এসআইপি বর্তমানে বিনিয়োগ দুনিয়ার এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। নানা সময়, নানা ভাবে এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা যায়। কষ্ট করে রোজগার করা অর্থকে আরও বাড়ানোর চেষ্টা করেন সকলেই। সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগই একমাত্র উপায়। এই বিনিয়োগ নানা ভাবে হতে পারে। শেয়ার, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদি। সাধারণত মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করেন পেশাদার ফান্ড ম্যানেজাররা। তাঁরা
বিনিয়োগকারীর অর্থ শেয়ার, বন্ডের মতো নানা দিকে বিভক্ত করেন। প্রারম্ভিক পর্যায়ে বিনিয়োগকারীর অর্থক্ষমতা সীমিত থাকে। অথচ রিটার্নের প্রত্যাশা থাকে গগনচুম্বি। সেই কারণে নতুন প্রজন্ম আরও বেশি করে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। যে হেতু এই মুহূর্তে বাজারের অবস্থা আগের তুলনায় অনেকটা স্থিতিশীল (ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অবশ্য আপাত টালমাটাল) অবস্থায় রয়েছে, সে হেতু বিনিয়োগ করার কথা ভেবে থাকলে এটাই সেরা সময়।
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার দু’টি রাস্তা আছে। এক, এক লপ্তে বড়সড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করা। দুই, সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান বা এসআইপি-র সুযোগ নেওয়া। মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ হল এককালীন বিনিয়োগ। এসআইপি-র ক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যবধানে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা আপনাকে বিনিয়োগ করতে হবে। এই এসআইপিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে সহজেই কয়েক লক্ষ টাকা জমিয়ে ফেলতে পারেন কোনও বিনিয়োগকারী।
মনে রাখবেন, মিউচুয়াল ফান্ডের এসআইপি সিস্টেমে বিনিয়োগকারীদের যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এসআইপি-তে যদি বিনিয়োগের পরিসংখ্যান দেখা হয়, তবে তা বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা। এসআইপি-তে বহু দিনের জন্য বিনিয়োগ করলে দারুণ রিটার্ন তো পাওয়াই যায়, সেই সঙ্গে মেলে সুবিধাও।
একেবারে স্বল্প পরিমাণ অর্থ দিয়েই কোনও বিনিয়োগকারী শুরু করতে পারেন সঞ্চয়ের প্রথম ধাপ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির রোজগার, ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক লক্ষ্যের কথা মাথায় রেখেই বিনিয়োগ শুরু করা উচিত। একবারে বড় অঙ্ক বিনিয়োগ করার থেকে প্রতি মাসে একটু একটু করে বিনিয়োগ করা অনেক সুবিধাজনক। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানা পরিস্থিতি তৈরি হয়। কখনও কোনও ক্ষেত্রে আতঙ্কিত হয়ে অনেকে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। আবার অনেক সময় লাভের সুযোগ ছেড়ে দিতেও ইচ্ছে করে না।
এই দিকটা মাথায় রাখলে স্বয়ংক্রিয় বিনিয়োগই সেরা পন্থা। এখানে কোনও সুযোগ নেওয়ার কিংবা আবেগপ্রবণ হওয়ার ব্যাপার থাকে না। একটি জমা থাকা অর্থকে নানা ভাবে স্বয়ংক্রিয় বিনিয়োগের মাধ্যমে কাজে লাগানো যায়— মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাষিক কিংবা বার্ষিক পদ্ধতিতে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ১০০ টাকা দিয়েও এসআইপিতে বিনিয়োগ শুরু করা যেতে পারে।
যদি কোনও বিনিয়োগকারী তাঁর ২১ বছর বয়স থকে প্রতি দিন ১০০ টাকা করে সঞ্চয় করে মাসিক এসআইপিতে বিনিয়োগ করেন, তবে ৫০ বছর বয়সে ওই ব্যক্তি পেতে পারেন এক কোটি টাকা। এই পরিমাণ উপার্জনের জন্য কিন্তু এসআইপি একটি দারুণ সুযোগ।
এ বার আসা যাক অঙ্কের বিষয়ে। ধরা যাক, কোনও ব্যক্তি ২১ বছর বয়স থেকে প্রতি দিন ১০০ টাকা সঞ্চয় করছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রতি মাসে বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ৩০০০ টাকা। কোনও ব্যক্তি যদি প্রতি মাসে তিন হাজার টাকার একটি এসআইপি করেন ও ১২ শতাংশ বার্ষিক রিটার্ন পান, তবে পরবর্তী ৩০ বছর অর্থাৎ তাঁর ৫০ বছর বয়সে সম্পূর্ণ করার পরেই ১.১ কোটি টাকার একটি তহবিল তৈরি গড়তে পারবেন। এই সময়ের মধ্যে মোট বিনিয়োগ হবে ১০ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। এর থেকে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীর লাভ হবে ৯৫ লক্ষ ১০ হাজার টাকা।
মিউচুয়াল ফান্ডের এ রকম অনেক প্রকল্প রয়েছে যেখানে দীর্ঘমেয়াদে ১২ শতাংশ বার্ষিক রিটার্ন পাওয়া যায়। এই ক্ষেত্রে বার্ষিক রিটার্নের উপর তহবিলের বৃদ্ধি বা কম হওয়া নির্ভর করে। মনে রাখতে হবে, বাজারে অস্থিরতা দেখা দিলে তার প্রভাব এসআইপি-তেও পড়তে পারে।
অতীত পরিসংখ্যান বলছে, এসআইপি-র ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা লাভজনক এবং অপেক্ষাকৃত ঝুঁকি অনেকটাই কম। আর সেই কারণেই বহু মানুষ এই এসআইপি-তে বিনিয়োগ করেন। একই সঙ্গে এই রিটার্ন সাধারণ বিনিয়োগের তুলনায় অনেকটাও বেশি।
মনে রাখবেন, ধৈর্য ধরতে পারাও বিনিয়োগে সাফল্যের সেরা উপায়। কথায় আছে, বিনিয়োগের ধৈর্য ধরাটা অনেকটাই ছোট্ট চারা গাছকে বাড়তে দেখার মতো। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে চটজলদি মুনাফার কথা না ভেবে ধৈর্য ধরতে হবে। এবং অবশ্যই বাজার বিশ্লেষণ করে তবেই বিনিয়োগ করুন। প্রয়োজনে কোনও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ দিন।