শেক্সপিয়রের গোল্ডেন কমেডিগুলির মধ্যে অন্যতম ‘টুয়েলফথ নাইট’-এর পূর্ণাঙ্গ প্রযোজনা কলকাতায় এর আগে দেখা যায়নি। ব্রিটিশ কাউন্সিলের সৌজন্যে লন্ডনের ফিল্টার থিয়েটারের এই নাটকের অনুষ্ঠান তাই এক স্মরণীয় ঘটনা। অনেক কাটছাট করলেও পরিচালক (শন হোমস) নাটকের মূল গল্প এবং বিখ্যাত উক্তিগুলি অক্ষত রেখেছেন। নাটকে কমেডীয় রঙ্গের দুটি প্রধান বিষয় পুরুষ সিজারিওর ছদ্মবেশে ভায়োলা এবং একই রকম দেখতে তার যমজ ভাই সেবাস্টিয়ানকে নিয়ে লিঙ্গ পরিচিতির ধন্ধ আর পিউরিটান গোঁড়ামির জন্য অলিভিয়ার কর্মচারী ম্যালভোলিওর হেনস্থা। তার এই হেনস্থা যাদের চক্রান্তে সেই মারায়া স্যার টোবি বেলচ, অ্যানডু এগিউচিক এবং ম্যালভোলিওর নানা কীর্তিকলাপে মঞ্চ মেতে ওঠে কৌতুক হুল্লোড়ে। অনেক অভিনব নাট্য-চমক আর তাৎক্ষণিক হাসির খোরাক দর্শকদের মাতিয়ে রাখে। হ্যারি জার্ডিন (অরসিনোয়/এগিউচিক) নাটক শুরু করেন অনাড়ম্বর অ-নাটকীয় উচ্চারণে। দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় ছাড়াও মঞ্চের সুশৃঙ্খল কমিক নৈরাজ্যের তিনিই যেন মূল গায়েন। দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় করেছে – স্যান্ডি ফস্টার, অ্যামি মার্চেন্ট। অভিনয়ে সকলকে টেক্কা দিয়েছেন মার্চেন্ট।
সারাক্ষণ পুরুষ বেশে থেকেও আসল পুরুষ হয়ে ওঠে যখন সে সিজারিও থেকে চকিতে সেবাস্টিয়ান হয়ে গেল। যদিও শেষ দৃশ্যে একাই দ্বৈত ভূমিকায় উপস্থিত থাকায় পরিচিতি-বিভ্রান্তির কমিক জমেনি। নাটকের অন্যতম নায়িকা রোনকে আডেকলুয়োজোর অলিভিয় অনেকটাই নিষ্প্রভ।
মঞ্চে হুল্লোড়, উৎসব মত্ততা, রক সঙ্গীত, ব্যঙ্গ-রঙ্গ সব কিছু মিলিয়ে এই প্রযোজনা। যা সমকালীন। মৃত্যুর চারশো বছর পরে এই নাটকের মঞ্চায়নে যেন শেক্সপিয়রের নবজন্ম হল। ইলেকট্রনিক ও বৈদ্যুতিন বাদ্যযন্ত্র মাইক, ট্র্যানজিস্টর, মোবাইল ফোন এবং সাউন্ডবক্সের সমাবেশে রক কনসার্টের মঞ্চে অভিনেতা-অভিনেত্রী, বাজনাদার, শব্দযন্ত্রী সব মিলে মিশে একাকার।