প্রতীকী ছবি
আজকের দুনিয়ায় নাকি আর কোনও কিছুই ব্যক্তিগত নেই। আপনার সব কিছুই নাকি জানা যায় আপনার দৈনন্দিন মোবাইল, ক্রেডিট কার্ড, ইমেল ইত্যাদির ব্যবহার থেকে। এমনকী আপনি কোথায় আছেন এবং কখন, তা জানতেও আর গোয়েন্দার প্রয়োজন নেই। কম্পিউটারের দু-চারটে বোতাম টিপলেই চিচিং ফাঁক। আপনার সব তথ্য এক লহমায় কম্পিউটার স্ক্রিনে হাজির।
এ বার আপনার গাড়ির বিমার প্রিমিয়ামের হিসাবও প্রায় একই ভাবে করা হবে। মূল প্রযুক্তিটা একই। যাকে টেলিম্যাটিক্স বলে। এক কথায় বললে এটা হল কম্পিউটার নির্ভর তথ্যের আদানপ্রদানের প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে গাড়িতে একটা যন্ত্র বসিয়ে দেওয়া হবে। সঙ্গে ড্যাশবোর্ড ক্যামেরা। এই ক্যামেরা আজকাল অনেকেই ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। যা গাড়ি চালানোর সময়ে সামনে এবং পিছনের ভিডিও করতে থাকে এবং মেমরি চিপে ধরে রাখে। উদ্দেশ্য একটাই। কোনও কারণে অন্যের দোষে দুর্ঘটনা ঘটলে, তা যাতে সহজেই প্রমাণ করা যায়।
টেলিম্যাটিক্স ও বিমার ঝুঁকির অঙ্ক
টেলিম্যাটিক্স শব্দটি কিন্তু মোটরগাড়ি শিল্পে বহুল প্রচলিত। মোটর গাড়ির রেসের সময় প্রতিটি গাড়ির ইঞ্জিন থেকে শুরু করে চাকার অবস্থা দূরে বসে সেই গাড়ির সহায়ক প্রযুক্তিবিদেরা প্রতিটি মুহূর্তে নজর রাখেন। যাতে কোনও যন্ত্র বেগড়বাই করলেই গাড়িটিকে পিটে ডেকে নেওয়া যায়। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমে। এ বার গাড়ির সাধারণ বিমার জন্য এই প্রযুক্তিরই কিছুটা অংশ ব্যবহার করা হবে। যাঁরা এই নতুন বিমা কিনতে চাইবেন, তাঁদেরই শুধু প্রযুক্তি গাড়িতে ব্যবহার করতে হবে।
এতে কী হবে? যেমন, ড্যাশবোর্ড ক্যামেরায় তোলা ছবির ভিত্তিতে বিমাকারীর দাবির বৈধতা বিশ্লেষণ এবং সংঘর্ষ সম্পর্কিত তথ্য বোঝা যাবে। সংঘর্ষ সতর্কীকরণ পদ্ধতিতে সংঘর্ষের আশঙ্কাও আঁচ করা সম্ভব। আর দুর্ঘটনা ঘটলে বিমা সংস্থার হেল্পলাইন নম্বরে সঙ্গে সঙ্গে এসএমএস চলে যাবে। যাতে গাড়ির অবস্থান, সংঘর্ষের সময়ে গাড়ির ভিতরে যাত্রীর সংখ্যা ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য থাকবে।
ঝুঁকির অঙ্ক
আপনি বলতেই পারেন এ আর নতুন কী? এত দিন তো তাই হচ্ছিল! না। এতদিন আপনার গাড়ি কেমন চলে, তার উপর নির্ভর করে আপনার গাড়ির বিমার প্রিমিয়াম ঠিক হত না। হত সব গাড়ি কেমন চলে, তার গড়ের উপর নির্ভর করে।
আর এ বার হবে আপনার গাড়ি চালানোর দক্ষতার উপর নির্ভর করে। ফলে অন্যের অদক্ষতার মুল্য ঝুঁকির হিসাবে এলেও আপনার দক্ষতা তা মিটিয়ে দিতে পারে।আসলে বিমা শিল্প তাদের উদ্ভাবনী ভাবনার জন্য কোনও দিনই খুব একটা পরিচিত ছিল না। কিন্তু নতুন প্রযুক্তি এবং বিমার ক্রেতাদের চাপের মুখে এই শিল্পও বদলাতে বাধ্য হচ্ছে। বিমা সংস্থারাও নতুন নতুন প্রকল্প বাজারে আনছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিয়েই।
মাথায় রাখতে হবে সময়ের সঙ্গে ঝুঁকির চরিত্রও বদলাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিমার ক্ষেত্রে কোভিড এ ব্যাপারে একটা বড় উদাহরণ। কে ভেবেছিল বিশ্বজুড়ে এ রকম একটা অতিমারি এত প্রাণ কেড়ে নেবে! প্রথাগত স্বাস্থ্য বিমায় এর চিকিৎসার সুযোগও ছিল না। কিন্তু সে ব্যবস্থা চটজলদি করতে হয়েছিল বিমা শিল্পকে। আর তা হয়েছিল প্রয়োজনের চাপে, বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশেই।
বিমা শিল্পের ব্যবসাই হল ঝুঁকির হিসাব করে, তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা। অঙ্কটা হল বেশির ভাগ ক্রেতার ক্ষেত্রেই ঝুঁকিটা বাস্তব হবে না। তাই ক্ষতিপূরণও দিতে হবে না। ফলে প্রিমিয়াম বাবদ যে টাকা আসবে, তার তুলনায় ক্ষতিপূরণের অঙ্কটা কম। আর তাতেই লাভ বিমা সংস্থাগুলির।
এ বার গাড়ির বিমার ক্ষেত্রেও একই ভাবে এই বদল এসেছে। আসলে ঝুঁকির হিসাব করা হয়, ক্রেতা বিমা কিনছেন যে ঝুঁকির ক্ষতি এড়াতে, সেই ঝুঁকি বাস্তব হওয়ার আশঙ্কা হিসাব করে। আপনি যদি সিগারেট খান বা গুটখা বা জর্দা, তা হলে আপনার ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। অথবা ডায়াবিটিস থাকলে অন্য নানা রোগ হতে পারে। তাই আপনার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের হার বেশি হতে পারে স্বাস্থ্য বিমা কেনার সময়ে। অথবা আপনি কয়েক বছর এই সব অভ্যাসের কারণে যে যে রোগ হতে পারে, তার কভারেজ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
গাড়ি বিমার এই নতুন অংশে তাই দেখে নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে আপনার গাড়ি কী ভাবে চলে, কোন রাস্তায় চলে। তার থেকে হিসাব করা হবে আপনার গাড়ির ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি। আর সেই অঙ্কেই কষা হবে আপনার প্রিমিয়াম।
প্রতিবেদক চিফ-আন্ডাররাইটিং, রিইনস্যুরেন্স এন্ড এএমপি; ক্লেইমস, অ্যাকচুয়ারিয়াল, আইসিআইসিআই লম্বার্ড জিআইসি। বক্তব্য নিজস্ব।
বিশেষজ্ঞদের কাছে সমাধান খুঁজতে সঞ্চয় নিয়ে আমাদের প্রশ্ন পাঠান — takatalk2023@abpdigital.in এই ঠিকানায় বা হোয়াটস অ্যাপ করুন এই নম্বরে — ৮৫৮৩৮৫৮৫৫২আপনার আয়, খরচ এবং সঞ্চয় জানাতে ভুলবেন না। পরিচয় গোপন রাখতে চাইলে অবশ্যই জানান।