বাংলাদেশের শিলাইদহের একটা বিশেষ ভূমিকা আছে। ১৮৮৯ সালের ২৫ নভেম্বর সপরিবার শিলাইদহে যান জমিদারির দেখাশোনা করার জন্য। এর পর ১৯০১ এ শান্তিনিকেতনে ব্রক্ষ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত মোটামুটি শিলাইদহে বাস করেছেন। কিছু কিছু বিরতি সহ ১৯০১-এর পর থেকে ১৯২২ পর্যন্ত শিলাইদহের বিভিন্ন জায়গায় থেকে জমিদারির কাজের তত্ত্বাবধান করেছেন। পদ্মানদীর জলধারার তরঙ্গের প্রবাহে, গ্রামবাংলার সবুজের সমারোহে সৃষ্টিশীল কবির লেখনী থেকে বেরিয়েছে অসংখ্য গান, কবিতা, প্রবন্ধ।
সেই রকমই কিছু গান নিয়ে ‘ভবানীপুর বৈকালী’ প্রতিষ্ঠানটি কলামন্দিরে উপস্থাপন করলেন ‘জমিদারি-আসমানদারি’ নৃত্যগীতি। আলেখ্যটি গান রচনার সাল তারিখ, কখনও বিভিন্ন সময়ে লেখা কিছু চিঠিপত্র – এইসব দিয়ে সাজানো হয়েছে এবং সেগুলি পড়েছেন সৌগতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রদীপ মালহোত্রা। শিল্পীদলে ছিলেন কর্ণধার প্রমিতা মল্লিকের দুশো ছাত্রছাত্রী। অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন প্রমিতা, যে কারণে সমগ্র অনুষ্ঠানটি আক্ষরিক অর্থেই মনোগ্রাহী হয়েছিল আম্তরিকতা ও নিষ্ঠায়। একুশটি গানের মধ্যে প্রমিতার কণ্ঠে দুটি একক, শৌনক চট্টোপাধ্যায় ও প্রিয়াঙ্গী লাহিড়ীর কণ্ঠে একটি দ্বৈত গান ছিল। বাকি সব গান সম্মেলক – সঙ্গে ছিল মনিপুরী, ভারতনাট্যম, কত্থক ও ওড়িশি নৃত্যমাধ্যমে সহযোগিতা।
অনেক দিন বাদে এমন উন্নতমানের একগুচ্ছ সম্মেলক গান একটি অনুষ্ঠানে শোনার সৌভাগ্য খুব কমই হয়েছে। উদাত্ত কণ্ঠে, পরিচ্ছন্ন উচ্চারণে, নিখুঁত যতিবিন্যাসে সম্মেলক গানে এমন একটা পরিমণ্ডল সৃষ্টি হয়েছিল যা স্মরণযোগ্য। যুগ্ম গানটিতে প্রাণের স্পর্শ মিললেও দুই শিল্পীই শুরুতে খুব মনোযোগী ছিলেন না। প্রমিতার কণ্ঠে ‘আজি ঝড়ের রাতে’ ও ‘পূর্বাচলের পানে তাকাই’ বহুকাল মনে থাকবে। প্রথম গানটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল পূর্বিতা মুখোপাধ্যায় ও রিন্টু দাসের মনিপুরী নৃত্যের মাধ্যমে রাধাকৃষ্ণের অভিসারের বিষয়বস্তু যা এককথায় চমৎকার। বিশেষ করে পূর্বিতার দেহভঙ্গিমা মুগ্ধ করে। মাঝে মাঝে দুটি নৃত্য মাধ্যমকে একসঙ্গে প্রদর্শন করে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। আবার শেষ গান ‘আসা যাওয়ার পথের ধারে’ গানটিতে চারটি নৃত্যধারা একসঙ্গে ব্যবহার করায় বেশ উপভোগ্য হয়েছিল। উপরের দুই শিল্পী ছাড়া নৃত্যে আরও ছিলেন মনোজিৎ সাহা, সৌরভ রায়, শাশ্বতী গড়াই ঘোষ ও এঁদের সহশিল্পীরা।
মন কাড়ে
সম্প্রতি ত্রিগুণা সেন মঞ্চে ‘সঙ্গীত সৌরভ’ আয়োজন করেছিল এক সুন্দর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। অনুষ্ঠানে সংস্থার শিল্পীরা শোনালেন রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন পর্যায়ের গান। এ দিন প্রতিটি গানই ছিল সুনির্বাচিত। তার মধ্যে বিভিন্ন চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত কিছু রবীন্দ্রগানও ছিল শিল্পীদের নির্বাচনে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সংস্থার খুদেরা শোনাল গান ও পাঠ। ছিল নৃত্যও। পরিচালনায় ছিলেন রিকু মজুমদার।