রসিক কর্তা

ছেলেমানুষি, সরলতা অদ্ভুত কিছু কাতরতা সে বছর গানের প্রশংসা হচ্ছে, কিন্তু তেমন হিট হচ্ছে না কিছুতেই। তখন বম্বেতেই। ঠিক করলেন খার-এ রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়ে ঠাকুরের আশীর্বাদ নেবেন। এ দিকে মন্দিরে ঢোকার আগে সঙ্গী দেখলেন, কর্তা তাঁর জুতো জোড়া খুলে এক পাটি এক জায়গায় রাখলেন, অন্য পাটিটি নিয়ে বেশ কিছু দূরে গুঁজে দিলেন জুতোর গাদায়। তিনি তো অবাক! — ‘‘ও কী কর্তা? এ কী করেন?’’ উত্তর এল, ‘‘ওরে বাবা, শোনোনি, আজকাল জুতো-চোরের উপদ্রব খুব।’’

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০৩
Share:

ধৈর্যশীল কর্তাবাবু। ছবি: অভিজিৎ দাশগুপ্ত

জুতো চোর
সে বছর গানের প্রশংসা হচ্ছে, কিন্তু তেমন হিট হচ্ছে না কিছুতেই। তখন বম্বেতেই। ঠিক করলেন খার-এ রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়ে ঠাকুরের আশীর্বাদ নেবেন।
এ দিকে মন্দিরে ঢোকার আগে সঙ্গী দেখলেন, কর্তা তাঁর জুতো জোড়া খুলে এক পাটি এক জায়গায় রাখলেন, অন্য পাটিটি নিয়ে বেশ কিছু দূরে গুঁজে দিলেন জুতোর গাদায়।
তিনি তো অবাক! — ‘‘ও কী কর্তা? এ কী করেন?’’
উত্তর এল, ‘‘ওরে বাবা, শোনোনি, আজকাল জুতো-চোরের উপদ্রব খুব।’’
সঙ্গী বললেন, ‘‘চোর যদি দুটো জুতোই খুঁজে নিয়ে যায়?’’
কর্তা হেসে বললেন, ‘‘আরে ভাই, চোর যদি এত পরিশ্রম করে, তাইলে জুতো জোড়া তার নিয়ে যাওয়াই উচিত।’’

Advertisement

গল্পের গন্ধ

Advertisement

বিকেল বেলা। বম্বের বাড়িতে খাবার টেবিলে একলা বসে আছেন শচীনকর্তা। চেয়ারে পা গুটিয়ে।

পায়ে মোজা। পরনে লুঙ্গি, এক কাপ চা, এক ফালি টোস্ট দিয়ে মধু খাচ্ছেন।

স্ত্রী মীরাদেবী তখন কলকাতায়। টেবিলের ওপরে ব্রাউন পেপারে কভার দেওয়া একটা খাতা পড়ে। তার ওপরে হিন্দিতে লেখা— ‘বিবাগী ভ্রমরা’।

এক পরিচিত এসে পড়লেন তারই মাঝে। সব দেখেশুনে তিনি বললেন, ‘‘এটা কি কোনও নতুন ছবির গল্প নাকি? সুর দিচ্ছেন?’’

কর্তা উত্তর দিলেন, ‘‘আর বোলো না, আমার একটা গল্প মনে ধরে ছিল। সেটা এতে আছে। এক প্রযোজককে শোনালাম। তার ভালও লাগল। কিন্তু বলে কিনা কিছু কিছু পাল্টাতে। আমি কোথায় গল্পের মধ্যে চন্দনের গন্ধ দিতে চাই, আর প্রযোজক চান পেঁয়াজ-রসুনের গন্ধে ভরে দিতে। আমি বলে দিয়েছি, থাক, গল্প দেব না।’’

ফিফটি ফিফটি

কলকাতা থেকে এক সাহিত্য-পত্রিকার সম্পাদক গিয়েছেন কর্তার বম্বের বাড়ি।

শচীনদেব তখন সিনেমার জন্য গল্প খুঁজছেন। সম্পাদককে বললেন সে-কথা। — ‘‘দেব আনন্দ মানে আমার কথা। ভাল গল্প পেলে ওকে বলব ছবি করতে। তবে গল্পটা কিন্তু ফিফটি-ফিফটি হতে হবে। আশি-কুড়ি, ষাট-চল্লিশ হলে চলবে না।’’

এ সব কী বলছেন কর্তা?

পরে বোঝা গেল, ফিফটি-ফিফটি মানে, নায়ক-নায়িকাকে সমান-সমান গুরুত্ব দেওয়া ছবি। কেউ কম, কেউ বেশি এমন নয়।

গোরুর বিস্কুট

গড়িয়াহাটে কোন এক ছোট ছেলে নাকি ফুটপাথে বিস্কুট বেচে, তার কাছ থেকে বিস্কুট কিনবেন কর্তা। জেদ, কিনবেন তো কিনবেনই। এবং ওর কাছ থেকেই। যে জন্য বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে তেল পুড়িয়ে তাকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

বহুক্ষণ বাদে ছেলেটিকে পাওয়া গেল। এক সের বিস্কুটের অর্ডার দিয়ে কর্তা তাকে হঠাৎ বললেন, ‘‘এই দ্যাখ ছ্যামড়া, আমি কিন্তু বৈষ্ণবের পোলা, গোরু খাই না, আমারে গোরু দিছ্ না।’’ এ বারেও সঙ্গের বন্ধুটি অবাক! হচ্ছে তো বিস্কুটের কথা, গোরু এল কোত্থেকে?

ব্যাখ্যাটা করলেন কর্তাই। তাতে বোঝা গেল, ছেলেটি যে বিস্কুট বিক্রি করে তা হল নানান পশুপাখির আকারের। সেখানে যদি গোরুর ছাপ্পা থাকে, সে তাঁর চলবে না!

চোরের লজ্জা

প্রায় আধঘুমে নিজের ঘরে শুয়ে আছেন কর্তা। দুপুর-বিকেলের এমন একটা সময় এ ভাবেই বিশ্রাম নিতেন তিনি।

হঠাৎ খসখসানি পায়ের শব্দ ঘরে। পরিচিত এক জন ঘরে ঢুকল। পা টিপে টিপে।

কর্তা দেখলেন, ছেলেটি ধীরে ধীরে আলমারির ড্রয়ারটি খুলল। এ দিক-ও দিক দেখে ড্রয়ারে রাখা কর্তার মানিব্যাগ থেকে কিছু টাকা নিয়ে আবার ব্যাগটি সেখানে রেখে কেটে পড়ল। পুরো ব্যাপারটা খেয়াল করলেন কর্তা, কিন্তু কিচ্ছুটি বললেন না। বরং চুপ করে ঘুমের ভান করে পড়ে রইলেন।

বেশ কিছুক্ষণ বাদে এক আত্মীয়াকে ঘটনাটি বলতেই তিনি রেগে অবাক হয়ে বললেন, ‘‘সে কী, আপনি ওকে কিছু বললেন না?’’ কর্তা বললেন, ‘‘আরে, বললে তো ও লজ্জা পেয়ে যেত, না? তাই বলিনি কিছু।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement