শেক্সপিয়রের ‘আ মিডসামার নাইটস ড্রিম’ একাধিকবার কলকাতায় মঞ্চস্থ হয়েছে-কখনও বাংলায়, কখনও ছত্তীসগড়ী হিন্দিতে। কখনও বা লন্ডনের নাট্যদলের বহু ভাষায় প্রযোজনা। পরিচালকেরাও বাঘা বাঘা উৎপল দত্ত, হাবিব তনবির বা টিম সাপল। এগুলির পাশেই নতুন প্রযোজনা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় রেপার্টরি থিয়েটারের ‘ফাগুন রাতের গপ্পো’ (নাটক সৌমিত্র বসু, পরিচালনায় তরুণ প্রধান)। মূল নাটকের যে কাব্য বিশেষত তিনটি প্রেমজুটির সংলাপে ও প্রলাপে তা এই প্রযোজনায় অবিচল থেকেছে তাই নয়, নানা ধরনের লোকনাট্য, লোকগান ও সঙ্গীতের প্রয়োগে মূল নাটকের রোমান্স, ফ্যান্টাসি ও স্বপ্নজগৎকে একটি নিটোল দেশজ রূপে গ্রথিত করেছেন পরিচালক। তিন শ্রেণির চরিত্রদের মধ্যে সবচেয়ে সুষ্ঠু রূপায়ণ পরিদলের। বিশেষ করে পাক (ভাস্কর মুখোপাধ্যায়) আর ওবেরণের (কল্লোল দে), সুদক্ষ দেহকসরত, সেই সঙ্গে তাদের জাদুবলে প্রেমার্ত যুবক-যুবতীদের মজাদার বিভ্রম জমিয়ে তোলে নাটকের কৌতুকদীপ্ত ফ্যান্টাসি। অভিজাত শ্রেণ্রি ও মিস্ত্রি-মজুরদের চরিত্রায়ণ তুলনায় নিস্প্রভ। এমন লোকনাট্য-প্রবণ প্রযোজনায় কুইন্সের (সমরেশ বসু) নাট্যদলের ভাষায় ও আচরণে সরল অথচ কমিক গ্রাম্যতা প্রত্যাশিত ছিল। এই নাটকের সবচেয়ে স্মরণীয় চরিত্র বটম (বুদ্ধদেব দাস) তেমন কোনও অভিঘাতে দর্শকের নজর কাড়েন।
টাইটানিয়ার (মোনালিসা চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে তার প্রেমদৃশ্যে বটমের চেয়ে বেশি কৃতিত্ব তার চমৎকার মুখোশের। তবে ডিউকের দরবারে নাটকের দৃশ্য প্রযোজনার অন্যতম সাফল্য। প্রযোজনায় গুরুত্ব পেয়েছে একক অভিনয়ের চেয়ে সুশৃঙ্খল মঞ্চচারণায় দলগত অভিনয়। ফলে সুন্দর বর্ণময় পোশাকে (নিলীমা বিশ্বাস, পোলান কুণ্ডু) দৃশ্যময়তা বেড়েছে আর সব কুশীলবই যুবা-যুবতী বলে তারুণ্যের প্রাণপ্রাচুর্যে উদ্দীপ্ত এই প্রযোজনা।