৫০ শতাংশ ক্ষয়। কিন্তু ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় তোলা মানে হল ১০০ শতাংশ লাভ। তাই সঞ্চয়ের ঝুলি তৈরির সময় যাতে এই পতন না হয় তার ব্যবস্থা করা জরুরি।

তা হলে বুঝতেই পারছেন কেন সঞ্চয় নিয়ে এত ভাবনা। কারণ গোটা জীবনের মাথার ঘাম পায়ে ফেলা রোজগার থেকে আপনি সঞ্চয় করেন। আর তা যদি সঠিক ভাবনার উপর ভর করে আপনাকে লাভের অঙ্ক না দেখাতে পারে তা হলে ক্ষতির অঙ্কটাও অনেক অর্থেই বিশাল! তাই দ্রুত লাভের স্বপ্নে হঠকারিতা করবেন না। মাথায় রাখুন এটাও বিজ্ঞান এবং এটা যিনি বোঝেন তাঁর কাছেই যান উপদেশের জন্য। ঠিক যেমন বাড়ি তৈরি করতে স্থপতির সাহায্য নেন।

প্রতিবেদক সঞ্চয় উপদেষ্টা। বক্তব্য নিজস্ব।

বিশেষজ্ঞদের কাছে সমাধান খুঁজতে সঞ্চয় নিয়ে আমাদের প্রশ্ন পাঠান — takatalk2023@abpdigital.in এই ঠিকানায় বা হোয়াটস অ্যাপ করুন এই নম্বরে — ৮৫৮৩৮৫৮৫৫২আপনার আয়, খরচ এবং সঞ্চয় জানাতে ভুলবেন না। পরিচয় গোপন রাখতে চাইলে অবশ্যই জানান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement