(বাঁ দিক থেকে) পল ম্যাকার্টনি, রিংগো স্টার, জন লেনন, জর্জ হ্যারিসন
বিটলদের বয়স কত?
চাঁদের ওজন কত, জেনে কাজ আছে?
চাঁদের কথা এল কারণ বিটলরা বিটল হওয়ার আগে যে-সব নামে ব্যান্ড বেঁধেছে, তার একটা নাম জনি অ্যান্ড দ্য মুনডগস। অর্থাৎ জনি (মানে জন লেনন) ও চাঁদ-কুকুররা।
তখন বিটলস ড্রামবাদক রিংগো স্টার দলে ভেড়েনি। চাঁদ-কুকুর বলতে জন লেনন, পল ম্যাকার্টনি ও জর্জ হ্যারিসন। চাঁদের কথা আরও এল কারণ ১৯৬০-এর অগস্টে সেই যে প্রথম ‘বিটলস’ নাম নিয়ে চার মূর্তি (পরবর্তীতে ফ্যাব ফোর বা অবাক চার হিসেবে বিশ্ব তোলপাড় করা) জার্মানির হামবুর্গের লাল বাতি আখড়ার গান ধরল তা বলতে গেলে (সমরেশ বসুর ভাষা ধার করে) অমাবস্যায় চাঁদের উদয়।
অমাবস্যা কেন?
কারণ বিটলসদের ইতিহাস লিখতে গিয়ে মার্ক লিউইসন সেই গোধূলি মুহূর্তটিকে এ ভাবে বর্ণনা করেছেন: ‘‘ওরা ১৭ অগস্টের সাঁঝবেলায় যখন হামবুর্গে ঢুকল তখন বনিতাপল্লি জেগে উঠছে… নিয়ন আলোয় বেসাতির ঘোষণা চার দিকে, আর স্বল্প ও স্খলিতবসনারা দোকান সাজিয়ে বসে ব্যবসা খুঁজছে।’’
যে-ক্লাবে গান ধরল ছোকরারা, সেই ইনড্রা ক্লাবটিও সদ্য স্ট্রিপটিজ ক্লাব থেকে গান আখড়ায় পাল্টানো হয়েছে। যৌনতা ও নেশায় আচ্ছন্ন এহেন হামবুর্গে দু’দুটো বছর কাটাতে হয়েছে লেনন, ম্যাকার্টনি ও হ্যারিসনকে। ড্রামে সঙ্গত করছে স্টুয়ার্ট সাটক্লিফ।
বেচারা স্টুয়ার্ট হঠাৎ একদিন হার্ট ফেল করে মারা গেল!
সারা রাত ধরে গাইতে বাজাতে হয়েছে বিটলদের। আর সে-জন্য শক্তি আর আনন্দ জোগাতে লেগেছে ‘প্রেলুডিন’ ড্রাগ।
তোর গিটারটা বইতে পারি?
১৯৬০ আর ১৯৬১ এই দু’বছর বিটলসদের দফায় দফায় হামবুর্গ যাওয়া ও সেখানে থাকাটা ওদের গানের জীবনে শুক্লপক্ষের কাজ করেছে।
তখনও ইংল্যান্ডে প্রায় অপরিচিত লিভারপুলের এই দলটিকে স্বদেশের প্রথম অনুষ্ঠানে প্রচার করা হচ্ছে এ ভাবে: দ্য বিটলস! ডিরেক্ট ফ্রম হ্যামবুর্গ!
