Personal Finance 2023

যে দক্ষতায় ঘর সামলান ঠিক সেই দক্ষতাতেই আপনি সঞ্চয় সামলাতে পারবেন

আপনার খরচও সঙ্গে সঙ্গে এই তিন শ্রেণিতে ভাগ হয়ে যাবে। এবার এই তালিকা অনুযায়ী সঞ্চয়ের টাকা ভাগ করা শুরু করুন। আগে তো প্রয়োজন মেটাতেই হবে। তার পর ভাববেন চাহিদা মেটানোর কথা এবং সব শেষে সেই সব যা থাকলে আপনার ভাল লাগত।

Advertisement

অভিষেক দেব

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি

নারীদের নিজেদের বিনিয়োগকে হাতিয়ার করে এগিয়ে চলার সময় এসেছে। একজন নারী হিসাবে আপনাকে একাধিক ভূমিকা পালন করতে হয়। চলতি বছরে, আরও একটি নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন - একজন সফল বিনিয়োগকারী হিসাবে। আপনি একজন গৃহিণী হোন অথবা নিজের ব্যবসা চালান অথবা কোথাও চাকরি করেন, বিনিয়োগ সম্পর্কে জানা, একে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিনিয়োগ শুরু করা বেশ জরুরি।

Advertisement

কী ভাবে এবং কেন? রইল বিস্তারিত।

আর্থিক বিষয়গুলি নিজের নিয়ন্ত্রণে আনুন

Advertisement

অন্যান্য বিষয়গুলির মতোই আপনার আর্থিক বিষয়ের দেখাশোনা এবং নিজের অর্থ বিনিয়োগ করার জন্য আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন। আর তা অর্জন করতে আপনাকে জানতে হবে নিজের অর্থ নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার ম্যাজিক মন্ত্রটি। আর তা জানার একমাত্র উপায় হল সবার সঙ্গে আলোচনা। সবার সঙ্গে কথা বলে জানুন তাঁরা কী ভাবে তাঁদের লগ্নি সামলান। পারলে আর্থিক উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলুন। সংসার বা পরিবার সামলানোর মতো জটিল কাজ যখন অনায়াসে করছেন তখন কিন্তু এ কাজটাও আপনি ভালভাবেই পারবেন। এ ব্যাপারে যত আলোচনা করবেন তত লগ্নির যুক্তি আপনার কাছে পরিষ্কার হতে থাকবে। প্রত্যেকেরই সঞ্চয়ের একটা লক্ষ্য থাকে। ইচ্ছাপূরণের লক্ষ্য। সঞ্চয় হল সেই ইচ্ছাপূরণের ব্যবস্থা। নিজের ইচ্ছাকে আগামী দিনে বাস্তব করে তুলতে আজ থেকেই তার ব্যবস্থা করা।

মাথায় রাখুন প্রথম দিকে কিছু ভুল হতে পারে। কিন্তু তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বরং সেই ভুল কেন হল তা বুঝে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই কিন্তু সাফল্যের মন্ত্র। সব সময় মাথায় রাখতে হবে একটাই কথা – “সবাই যখন পারে তখন আমিই বা পারব না কেন?”

বিনিয়োগ সম্পর্কে জানুন

আত্মবিশ্বাস তৈরি করার কিন্তু একটাই রাস্তা। বিনিয়োগ ব্যাপারটা কী এবং তা কী ভাবে কাজ করে তা বুঝে নেওয়া। আর বর্তমান প্রযুক্তির যুগে এ আর এমন কী কঠিন কাজ! ইন্টারনেটেই পেয়ে যাবেন বিনিয়োগ এবং এ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা তৈরি করার যাবতীয় উপদেশ। কিন্তু সব সময়ে সেই উপদেশকে বেদবাক্য হিসাবে মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। উপদেশের যুক্তিটা বোঝার চেষ্টা করুন। তার পর নিজের প্রয়োজন মেটাতে সেই যুক্তি প্রয়োগ করুন।

আপনার আর্থিক অবস্থা আগে যাচাই করুন

বিনিয়োগ শুরু করার আগে আপনার মাসিক আয় এবং ব্যয়ের হিসেব রাখা জরুরি। এতে আপনি নিজের আর্থিক পরিস্থিতিটা পরিষ্কার বুঝতে পারবেন। এবং একই সঙ্গে কিন্তু বুঝতে পারবেন যে আমরা যে খরচ করি তার মধ্যে কোন খরচটা সত্যি কতটা অপ্রয়োজনীয়। বুঝতে পারবেন অনেক সময়ে আমরা কত অপ্রয়োজনীয় খরচ করি। এতে আপনার দুটো কাজ হবে। এক, আপনি বুঝতে পারবেন মাসিক আয় থেকে কতটা সঞ্চয় করা সম্ভব। দুই, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে সঞ্চয়ের পাল্লা ভারি করা।

যে গুরুত্বপূর্ণ সূত্রটি মাথায় রাখতে হবে তা হল,আয় – পরিকল্পিত বিনিয়োগ = ব্যয় (অথবা, আয় – ব্যয় = ফলাফল বিনিয়োগ)

