প্রাথমিক পাবলিক অফার (আইপিও) হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে বেসরকারি সংস্থাগুলির শেয়ার সর্বসাধারণের কাছে শেয়ারে লেনদেন করার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয় এবং এটি বেসরকারি সংস্থাকে বিভিন্ন বিনিয়োগের জন্য মূলধন বাড়ানোর অনুমতি দেয়। বলা যেতে পারে, এটি একটি বেসরকারি সংস্থা বা কোম্পানিকে পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তরিত করার একটি প্রক্রিয়া মাত্র। একটি প্রাথমিক পাবলিক অফার কেবল মাত্র কোনও প্রাইভেট সংস্থাকে বৃদ্ধির করার জন্য মূলধনের প্রয়োজনের ইঙ্গিত নয়, এটি এমন একটি প্রতীক যা সংশ্লিষ্ট ব্যবসাকে বিশ্ব মানচিত্রে একটি নির্দিষ্ট জায়গা তৈরি করে দেয়।
তবে সকল বিনিয়োগকারী আইপিও-তে বিনিয়োগের প্রক্রিয়া বেছে নেন না। যে সমস্ত মানুষ মনে করেন যে তাঁরা বিনিয়োগের খাতে এগিয়ে থাকার দৌড়ে প্রতিযোগিতামূলক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম, কেবল তারাই প্রাথমিক পাবলিক অফার বেছে নেন। সাম্প্রতিক সরবনেস-অ্যাক্সলে আইন অনুযায়ী, আইপিও একটি কঠিন প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে যা কেবল ব্যবসাকে আরও বেশি অর্থ ব্যয় করায় না, বরং এতে আরও নিয়ন্ত্রকের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে যা খুব কম সংস্থাই এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
আইপিও করার আগে যে বিষয়গুলি খেয়াল রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন, সেগুলি হল, কেন আপনি অর্থ বৃদ্ধি করতে চান? আপনি কি আপনার ব্যবসা প্রসারিত করতে চান? আপনি কি ব্যাকওয়ার্ড ইন্টিগ্রেশন বা ফরোয়ার্ড ইন্টিগ্রেশনের জন্য যেতে চান? আপনি কি আপনার ব্যবসাতে বৈচিত্র্য আনতে চান? আপনার কী কারণ রয়েছে তা বিবেচনা না করে এগুলিতে গণনা করুন এবং পরবর্তী পদক্ষেপে যান।
এর পরে এমন একটি বিনিয়োগ ব্যাঙ্ক খুঁজে বের করুন যা আপনার আইপিও প্রক্রিয়াটির জন্য একজন আন্ডার রাইটার হিসাবে কাজ করবে। বিনিয়োগের ব্যাঙ্কের উপর কিন্তু অনেক কিছু নির্ভর করে। তাই ব্যাঙ্ক নির্বাচন করার আগে, ব্যাঙ্কের কোনও আইপিও পরিচালনার আগের রেকর্ড রয়েছে কিনা তা নির্বাচন করুন। আইপিও পরিচালনার অভিজ্ঞতা আপনার কাঁধ থেকে অনেক বোঝা সরিয়ে নেবে।
বিনিয়োগ ব্যাঙ্ক কেবল একবারই ভাড়া নেওয়া যায়। আসলে এটি আন্ডার রাইটার হিসাবে কাজ করে। আন্ডার রাইটার সংস্থাটির মূল্য নির্ধারণ করে এবং বিনিয়োগকারীরা সংস্থায় শেয়ারের জন্য কত দিতে ইচ্ছুক সেই বিষয়টি দেখে। এর পরে পূর্ব নির্ধারিত মূল্যে কোম্পানির শেয়ারগুলি শেয়ার বাজারে আসে এবং পরে স্বতন্ত্র বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনে নিতে পারেন ও সংস্থাটিও নিউজ ফান্ড করতে পারে। পুরো লেনদেনটি প্রথমে বিনিয়োগ ব্যাঙ্ক দ্বারা অর্থায়ন করা হয় যাতে প্রাথমিক পাবলিক অফারের আগে সংস্থার পর্যাপ্ত তহবিল থাকে।
আইপিও প্রক্রিয়াটি শেষ হতে সাধারণত কয়েক মাস সময় নেয় এবং কিছু ক্ষেত্রে, এটি সর্বদা সফল হয় না। তখন আইপিও ব্যর্থ হয়ে গেলেও, ব্যয়টি সংস্থাটি বহন করতে হয় এবং সাধারণত তাদের প্রায় তিন থেকে পাঁচ লক্ষ ডলার ব্যয় করতে হয়। মূলত মুদ্রণ, আইনি বিষয়াদি এবং অ্যাকাউন্টিং ফি ইত্যাদির জন্য ব্যয় বহন করতে হয়।
আপনি যদি আপনার প্রাথমিক পাবলিক অফারটিকে সফল করতে চান তবে প্রথমে বাজারে যান এবং আপনার সম্প্রসারণ বা বৈচিত্র্যের ধারণাটি আদতে সঠিক কিনা তা নির্বাচন করে দেখুন।