সেই গল্প দিয়েই বিটলদের উত্থান এবং আরও উত্থানের বৃত্তান্ত শোনানো যায়।
গল্পটা শুনিয়েছেন বিটলদের বাল্যবন্ধু টোনি ব্র্যামওয়েল, যিনি দলটার ভেঙে পড়া অবধি ওদের সর্বক্ষণের সঙ্গী।
লিখছেন—
‘‘১৯৬০-এর ২৭ ডিসেম্বরের রাতে বরফ পড়েছিল। লিথারল্যান্ড টাউন হল-এর কনসার্ট শুনব বলে বাসে চড়েছি।
ক্রিসমাসের ছুটিতে হামবুর্গ থেকে আসা বিটলস নামের নতুন দলটার গান। এখানে-ওখানে যেটুকু যা বিজ্ঞাপন দেখেছি তাতে ওদের জার্মান ছাড়া কিছু ভাবার কারণ নেই।
৮১ নম্বর ডবলডেকার বাসে দুদ্দাড় করে চড়ে দোতলার সিটে গিয়ে বসতে দেখি আমার পাশের সিটে বসে আমার পুরনো বন্ধু জর্জ হ্যারিসন, সঙ্গে গিটার।
বেশ ক’মাস ওঁর সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ নেই, তাই বুঝলাম না শীতের রাতে গিটার নিয়ে কোথায় চলেছে।
আমায় দেখে এক গাল হেসে জিজ্ঞেস করল, ‘কী রে টোনি, কেমন আছিস?’
উল্টে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুই কোথায় চললি, জর্জ?’
ও বলল, ‘লিথারল্যান্ড টাউন হল। আজ রাতে ওখানে বাজাচ্ছি আমরা।’
আর তখনই আমার মাথায় খেলল, ‘ডিরেক্ট ফ্রম হ্যামবুর্গ!’ রহস্যটা।
অবাক হয়ে শুধোলাম, ‘তার মানে বিটলস নামের জার্মান গ্রুপটা তোরাই?’’ জর্জ মাথা নেড়ে বলল, ‘ডিরেক্ট ফ্রম লিভারপুল, বৎস!’
আমি পকেটের পাঁচটা শিলিং ঝাঁকিয়ে মনে মনে ভাবলাম, এ দিয়ে নতুন একটা রেকর্ডই তো কিনতে পারি, তা’হলে…’
জর্জের গিটারের দিকে তাকালাম।
মুখে বললাম, ‘তোর গিটারটা কি বইতে পারি? তা’হলে তো বিনি পয়সায়…’ জর্জ আমাকে কথা শেষ না করতে দিয়ে বলল, ‘হার্গিস পারিস! চল।’’
পায়ে ছুঁচলো জুতো, মাথায় ক্রিম
ইস্কুল-পড়ুয়া কিশোর টোনি ব্র্যামওয়েলের তখন স্বপ্নেরও অতীত সে কী এক ইতিহাসের সাক্ষী হতে চলেছে।
ডবলডেকার বাসের মাথায় চড়ে এক জন বিটলের সঙ্গে সে লিভারপুলে বিটল-চতুষ্টয়ের প্রথম অনুষ্ঠানে যাচ্ছে। আর ক’টা দিন পরে যে বিটলদের নামে দেশ-দুনিয়ায় স্টেডিয়াম ভরে যাবে। অল্পবয়সি ছেলেমেয়েতে টইটম্বুর হবে বন্দরের পর বন্দর। রেকর্ড বিক্রির তালিকা ছেয়ে থাকবে তাদের গানে। ছায়াছবির তারকা আর প্রমোদতরণীতে ছেয়ে যাবে তাদের দিনরাত। ডাক পড়বে বাকিংহাম প্যালেসে। তাদের মানা হবে জীবন্ত কিংবদন্তি!
সেই প্রথম আবির্ভাব নিয়েও অ্যাদ্দিনে নানান কিংবদন্তি গড়ে উঠেছে। যার একটা হল, টাউন হল সে দিন ভিড়ে ভেঙে পড়েছিল!
