অবাস্তবের আয়নায় যখন বাস্তবের প্রতিফলন ঘটে, কেমন হয় তার পরিণতি? নাট্যকার ও নির্দেশক শেখর দাশগুপ্তের ‘অবাস্তবে বাস্তব’ নাটকটিতে এক অসাধারণ ঘটনা-বিন্যাস উঠে এসেছে, যা দর্শকদের প্রত্যাশা পূর্ণ করে। সংলাপে ঠাসা বুনন, সাবলীল অভিনয় ও সংযত নাট্যরূপে এই নাটকের কাহিনি এক অনন্য পারিবারিক দলিল হয়ে ওঠে। মনে হয় এ ছবি আমাদের সকলেরই চেনা ও জানা।
অম্বরবাবু তাঁর স্ত্রী সহ তিন ছেলে, বউ ও নাতিদের রেখে ইহলোক ছাড়েন। ছেলে-বউদের কথা অনুযায়ী সব টাকাপয়সা তাঁদেরই হাতে তুলে দিয়ে যান। এ দিকে মেজো ছেলের শ্যালক সন্দীপবাবুর পরামর্শে অন্যরা সেই বাড়ি প্রমোটারের হাতে তুলে দেবার পরিকল্পনা করেন। ......কাহিনি দ্রুত বদলায়।
অন্য দিকে অম্বরবাবুর রক্ত জল করে তৈরি করা বাড়ি বিক্রি রুখতে কখনও তাঁর মৃত বেয়াই অজিতবাবু ও বেয়ান রমলার সঙ্গে আলোচনা করেন।
আবার কখনও তিনি নিজেই সন্দীপবাবু ও তার পরিচিত প্রমোটার কার্তিক সামন্ত ও অশোক সিংহকে নানা ভৌতিক কাণ্ড করে ভয় দেখাতে থাকেন। দাঁড়িমামা, যিনি প্রতিমাদেবীর ভাই, যে কোনও সূত্রে খবর পেয়ে কলকাতায় এসে বৃদ্ধাশ্রমে দিদির সঙ্গে দেখা করে তাঁর দুর্দশার কথা শোনেন এবং তাঁকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান।
অম্বরবাবুও তাঁর নাতি-নাতনিকে জানিয়ে দেন যে ঠাকুমাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার মূল মদতদাতা পরিবারের কে।
দর্শকদের উত্তেজনার পারদ কখনও বাড়ে, কখনও কমে। নাটকের শেষে দর্শকের চোখে জল চিকচিক করে। শেখরবাবুর নির্দেশনা এখানেই সফল।
অনিমেষ তরফদার, সুনীল নস্কর, প্রসেনজিৎ সমাদ্দার, দিব্যেন্দু সাহা, শুভময় মজুমদার, ভোলানাথ ঘোষাল সহ প্রত্যেকেই সুন্দর অভিনয় করেছেন।
অন্য দিকে সুস্মিতা মিত্র, মমতা সাহু, মৌমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কৃষ্ণা সমাদ্দার, শতাব্দী বসু অভিনয় করেছেন পাল্লা দিয়ে। মঞ্চ পরিকল্পনায় নীলাভ চট্টোপাধ্যায়, মঞ্চসজ্জায় মণীন্দ্র বেরা, রূপসজ্জায় ইব্রাহিম, আবহে শেখর দাশগুপ্ত, আলোয় কল্যাণ ঘোষ।
একটি কথা না বললেই নয়। দু’ একজনের উচ্চারণে এত অস্পষ্টতা কেন?
দর্শকাসনে বসে তাঁদের অভিনয় তো শোনাই যাচ্ছিল না। পরবর্তী অভিনয়ে নিশ্চয়ই শুধরে নেবেন।