এর পরে স্টক এক্সচেঞ্জগুলির সম্পর্কে জেনে পছন্দসই বিকল্প বেছে নিতে পারেন। পছন্দের প্রথমটি অবশ্যই এনওয়াইএসই বা নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ। এ ছাড়াও একটি এএমএক্স আমেরিকান স্টক এক্সচেঞ্জ রয়েছে। আপনি নাসডাক বা জাতীয় সিকিউরিটিজ ডিলার্স অটোমেটেড কোটেশনস অ্যাসোসিয়েশনও বেছে নিতে পারেন। অন্যান্য বিকল্পগুলি হ'ল ওটিসিবিবি বা কাউন্টার বুলেটিন বোর্ডের ওভার এবং গোলাপী পত্রক। সময়ের প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে আপনি কী স্টক এক্সচেঞ্জের উপযোগী তা চয়ন করতে পারেন।
আইপিও করার সময় কার্যকরভাবে আপনার ব্যবসার পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা একটি প্রয়োজনীয় জিনিস। অন্যথায়, প্রক্রিয়া চলাকালীন, আপনি উপার্জনের একটি বড় অংশ হারিয়ে যেতে পারে।
আইপিও কী ভাবে কাজ করে? সেবি আইপিও-তে বিনিয়োগের গোটা প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রন করে। আইপিও-র মাধ্যমে শেয়ার ইস্যু করতে ইচ্ছুক একটি কোম্পানি প্রথমে সেবিতে রেজিস্টার করে। সেবির সমস্ত নথি যাচাই করার পর সঠিক মনে হলেই,তার পরে এটি অনুমোদন পায়।
কোম্পানি সেবি দ্বারা অনুমোদন পেলে দু’টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। একটি শেয়ারের মূল্য এবং অন্যটি শেয়ারের সংখ্যা।
শেয়ারের মূল্য দুই ধরনের পদ্ধতি দ্বারা নির্ধারণ করা হয়- একটি হল ফিক্সড প্রাইজ অন্যটি বুক বিল্ডিং ইস্যু। ফিক্সড প্রাইজে বা নির্দিষ্ট মুল্য নির্ধারণ করা থাকে। বুক বিল্ডিং ইস্যুতে একটি রেঞ্জ থাকে। যা কখনও ২০ শতাংশসের বেশি না হয়। ইস্যুর ধরন সম্পর্কে কোম্পানি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কোম্পানি জনসাধারনের জন্য শেয়ারগুলি উপলব্ধ করে। বিনিয়গকারিরা তখন শেয়ার কেনার জন্য আবেদন জমা করেন।
আইপিও জনসাধারন কেনার সময় লট অনুযায়ী আবেদন করে। এ ক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছে মতো স্টক কেনার সুবিধা নেই। বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন লটের সাইজ হয়ে থাকে। যেমন, কোনও কোম্পনি ৫০টি স্টক নিয়ে ১ লট তৈরি করে, এবার কোনও কোম্পানি ১০০টি স্টক নিয়ে ১ লট করে অর্থাৎ আপনাকে লট আনুযায়ী আবেদন করতে হবে।
পাবলিকের কাছে শেয়ার পৌঁছে হয়ে গেলে, পরবর্তী ধাপ হল স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করা। প্রাইমারি মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ইস্যু করার পর সেকেন্ডারি মার্কেটে তালিকাভুক্ত হয়। এই শেয়ারগুলি এর পরে প্রতিদিন ট্রেড করা যেতে পারে।
আইপিও কীভাবে কিনবেন? আইপিও কেনার জন্য আপনার ডিম্যাট এবং ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট অবশ্যই থাকতে হবে। দু’রকম পদ্ধতি তে আইপিও তে আবেদন করা যায়। একটি হল নেট ব্যাঙ্কিং, আর অন্যটি ইউপিআই।
নেট ব্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার নেট বাঙ্কিং অ্যাকাউন্টে ই-সার্ভিসে গিয়ে যেই আইপিও কিনতে চাইছেন সেটা পছন্দ করার পর , কতগুলি লট নেবেন সেই অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। আবেদন করার পর আপনি যত দিন না স্টক পাচ্ছেন, তত দিন যে পরিমাণ লট আবেদন করেছেন সেই পরিমাণ টাকা ব্লক হয়ে থাকবে অর্থাৎ সেই পরিমাণ টাকা আপনি আর খরচ করতে পারবেন না।
ইউপিআই-এর মাধ্যমে আবেদন করতে চাইলে আপনাকে আপনার ব্রোকারের অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে। এর জন্য আপনার একটি ইউপিআই অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। আপনি যেই আইপিও তে নিবেশ করবেন সেটা পছন্দ করার পর কত লট নেবেন সেটা দিতে হবে। এর পর সেই পরিমাণ টাকা আপনার ব্লক হয়ে যাবে যত দিন না আপনি সেই পরিমাণ লট হাতে পাচ্ছেন।
আইপিওতে বিনিয়োগের পূর্বে অবশ্যই সেই কোম্পানি সম্পর্কে ভাল মতো রিসার্চ করার পর বিনিয়োগ করা উচিত।