প্র: বয়স বাড়লেই পিএসএ (প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন) টেস্টটি এখন প্রায়ই করতে বলেন ডাক্তাররা। কেন?
উ: এটা থেকেই বোঝা যায় প্রস্টেট ক্যানসার হয়েছে কি না। পিএসএ-র মাত্রা ৪ অবধি হলে ঠিক আছে। তার বেশি হলে মুশকিল।
প্র: তার মানেই কি ক্যানসার?
উ: সব সময় নয়। প্রস্রাবের ইনফেকশন থেকেও এমনটা হতে পারে। আবার প্রস্টেট বড় হয়ে গেলেও পিএসএ-র মাত্রা বেড়ে যায়। সুতরাং পিএসএ-র মাত্রা বেশি এলেই ভয় পাবেন না। তবে সতর্ক হতে হবে।
প্র: কী ধরনের সতর্কতা নিতে হবে?
উ: তখন প্রতি মাসে এক বার পরীক্ষাটি করে দেখতে হবে মাত্রা কেমন থাকছে। খুব বেশি বাড়লে বায়োপসি করে দেখতে হতে পারে। তাতে কিছু না পেলে এমআরআই-ও করা হয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য। কিন্তু যদি দেখেন মাত্রা খুব বেশি আসছে, তবে কিন্তু ব্যাপারটা সম্ভাব্য ক্যানসার।
প্র: আগে জানতাম প্রস্টেট ক্যানসার তেমন কিছু নয়। এখন শুনছি এটাও খুব মারাত্মক আকার ধারণ করে?
উ: যে কোনও ক্যানসার পুষে রাখলে তার ফল মারাত্মক হতে পারে। তাই বয়স হলেই পিএসএ-টেস্টটি বছরে এক বার করে নিতে বলা হয়। যাতে আগেভাগে টের পাওয়া যায়। তাতে চিকিৎসাও তাড়াতাড়ি শুরু করা যায়।
প্র: তার মানে কমবয়সিদের প্রস্টেট ক্যানসার হয় না?
উ: হয়। কিন্তু বয়সের সঙ্গে প্রস্টেট ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে। কোথাও একটা সীমারেখা টানতে হবে। তাই বলা হয় পঞ্চাশ পেরোলেই বছরে এক বার করে পিএসএ টেস্টটি করা প্রয়োজন।
প্র: পিএসএ টেস্ট তো সব সময় করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে অন্য কোনও লক্ষণ দেখে কি বোঝার উপায় আছে, প্রস্টেটে সমস্যা শুরু হচ্ছে?
উ: যদি দেখা যায় বার বার প্রস্রাব হচ্ছে, রাতে বার বার উঠতে হচ্ছে, নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারছেন না বা রাতে বাথরুম পর্যন্ত যাওয়ার আগেই প্রস্রাব হয়ে যাচ্ছে, তবে সতর্ক হতে হবে। প্রস্রাবে জ্বালা হচ্ছে কি না, তা-ও খেয়াল করতে হবে। প্রস্টেট বড় হয়ে মূত্রথলির ওপর চাপ ফেলে এত সব কাণ্ড ঘটায়। তবে ক্যানসার কি না তা বোঝার জন্য পিএসএ টেস্ট করা আবশ্যক।
প্র: প্রস্টেট তো বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্ফীত হয় শুনেছি?
উ: সমস্যা তৈরি করলে ওষুধ দিয়ে প্রস্টেটের আয়তন কমিয়ে দেওয়া যায়। দরকারে মাইক্রোসার্জারি করা হয়।
প্র: ধরুন এ ধরনের কোনও সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাহলেও কি পিএসএ টেস্ট করে যেতে হবে?
উ: অনেক ক্যানসারের প্রাথমিক অবস্থায় কোনও উপসর্গ বাইরে থেকে টের পাওয়া যায় না। অ্যাডভান্স স্টেজে গড়ালে তখন নানা সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যা থাকুক আর না-ই থাকুক, বছরে এক বার টেস্ট করিয়ে নিতে পারলে তো নিশ্চিন্ত।
প্র: প্রথম দিকে ধরা পড়লে কি পুরোপুরি সেরে যায়?
উ: একেবারে প্রথম দিকে ধরা পড়লে পুরো প্রস্টেটটাই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। তাতে ক্যানসার নির্মূল করা সম্ভব।
প্র: আর যদি দেরি হয়ে যায়? সে ক্ষেত্রে তো ক্যানসার আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
উ: প্রস্টেট ক্যানসার অ্যাডভান্স স্টেজে গড়ালে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বেরোতে পারে। তখন রোগী অ্যানিমিয়ায় ভোগেন। তা ছাড়া এই ক্যানসারের মুশকিল হল এটি হাড়ে ছড়িয়ে যায়। তখন হাড়ে তীব্র যন্ত্রণা হয়। এমনও দেখা যায় যে হাড় দুর্বল হয়ে ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু রোগী জানতেই পারে না তার প্রস্টেট ক্যানসার হয়েছে। হাড়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ব্যাপারটা ধরা পড়ে।
প্র: সে ক্ষেত্রে উপায়?
উ: আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে তখন আর প্রস্টেট বাদ দিয়ে লাভ হয় না। সেক্ষেত্রে হরমোন থেরাপি বা কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। তাতেই ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে আসে।
প্র: রোগী সুস্থ হয়ে যান?
উ: অনেক দিন পর্যন্ত ভাল থাকতে পারেন।
প্র: প্রস্টেট ক্যানসার আটকানোর কোনও উপায় আছে?
উ: বয়সের সঙ্গে প্রস্টেট ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে। পরিবারে অন্য কারও হলে প্রস্টেট ক্যানসার হতে পারে। এই দুটো বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সেটা বুঝে বছরে এক বার করে পিএসএ টেস্ট করতে হবে। তা ছাড়া ফ্যাট জাতীয় খাবার খেলে প্রস্টেট ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে। কিছু ওষুধও আছে, অনেক দিন ধরে খেলে ক্যানসারের সম্ভাবনা কমায়।
প্র: কাদের জন্য এই ওষুধ?
উ: বয়স ৫০ পেরিয়েছে এবং প্রস্টেটের আকার বাড়তে শুরু করেছে, সঙ্গে সমস্যাও শুরু হয়েছে তাদের জন্য এই ওষুধ। খেলে ভাল থাকবে।
যোগাযোগ-৯৮৩১১৭৭১৮৮