ব্র্যামওয়েল অবশ্য তাঁর স্মৃতিকথায় বলছেন, সেটা ঠিক নয়। হল হয়তো পুরোপুরি ভরেনি, তবে সে দিনের সেই জলসায় শ্রোতাদের যে-হর্ষধ্বনি অবিরত জারি ছিল তাতেই টাউন হল প্রায় ধসে পড়ে।
ইংল্যান্ডের কোথাও কেউ অমনটি আগে দেখেনি। কারও বুঝতে বাকি থাকেনি ধ্বনির এক নবতরঙ্গ এসেছে দুনিয়ায়।
বিটলরা গোটা স্টেজ জুড়ে নেচেছে, গেয়েছে সে-রাত।
তাদের পরনে চামড়ার জ্যাকেট আর জিনস্। পায়ে ছুঁচলো জুতো, মাথার চুল তখনও ক্রিম মাখিয়ে উল্টো করে আঁচড়ানো (যা ক’দিন বাদে ঝাঁকরা, কপালঢাকা বিটলস-কাটে বদলে যাবে)।
আর ওদের লম্বা আট ঘণ্টার বিরামহীন আসরে গানের পাশাপাশি আরও একটা জিনিস ক্রমান্বয়ে ঠিকরে বেরোলো— অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তর ভাষায় বলতে গেলে— যৌবন বাউল।
গানের সঙ্গে একটা ফ্যাশন-স্টেটমেন্টও করেছিল বিটলরা। জানিয়ে দিয়েছিল যে এলভিস প্রেসলির মতো এক নতুন আওয়াজ আনছে তারা জগতে। নিজেদের মৌলিক রচনায়।
ফাঁকে ফাঁকে তারা হয়তো গেয়ে শুনিয়েছে এলভিস, বাডি হলি, এডি ককরান, চাক বেরি, লিটল রিচার্ডের কম্পোজিশন।
‘হয়তো’ বলতে হল, কারণ বরফে মোড়া ১৯৬০-এর ২৭ ডিসেম্বরের অনেক স্মৃতিই এখন স্বপ্ন ও কিংবদন্তি ঘেরা।
উচ্ছল তরঙ্গ (বাঁ দিকে থেকে: রিংগো স্টার, জর্জ হ্যারিসন, জন লেনন, পল ম্যাকার্টনি)
৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৪
আমরা কলকাতায় বসে বিটলদের আবিষ্কার করি তাদের পুনরাবির্ভাব (না কি পুনর্জন্ম?) থেকে।
কাগজে কাগজে ফ্যাব ফোরের ছবি বড় বড় রাজনৈতিক খবরের মাঝখানে। যে রকমটা আগে দেখা গেছে বলে মনে হয় না।
বলা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় গানের বাজারে ইংরেজ হানাদাররা চড়াও হয়েছে।
গত দু’বছরে ব্রিটেন কাহিল ছিল ‘বিটলম্যানিয়ায়’। এখন যুক্তরাষ্ট্রে চলছে ‘ব্রিটিশ ইনভেনশন’।
আক্রমণ বলে আক্রমণ!
১৯৬৪-র ৭ ফেব্রুয়ারি বিটলরা যখন লন্ডনের হিথরো এয়ারপোর্ট ছাড়ছে, তখন চার হাজার ভক্ত সেখানে জড়ো হয়ে গলা ফাটাচ্ছে। যখন নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্টে নামছে, সেখানেও তিন হাজার ছেলেমেয়ের ভিড়।
দু’দিন পর, ৯ ফেব্রুয়ারি।
মার্কিন টিভি-র দ্য এড স্যালিভান শো-এ ওদের লাইভ গানবাজনা। কথাবার্তা দেখল ও শুনল সাত কোটি তিরিশ লাখ দর্শক।
তখনকার মার্কিন জনসংখ্যার যা ৩৪ শতাংশ!
বিটলদের জীবনীকার জোনাথন গোল্ড লিখছেন যে নিয়েলসন রেটিং-এ এটাই নাকি কোনও মার্কিন টিভি প্রোগ্রামের সর্ববৃহৎ দর্শকসমাবেশ।
১৯৬৪-র সেই ৯ ফেব্রুয়ারির সুবর্ণজয়ন্তী পূর্ণ হল এ বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি।
চৌত্রিশ দিনে সে বার বত্রিশটা শো করেছিল বিটলরা। সবখানে দর্শকসংখ্যা চোদ্দো থেকে বিশ-বাইশ হাজার।
এর পর ’৬৫ ও ’৬৬-তে আরও দুটো মার্কিন সফর করেছিল। যখন ওদের সব গানই প্রায় ঢাকা পড়ে যায় বিটলম্যানিয়ার সমুদ্রগর্জনে।
এ নিয়ে চতুর্থ বিটল রিংগো স্টারের অপূর্ব রসিকতা আছে। বলেছে: ‘‘সেটাই মহৎ সত্য। (ওই চিৎকারে) কেউ আমাদের শুনতে পায়নি, আমরা নিজেরাও না। আমার তো জান কালি হচ্ছিল রিদম ধরে রাখতে, টাইমিং-এরও ফর্দাফাই। খারাপ হওয়ার আর কী বাকি ছিল!’’