আর্থিক লক্ষ্য বাছাই করুন

বিনিয়োগের অঙ্ক ঠিক করে ফেলার পর দীর্ঘমেয়াদি এবং স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যগুলি তালিকাভুক্ত করুন। বাড়ি সংস্কার থেকে শুরু করে সন্তানদের শিক্ষা অথবা বন্ধুদের সঙ্গে ছুটি কাটানো সব কিছুই থাকতে পারে এই তালিকায়। প্রতিটি লক্ষ্যের সঙ্গে থাকবে একটি খরচের আন্দাজ এবং সেই খরচ করার ক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করবে আর্থিক পরিকল্পনা।

আপনার লক্ষ্যগুলিকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করুন –

  • প্রয়োজন
  • চাহিদা
  • থাকলে ভাল লাগত

আপনার খরচও সঙ্গে সঙ্গে এই তিন শ্রেণীতে ভাগ হয়ে যাবে। এই বার এই তালিকা অনুযায়ী সঞ্চয়ের টাকা ভাগ করা শুরু করুন। আগে তো প্রয়োজন মেটাতেই হবে। তার পর ভাববেন চাহিদা মেটানোর কথা এবং সব শেষে সেই সব যা থাকলে আপনার ভাল লাগত। আর এদের জন্য আলাদা আলাদা সঞ্চয়ের কথা ভাবুন। এই রাস্তায় হাঁটতে যদি কোনও অসুবিধা হয়, সঞ্চয় উপদেষ্টার কাছে যান।

মহিলাদের জন্য সহজ বিনিয়োগের বিকল্প

আমার অভিজ্ঞতাই দেখেছি, অধিকাংশ মহিলাই তাঁদের পোর্টফোলিও বা সঞ্চয়ের ঝুলি নিয়মিত খতিয়ে দেখেন না। সময়ের সঙ্গে বাজারের চরিত্র বদলায়। এক সময় যা আপনাকে ভাল রিটার্ন দিয়েছিল তা এখন আর তত ভাল নাও করতে পারে। অথবা বাজারে আরও বেশি আয়ের সুযোগ তৈরি হয়ে যেতে পারে। সাধারণ যুক্তিই বলে এই অবস্থায় লগ্নি সরিয়ে নেওয়া উচিত। কিন্তু এই রাস্তায় অন্য অনেকের মতোই আপনারও আলস্য থাকে তা হলেও কোনও অসুবিধা নেই। বাজারে এমন বিনিয়োগের সুযোগও আছে যার উপর সারাক্ষণ নজর রাখার প্রয়োজন থাকবে না। বিনিয়োগের যাত্রা শুরুতে মিউচুয়াল ফান্ড উপযুক্ত বিনিয়োগের মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে বিনিয়োগকারীদের কাছে। কারণ প্রতিটি মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ পরিচালনা করেন একজন অভিজ্ঞ লগ্নি বিশেষজ্ঞ। তিনিই আপনার সঞ্চয়ের ঝুলি নিয়মিত ঝাড়পোছ করে আপনার রিটার্নকে ঠিক রাখার কাজ করে থাকেন।

বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন এসআইপি অর্থাৎ সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানের মাধ্যমে। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন এতে। এই টাকার অঙ্ক প্রতি মাসে আপনার সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি ইনভেস্টমেন্ট অ্যাকাউন্ট অর্থাৎ সঞ্চয় থেকে বিনিয়োগের খাতায় জমা হয়। সব থেকে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল প্রতি মাসে মাত্র ৫০০ টাকা দিয়েও বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন এসআইপিতে। অতএব, কোনও সময়ে যদি যথেষ্ট অথবা সক্রিয় আয় না থাকে তাও আপনি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন।

অসংখ্য বিনিয়োগ বিকল্পের ভিড়ে মিউচুয়াল ফান্ড একমাত্র বিকল্প যেখানে আপনি আপনার ঝুঁকি প্রোফাইল এবং লক্ষ্যের সময়ের উপর নির্ভর করে বেছে নিতে পারেন। সুতরাং, আপনি যদি এখনও বিনিয়োগ শুরু না করে থাকেন, এখনই উপযুক্ত সময়। বিনিয়োগ শুরু করুন এবং আর্থিক লক্ষ্য পূরণের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যান।

প্রতিবেদক কো-ফাউন্ডার, সিইও, এপসিলন মানি মার্ট। বক্তব্য নিজস্ব।

বিশেষজ্ঞদের কাছে সমাধান খুঁজতে সঞ্চয় নিয়ে আমাদের প্রশ্ন পাঠান — takatalk2023@abpdigital.in এই ঠিকানায় বা হোয়াটস অ্যাপ করুন এই নম্বরে — ৮৫৮৩৮৫৮৫৫২আপনার আয়, খরচ এবং সঞ্চয় জানাতে ভুলবেন না। পরিচয় গোপন রাখতে চাইলে অবশ্যই জানান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement