প্রতীকী চিত্র।
তখন মাইনে হত নগদে। মাস পয়লা মুদির দোকানে ভিড়। বাবার সঙ্গে পয়লা তারিখ মাসকাবারি যাওয়া ছিল সে সময়ে একটা উত্সব। অফিস থেকে ফিরেই মাসের শেষে করা ফর্দ নিয়ে বড়রা হাজির হতেন মুদির দোকানে। গোটা মাসের মুদির দোকান থেকে চাল, ডাল, তেল আর মশলা-পাতি কিনে, রাতে বাড়ি ফেরা। মাইনে ছিল খুবই কম। তবুও বাড়ির মেয়ের বিয়ে হত, জমি কিনে বাড়িও হত। কী করে? কারণ একটাই। তখন হিসাব রাখার চল ছিল। আর বেহিসাবি খরচকে দু’চোক্ষে দেখতে পারতেন না তাঁরা। আপনিও কিন্তু সেই রাস্তায় হেঁটেই সঞ্চয়ের দিকে এগোতে পারেন। কী করে! দেখে নেওয়া যাক রাস্তাটা।
• প্রথম মাস: একটা ‘এ ৫’ সাইজের নোটবুক কিনুন। যাতে গ্রিড করা থাকে। সব সময় সঙ্গে রাখুন। কম্পিউটারে সহজ হলে খুলুন এক্সেল ফাইল। গুগল শিটেও করতে পারেন। সময় কম, চলতে ফিরতে মোবাইলেই লিখতে সুবিধা হতে পারে। ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
• ক্রেডিট কার্ড সরিয়ে রাখুন। ঠিক করে নিন চলতি মাসের রোজগার থেকেই যা করার করবেন। কিন্তু জীবনযাত্রা বদলাবেন না।
• এ বার হিসাব করুন মাস গেলে কত টাকা ধার মেটাতে দিতেই হবে।
• ক্রেডিট কার্ডে ধার থাকলে আগের কিছু জমানো টাকা থেকে শোধ করতে পারবেন? পুরোটা না হলেও এই ধার শোধ করাটা কিন্তু আপনার প্রথম কাজ। কারণ ক্রেডিট কার্ড ভেদে আপনি কিন্তু ৪০ শতাংশেরর মতো সুদ দিয়ে থাকেন। তাই এই হিসাবটাও করে ফেলুন। কিন্তু লিখুন লিখে।
• মাস গেলে কত টাকা মাইনে পান তা লিখুন। কাজটা কিন্তু টেবিল করে করবেন। এক্সেলে করলে যোগ-বিয়োগ তো এক্সেলই করে দেবে। তাই ঝামেলা থাকবে না।
• প্রতি দিনের খরচের পাই-পয়সা লিখুন।
• প্রথম মাসের শেষে এটা হতেই পারে যে ক্রেডিট কার্ডেই কিছু দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিস কিনতে হল।
• যেই কার্ড ঘষলেন, তখনই জানবেন আপনার খরচের অভ্যাসে সমস্যা হয়েছে।
• দ্বিতীয় মাসের শুরু: এবার গত মাসের খরচ নিয়ে বসুন। দেখুন তো কী কী খরচ না করলেও আপনার দিব্য চলে যায়। সাধারণ হিসাব বলে আমাদের মাসে ১৫ শতাংশের কাছাকাছি খরচ না করলেও চলে।
• যে খরচ না করলেও চলে তা বাদ দিলে কোথায় দাঁড়ালেন খতিয়ে দেখুন।
• এবার আসছে লক্ষ্য ঠিক করার পালা। আয় থেকে বাদ দিন সংসার চালানোর দৈনন্দিন খরচ। তার থেকে বাদ দিন নানান ইএমআই। এবার হিসাব করুন কত তাড়াতাড়ি ক্রেডিট কার্ডের ধার শোধ করতে পারবেন এই টাকা থেকে। তার পর কিছু হাতে থাকছে না? এটাই আসল বিপদ।
• দ্বিতীয় মাসে ক্রেডট কার্ড পারলে আলমারিতে তুলে দিন। মাস মাইনে থেকেই সংসার চালাবেন এটাই আপনার লক্ষ্য। বিপদ আপদ হলে অবশ্য এই লক্ষ্যকে বর্জন করতেই হবে।
• তৃতীয় মাস: আপনি কিন্তু আপনার আর্থিক পরিস্থিতির একটা সম্যক জ্ঞান শুধু মাথাতেই ঢুকিয়েছেন তাই নয়, বাবা কাকার মতো চোখের সামনে নিজের আর্থিক পরিস্থিতি ছবির মতো দেখতে পারছেন।
• এবার পালা ব্যয়কে আয়ের মধ্যে আটকে রাখা। কষ্ট হবে। কিন্তু দৈনিক ব্যায়ামের মতো একে দেখতে হবে। হিসাব রাখা বন্ধ করবেন না।
• চতুর্থ মাস: মিলিয়ে নিন দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাসের খরচ। দেখুন ব্যয় কমাতে পেরেছেন কিনা। দেখবেন এটা ওই লক্ষ্য ধরে ব্যায়ামের মতোই হয়ে দাঁড়াবে।
• অভ্যাসটা বজায় রাখুন। এবার এক এক করে সঞ্চয়ের লক্ষ্য স্থির করুন। দেখবেন আপনি রাস্তা পেয়ে গিয়েছেন। প্রথমে কষ্ট হবে। কিন্তু অভ্যাস হয়ে যাবে।