১৯৬৬-র তুলকালাম মার্কিন সফরই বিটলদের শেষ সফর।
ওই হইচই, ওই পাগলামি, ওই উথালপাথাল শব্দঝড় চিরকালের মতো ওদের জলসার জীবনে ইতি টেনে দিল; ওরা সেঁধিয়ে গেল স্টুডিয়ো রেকর্ডিং-এর জীবনধারায়। এবং পপ মিউজিক ও গান রেকর্ড করার শিল্পকে কল্পনার শেষ উচ্চতায় নিয়ে গেল।
অবশ্য ’৬৬-র মার্কিন সফর শেষ করে ফিরে আসার আগে একটা কাজ ওরা করে এসেছিল।
লস এ়ঞ্জেলেসে দেখা করতে যায় ওদের ছেলেবেলা, কিশোরবেলা ও সঙ্গীতজীবনের নায়ক এলভিস প্রেসলির সঙ্গে!
এক বান্ডিল গাঁজা ও বব ডিলান
এলভিসকে মুখোমুখি দেখে পল ম্যাকার্টনির মনে না পড়ে উপায় ছিল না স্কুলের সেই দিনটা, যে দিন প্রথম পপ-এর রাজার একটা ফোটো হাতে এল।
ম্যাকার্টনি বলছে: ‘‘ছবিটা দেখে তো আমি ধাঁ! কেউ যেন আমায় ছক্কা হাঁকিয়েছে। ওই মুহূর্ত থেকে আমার পড়াশুনো গোল্লায় গেল। আমার শুধু একটাই ধ্যানজ্ঞান— আমায় এলভিস হতে হবে।’’
শেষ মার্কিন সফরে যদি এলভিসকে দেখা হল তা হলে প্রথম সফরে কোন গুরুর সাক্ষাৎ?
বলতে নেই, স্বয়ং গুরুই সে দিন সশরীরে হাজির ভক্তদের নিউ ইয়র্কের হোটেলে।
পকেটে এক বান্ডিল গাঁজা। এবং ধরালেনও চার মূর্তিকে স্বর্গের ধূমায়িত সিঁড়ি।
বব ডিলান!
জোনাথন গোল্ড এই সাক্ষাৎকে বলছেন, ‘‘যেন পপ-এর দুই সেরা উপনিবেশ, উপসংস্কৃতির মিলন।’’
বিটলদের টিভি, রেডিয়ো, ফ্যাশন, উন্মাদনার জগৎ এসে মিশল বুদ্ধিবাদী, চিন্তাভাবনা, রাজনীতি, সমাজবাদ ও বোহেমিয়ান জীবনদুনিয়ার সঙ্গে।
ফলে ছ’মাসের মধ্যে লেনন রেকর্ড করার সময় ডিলানের আনুনাসিক স্বর ও অন্তর্মুখী মেজাজ ও চরিত্র খোলাখুলি অনুকরণ করা ধরল।
আর ডিলান?
নির্ভেজাল ফোক থেকে সরে পাঁচ যন্ত্রের ব্যাক-আপ আর হাতে ফেন্ডার স্ট্র্যাটোকাস্টার গিটার ধরে ফোক ও রকের সীমানা মুছে দিলেন!
