প্রতীকী চিত্র।
৫৫ বছর বয়সে ৮ লক্ষ টাকার ১২ বছরের জন্য জীবন বিমা কিনেছিলেন অভিষেক। অবসরের পরে ত্রৈমাসিক ১৯ হাজার টাকার উপর প্রিমিয়াম। অবসরের পরে হিসাব করে দেখলেন প্রিমিয়াম বাবদ ৮ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা প্রিমিয়াম দিতে হবে তাঁকে। যেহেতু এনডাওমেন্ট তাই তার সঙ্গে যোগ হবে বোনাস আর লাভের অংশ। তাই অবসরের পরে সঞ্চয় কমে এলে এর থেকে আবার সেই সঞ্চয় পুষিয়ে নেওয়ার ভাবনা থেকেই করেছিলেন এই বিমা। সেটা সঞ্চয়ের কৌশল হিসাবে ঠিক ছিল কিনা সে প্রশ্ন আলাদা। যা হওয়ার তাতো হয়েই গিয়েছে। এখন তাঁর সামনের রাস্তাটা কী?
তাঁর অবশ্য যুক্তি ছিল একটা। অবসরের পরে আয় তো সবারই কমে। খুব কম মানুষেরই কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ জোটে। তবুও ভেবেছিলেন চালিয়ে নেবেন। কিন্তু এই প্রিমিয়ামটা অভিষেক বাবুর পকেটে বেশ ভারিই মনে হতে শুরু করল। তাও কষ্ট হলেও চালিয়ে গিয়েছিলেন। বছর ছয়েক কিন্তু আর টানতে পারছেন না। আবার মনে চিন্তা এত দিন এত টাকা প্রিমিয়াম হিসাবে দিয়েছেন। সঞ্চয় আর বিমার সুযোগ হিসাবেই ভেবেছিলেন এই বিমাকে। এখনও সে ভাবেই দেখতে চান কিন্তু প্রিমিয়াম আর টানতে পারছেন না। কী করবেন?
অভিষেকের কাছে দুটো পথ খোলা আছে: ক) বিমা সারেন্ডার করা, খ) বিমার প্রিমিয়ামকে পেইড আপ হিসাবে দেখা।
আসুন দেখে নিই দুটোর মধ্যে ফারাক।
ক) বিমা সারেন্ডারের নানান দিক
আপনি বিমা আর টানতে পারছেন না। বা হিসাব করে দেখলেন সঞ্চয় আর বিমাকে এক সঙ্গে রেখেই বিমা কিনেছিলেন। কিন্তু এখন দেখছেন এই দুটোকে আলাদা করে দেখলে তাঁর আয় বেশিই হবে। অভিষেক বাবু তাই বিমা সারেন্ডার করে দিতে পারেন। এতে যা প্রিমিয়াম দিয়েছেন তার একটা অংশ তিনি ফেরত পেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু পুরোটা নয়। বিভিন্ন পলিসির এবং বিমা সংস্থার উপর নির্ভর করে আপনার এই ফেরত পাওয়ার অংশটুকু। তবে ৩ বছরের নীচে হলে কিছু টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম। সাধারণত অঙ্কটা এই রকম:
এবার কী ভাবে তিনি এই অঙ্কটা ভাববেন সেটা তাঁর উপর নির্ভর করবে। তাঁর হাতে আরও একটা পথ খোলা আছে। তিনি টাকা জমাতে চান, বিমার সুবিধাটাও চান, কিন্তু নতুন করে বিমা আর করাতে চান না। টার্ম হলেও না। আবার টাকাও জমাতে চান। তাঁর তাহলে বিমাটি পেড-আপ করে দেওয়াই ভাল।
খ) পেড-আপের অঙ্ক
বিমার ক্ষেত্রে প্রথম তিন থেকে পাঁচ বছর একটা অদ্ভুত সময়। শুরু করার পরে এই সময়সীমার মধ্যে প্রিমিয়াম দেওয়া বন্ধ করলে কিছুই ফেরত পাওয়া যায় না। তাই ধরেই নেওয়া যাক অভিষেক বাবু পাঁচ বছরের সীমা পেরিয়েই এসেছেন। এবার তিনি পেড-আপ করে দিলেন। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রিমিয়াম দেওয়া বন্ধ করে দেওয়াই যথেষ্ট। সারেন্ডারের ক্ষেত্রে অবশ্য বিমা সংস্থাকে জানাতে হয়। তারপর সেই সংস্থা পলিসির শর্ত মেনে কত টাকা ফেরত পেতে পারেন তা হিসাব করে সেই টাকা আপনার অ্যাকাউন্টে জমা দেবেন। পেড-আপ পলিসির ক্ষেত্রে যেহেতু বিমার অঙ্ক জড়িত তাই হিসাব করা জরুরি যে আপনার সাম-অ্যাসিওরড কত দাঁড়াবে। সেই অঙ্কটা কষা হয় এই ভাবে:
পরিবর্তিত সাম-অ্যাসিওরড = প্রাথমিক সাম-অ্যাসিওরড X ( যে ক’বছর প্রিমিয়াম দিয়েছেন/ যত বছর দেওয়ার কথা ছিল)
অভিষেক বাবুর উদাহরণই নেওয়া যাক। তিনি ৮ লক্ষ টাকার পলিসি কিনেছিলেন ১২ বছরের জন্য। কিন্তু ৬ বছর প্রিমিয়াম দিয়ে প্রিমিয়াম বন্ধ করতে চান। তাঁর সাম-অ্যাসিওরড দাঁড়াবে-
৮০০০০০X(৬/১২) = ৪ লক্ষ টাকার মতো।
মাথায় রাখবেন এই অঙ্কটা শুধু আপনার আন্দাজের জন্য। এর উপর ১২ বছর বাদে আপনি বোনাস এবং লাভের অংশও পেতে পারেন। কিন্তু তা নির্ভর করবে আপনার পলিসির শর্তের উপর। মাথায় রাখতে হবে ১৯ হাজার টাকার ত্রৈমাসিক প্রিমিয়াম ধরলে অভিষেক বাবু কিন্তু ৪ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকার বিনিয়োগ করে ফেলেছেন এই বিমার উপর! তাই যতই বোনাস ও লাভের অংশ তিনি পান না কেন, তা কিছুতেই মুদ্রাস্ফীতিকে হিসাব করলে এই টাকা অন্য ভাবে বিনিয়োগ করলে যা লাভ হত তার ধারে-কাছেও আসবে না।