বিনিয়োগের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। এর মধ্যে কেউ ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করতে ভালবাসেন। এঁদের মধ্যে অনেকেই ভাল রিটার্ন পান। আবার বিনিয়োগের ২২ গজে যাঁরা ঝুঁকি নিতে ভয় পান, তাঁরা তুলনামূলক ভাবে কম অর্থ ঘরে তোলেন। ঝুঁকিহীন বিনিয়োগের এমন একটি স্থান হল ভারতীয় জীবন বিমা নিগম, সংক্ষেপে এলআইসি।
বাজারে থাকা ৮৮ শতাংশ বিনিয়োগকারীই তাঁদের অর্থ একাধিক প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চান। বিনিয়োগের একাধিক বিকল্পের কারণে কোন সংস্থায় বিনিয়োগ করবেন তা নিয়ে বেশ সংশয়ে থাকেন। তবে হ্যাঁ, ঝুঁকিহীন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এলআইসি হতে পারে বিনিয়োগের সেরা ঠিকানা। প্রথমত এটি দেশের সব বিমা সংস্থাগুলির মধ্যে সবথেকে বেশি বিশ্বস্ত। দ্বিতীয়ত, এর রিটার্নও মন্দ নয়।
বাজারচলতি বিভিন্ন বেসরকারি বিমা সংস্থা থাকলেও এখনও দেশের বহু মানুষ ভরসা করেন এলআইসি-কে। এলআইসি বহু বছর ধরেই তার গ্রাহকদের জন্য নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এসেছে। যে সমস্ত গ্রাহকের আয়ের পরিমাণ খুব কম, তাঁদের জন্যও এলআইসি-তে রয়েছে একটি বিশেষ প্রকল্প। এই বিশেষ প্রকল্পের নাম হল ভাগ্য লক্ষ্মী যোজনা।
ভুলে গেলে চলবে না, ভারতের মতো দেশে অসংগঠিত ক্ষেত্রে দৈনিক উপার্জনকারী ব্যক্তির সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। তাঁদের দৈনিক আয়ের পরিমাণও যথেষ্ট কম। এলআইসি-র তরফে ইস্যু করা এই ভাগ্য লক্ষ্মী যোজনা সমাজের এই সমস্ত ব্যক্তিদের জন্যই তৈরি হয়েছে।
বলা যেতে পারে এটি কম উপার্জনকারী ব্যক্তিদের জন্য খুবই সহায়ক একটি যোজনা। এই প্রকল্পের আওতায় এসে কোনও বিনিয়োগকারীকে সীমিত সময়ের জন্য অর্থ দিতে হয়। অর্থাৎ স্বল্প সময়ের জন্য অর্থ বিনিয়োগ করে বেশ ভাল রিটার্ন পেতে পারেন এক জন গ্রাহক।
এলআইসি-র এই ভাগ্য লক্ষ্মী যোজনার সুবিধা পেতে হলে প্রথমেই সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীর একটি মেডিক্যাল পরীক্ষা করা জরুরি। এই বিমার সব থেকে আকর্ষণীয় বিষয় হল, বিনিয়োগের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে, সংশ্লিষ্ট গ্রাহক প্রিমিয়ামের উপর ১১০ শতাংশ রিটার্ন পাবেন। পলিসির মেয়াদ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে সুদ সমেত টাকা ঢুকবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
এই বিমার আওতায় আসতে হলে এক জন বিনিয়োগকারীর সর্বনিম্ন বয়স হতে হবে ১৯ বছর এবং সর্বোচ্চ বয়স হতে হবে ৫৫ বছর। এই বিমাটি আপনি সর্বনিম্ন পাঁচ বছর ও সর্বোচ্চ ১২ বছরের জন্য করতে পারেন। এই পলিসি অনুযায়ী বিমাকারীকে প্রিমিয়াম জমার পরে আরও দু’বছর বেশি কভার দেওয়া হয়।
এলআইসি-র এই বিশেষ প্রকল্পে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা রিটার্ন পাওয়া যায়। তবে যদি পলিসি হোল্ডার এক বছরের মধ্যে আত্মহত্যা করেন, তা হলে কিন্তু তিনি এই বিমার সুবিধা পাবেন না। কিন্তু যদি এক বছর পরে এই ধরনের ঘটনা ঘটে তা হলে গ্রাহকের নমিনি প্রস্তাবিত অর্থের পুরো টাকাটাই ফেরত পাবেন। এই বিমায় আমানতকারী কিন্তু ঋণের সুবিধা পাবেন না। কিন্তু পলিসি চলাকালীন আমানতকারী চাইলে পলিসি সারেন্ডার করতে পারেন। অর্থাৎ ইচ্ছা অনুযায়ী আমানতকারী বন্ধ করে দিতে পারেন এই প্রকল্প।
যদি কোনও ব্যক্তি পলিসি সারেন্ডার করেন, তা হলে তাঁর পলিসির ৩০ থেকে ৯০ শতাংশ রিটার্ন পাবেন তিনি। মনে রাখবেন, পলিসি যত বেশি দিনের হবে, রিটার্নের পরিমাণও তত বেশি হবে।
এই পলিসিতে ম্যাচিউরিটির সুবিধার পাশাপাশি মৃত্যুকালীন সুবিধাও রয়েছে। এই পলিসিতে আপনি প্রতি মাসে টাকা দিতে পারেন, প্রিমিয়াম পরিশোধের জন্য বার্ষিক, অর্ধবার্ষিক, ত্রৈমাসিক এবং মাসিক মেয়াদ বেছে নেওয়া যেতে পারে।
আয়কর আইন অনুযায়ী এই প্রকল্প থেকে পাওয়া অর্থের উপরে আয় কর ছাড় পাওয়া যাবে। যদিও অতীত পরিসংখ্যান বলছে এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করা ব্যক্তিরা সাধারণত আয়কর আইনের আওতায় পরেন না।