নিউইয়র্কে পণ্ডিত রবিশঙ্করের সঙ্গে জর্জ হ্যারিসন
স্টিফেন হকিং ও বিটলস
১৯৬৪-তে বিটলদের বিশ্বজোড়া নাম হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এই নতুন ভাবে গড়ে ওঠারও সুবর্ণজয়ন্তী পালন হচ্ছে দিগ্বিদিক।
বলা হচ্ছে, ‘‘বারবার বলার পরও বারবার বলতে হয় যে বিটলরা হাতে গোনা আর কয়েকজন বিনোদন শিল্পীদের মতো দুনিয়া দেখার দৃষ্টিটাই বদলে দিয়েছে। অন্যরা যথাক্রমে চ্যাপলিন, মেরিলিন মনরো, প্রেসলি এবং ডিলান।’’
গত সহস্রাব্দ শেষে, ‘বিটলস বিপ্লব’ এই মর্মে এবিসিডি টিভি-র দু’ঘণ্টার তথ্যচিত্রের আলোচনায় বসলেন সলমন রুশদি, হ্যারি পটার স্রষ্টা জে কে রওলিন, অ্যাল গ্রিন এবং প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন।
আর আরও আগে, ১৯৯২-এর ক্রিসমাসে বিবিসি টিভি-র সাক্ষাৎকারে ব্রহ্মাণ্ডবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, পাণ্ডববর্জিত দ্বীপে কেবল আটখানা গানের রেকর্ড নিয়ে যাওয়ার হলে মোৎজার্ট, বেটোফেন, ভাগনার, ব্রাহমজ, পুলঁক, এডিথ পিয়াফ এবং বিটলদের ‘প্লিজ প্লিজ মি’ অ্যালবামটা নিয়ে যাবেন।
কারণ, ওঁর মতে, একটা ম্যাদামারা পপ গানের পরিবেশে বিটলরা ছিল এক হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো।
এক ঝোড়ো নতুন বাতাস।
আমরা এ বার গল্পে গল্পে সেই ঝড়ের খোঁজে যেতেই পারি।
স্বপ্নের রাত, পলিথিন প্যাম
ইংল্যান্ডের উত্তরের বন্দরশহর লিভারপুলকে গানবাজনার মস্ত আস্তানা বললে বেশি বলা হয় না।
বহুকাল ধরেই প্রাচীন শহরটায় দিক-দিগন্তের গানবাজনার ঝড় এসে মিশেছে।
জ্যাজ, সোল, ব্লুজ, আইরিশ সঙ্গীত, সি শ্যান্টিজ বা সাগরগীতি, ফোক এবং পপ সব মিলেমিশে একাকার হয়েছে এখানে।
আয়ারল্যান্ড থেকে ঢুকতে হলে লিভারপুল ছিল ইংল্যান্ডের প্রবেশদ্বার। জন লেনন, পল ম্যাকার্টনি, জর্জ হ্যারিসন এবং রিংগো স্টার সবারই জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই লিভারপুলে। তাই ইংল্যান্ডে ওদের ব্যান্ডকে ডাকাই হত লিভারপাডলিয়ানজ।
ডাকটা খুব ভুল নয়, কারণ লিভারপুলের জীবনের সুরকে বিটলরা বয়ে এনেছিল ব্রিটেনের পপ ধ্বনিতে।
লিভারপুলের গা বেয়ে বেয়ে চলা মার্সি নদীর তরঙ্গ ছিল ওদের রচনার মার্সিসাউন্ড ছন্দে!
বিটলরা যখন জন্মাচ্ছে— রিংগো স্টার (১৯৪০), জন লেনন (১৯৪০), পল ম্যাকার্টনি (১৯৪২) আর জর্জ হ্যারিসন (১৯৪৩)— তখন নিত্যদিন জার্মান বোমারু বিমান বোমা ঝরাচ্ছে লিভারপুলে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ইংল্যান্ডে লন্ডনের পর সব চেয়ে বেশি বোমাবর্ষণ দেখেছে লিভারপুল।
আর কপাল এমন, সেই জার্মানির হামবুর্গ শহরই আঁতুড়ঘর হল লিভারপুলের বিস্ময় ব্যান্ডের!
