প্রতীকী ছবি।
এসআইপি বা পদ্ধতিগত বিনিয়োগ পরিকল্পনা মিউচুয়াল ফান্ডের এমন একটি বিনিয়োগ প্রক্রিয়া যেখানে বিনিয়োগকারীরা নিয়মিত বিরতিতে প্রকল্পগুলিতে অল্প পরিমাণে বিনিয়োগ করে থাকেন। এসআইপি-কে মিউচুয়াল ফান্ডের অন্যতম বিনিয়োগস্থল হিসেবে বিবেচনা করা হয় কারণ এটি বিনিয়োগকারী ব্যক্তিদের স্বল্প বিনিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে সময়মতো তাঁদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। অতএব, এটিকে লক্ষ্যভিত্তিক পরিকল্পনা হিসাবেও উল্লেখ করা হয়।
কোনও এসআইপি নিশ্চিত করে যে ভবিষ্যতের লক্ষ্যগুলির জন্য পরিকল্পনা করার সময় এক জন ব্যক্তির বর্তমান বাজেট যেন কোনওভাবেই ব্যাহত না হয়।
এসআইপি এমন একটি সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান, যা প্রতি মাসে পছন্দের স্টক স্কিমে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়। এসআইপি মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ জগতে খুব পুরনো ও পরিচিত প্রকল্প বলেই ধরা হয়। মিউচুয়াল ফান্ডে কী ভাবে এসআইপি করতে হয়, তা কম-বেশি অনেকেরই জানা। কিন্তু, স্টক মার্কেটে কী ভাবে এসআইপি করতে হয় তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। এই সম্পর্কে অনেকেরই কম ধারণা রয়েছে। তাই স্টক মার্কেটে এসআইপি বিনিয়োগ করার জন্য ভাল করে জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
এসআইরি-র প্রথম ধাপ সর্বদা উদ্দেশ্য নির্ধারণের মাধ্যমে শুরু হয়। কোনও বিনিয়োগ করার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তাঁর বিনিয়োগের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে হবে। এটি বিনিয়োগকারীকে কী ধরনের স্কিম বেছে নেওয়া হবে, বিনিয়োগের মেয়াদ কী হওয়া উচিত, বিনিয়োগে প্রত্যাশিত আয় ইত্যাদি বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করবে।
সাধারণত বিনিয়োগকারীরা যে কোনও স্টক এসআইপি নিতে পারেন। এসআইপি মাসিক, ত্রৈমাসিক, সাপ্তাহিক অথবা পূর্ণ সময়ের করা যেতে পারে। বিনিয়োগকারীরা কোন সময়ের জন্য এসআইপি করবেন তা তাঁরা নিজেরাই ঠিক করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি একটি সংস্থার থেকে ১০ হাজার টাকার এসআইপি কেনেন, সে ক্ষেত্রে প্রতি মাসে ক্রেতাকে ১০ হাজার টাকার স্টক বরাদ্দ করা হবে।
মূলত স্টক এসআইপির সবথেকে বড় সুবিধা হল এখানে সময়ের কোনও বিধিনিষেধ নেই। এ ক্ষেত্রে পাঁচ বছর বা তিন মাসের জন্যও বিনিয়োগ করা যায়। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীর ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করে যে তিনি কত দিনের জন্য বিনিয়োগ করতে চাইছেন। এখানে কোনও ধরনের লকিং প্রক্রিয়া থাকে না। তবে বলা হয়ে থাকে, স্টক এসআইপিতে লাভ করতে হলে বিনিয়োগকারীকে ন্যূনতম পাঁচ বছরের বিনিয়োগ করতে হবে। এর পাশাপাশি বাজারে কী চলছে, পরিস্থিতি কেমন থাকতে পারে সে সব নিয়ে বেশি চিন্তা না করাই ভাল।
এসআইপিতে বিনিয়োগের কৌশল কী?
এসআইপিতে বিনিয়োগের আসল কৌশল হল এ-গ্রেড স্টক ধরে রাখতে হবে এবং অন্তত পাঁচ বছরের জন্য এসআইপি করতে হবে। এ ছাড়াও এসআইপিতে বিনিয়োগের সময় বিকল্প ভেবে রাখা উচিত। কারণ কোনও স্টক মার্কেট খারাপ চললে, যাতে চটজলদি অন্যটিতে বিনিয়োগ করা যায় সেই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। তবে বিনিয়োগকারী স্টক এসআইপিতে বিনিয়োগ করলে মিউচুয়াল ফান্ড এসআইপি থেকে অনেক গুণ বেশি সুবিধা পেতে পারে। যদি কোনও ব্যক্তি ১৫ বছরের জন্য ১০ হাজার টাকার ১৫% এসআইপি-তে বিনিয়োগ করে, তা হলে ১৫ বছর পর তিনি ৬৭৬৮৬৩১ টাকা পেতে পারেন।
তবে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার আগে ব্যক্তিদের কেওয়াইসি মেনে চলতে হবে। এটি একটি এককালীন পদ্ধতি। কেওয়াইসি পদ্ধতি সম্পন্ন করা ব্যক্তিরা বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানির যে কোনও স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারেন। এই কেওয়াইসি প্রক্রিয়াটি অনলাইন মোড বা অফলাইন মোডের মাধ্যমে করা যেতে পারে।
এসআইপি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার সময় বিনিয়োগকারী ব্যক্তিকে এই পরিমাণটি নির্ধারণ করা উচিত কারণ এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্কিমে রাখা হবে। বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করতে, কোনও ব্যক্তি এসআইপি ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারেন যা তাঁর লক্ষ্য অর্জনের জন্য কত পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তা বুঝতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এই পদক্ষেপটি নিশ্চিত করবে যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তাঁর বর্তমান ব্যয়ের জন্য কোনও আর্থিক সংকটের মুখোমুখি না হন। অর্থের পরিমাণের পাশাপাশি, বিনিয়োগের তারিখ নির্বাচন করাও গুরুত্বপূর্ণ। এটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে সঠিক তারিখে সেই পরিমাণ কেটে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করতে এবং একটি সুশৃঙ্খল সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।