খুব সচেতন ভাবে না হলেও গিটারে হাত পাকানোর সময় থেকেই লেনন এবং ম্যাকার্টনি স্বভাবকবি।
লিভারপুলের বাচনধারা ও শব্দচলন ভেঙে রোজ কিছু না কিছু পদ্য ওদের খেলার মধ্যে ছিল।
এই করতে করতে এক সময় মনের মতো কথা মনের মতো সুরে মিশে গান হয়ে যেত।
লেননের এরকমই এক গান হল ‘পলিথিন প্যাম’।
ব্যাপারটা এই রকম—লিভারপুল ইউনিভার্সিটিতে কবিতা শোনাতে এসেছেন ইংরেজ ‘বিট’ কবি রয়স্টন এলিস।
অল্পক্ষণের মধ্যেই লেননের মধ্যে নিজের পছন্দের এক কবি পেয়ে গেলেন এলিস। কবিতা পাঠ শেষ হতে দু’জনে পৌঁছে গেলেন ছাত্রাবাসের এক পরিত্যক্ত কামরায়।
উদ্দেশ্য মন খুলে আড্ডা আর নেশাভাঙ। সঙ্গীও জুটে গেল এক সুন্দরী তরুণী। নাম প্যাম।
পরে লেনন বলেছে, যে ড্রাগ আর প্যাম মিলে সে এক স্বপ্নিল রাত তখন। ভুরভুরে নেশায় পড়ে প্যামের সঙ্গে সঙ্গমলীলা চলল মেয়েটিকে পলিথিনের চাদরে জড়িয়ে।
কেন, সেটা আর লেননের মনে পড়েনি পরে। শুধু সেই স্মৃতিতে গান লেখা হয়ে গেল ‘পলিথিন প্যাম’।
আই লস্ট মাই লিটল গার্ল
লেনন-ম্যাকার্টনির লেখা ও সুর করা গানের পর গানে ছেয়ে আছে ওদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক জীবনের দুঃখকষ্ট আর বাল্য-কৈশোর-যৌবনের লিভারপুলের আনন্দ। এ ভাবেই শহরটার স্ট্রবেরি ফিল্ডস বা পেনি লেন নামের রাস্তারা অমর হয়েছে ওই নামের আশ্চর্য টানে।
লেননের মা ছিলেন উঁচু মানের পিয়ানিস্ট এবং গায়িকা। কিন্তু তিনি অন্য এক জনের প্রেমে পড়ে জনকে বোনের কাছে রেখে চলে যান। মাসির কাছে মানুষ হতে হতে জন জানতেও পারেনি যে তাদের বাড়ির পাশের গল্ফ কোর্সের ওপারে মা থাকেন। যাঁকে তার চেনাই হল না।
তার পর জনের পনেরো বছর বয়সে মা ও ছেলের যখন পুনর্মিলন ও সম্পর্কে ফেরা শুরু হল, ওর মা জুলিয়া হঠাৎ একদিন গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেলেন। জনের ভেতরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলা শুরু হল। যা সে নিঃশব্দ ও স্থির সুদূর চাহনি দিয়ে ঢাকার আদব তৈরি করল।
পল ম্যাকার্টনিরও মায়ের মৃত্যু পলের বয়স যখন চোদ্দো। ওর ওই বয়সেই জীবনের প্রথম গান রচনা। মা’কে নিয়ে— ‘আই লস্ট মাই লিটল গার্ল’। এ নিয়ে পরে যখন প্রশ্ন করা হয়, পল বলেছিল, ‘‘ও গান আমি লিখিনি, ওটা হয়ে গিয়েছিল।’’
প্লিজ প্লিজ মি
জীবনের সঙ্গে বিটলদের গানের এই যোগাযোগ ও স্পন্দনই ঢেউ তুলেছিল ইংলন্ডে ষাটের দশকের গোড়ায়।
লিভারপুলের জনপ্রিয় রেকর্ডের দোকানের মালিক ও সঙ্গীত সমালোচক ব্রায়ন এপস্টাইন প্রথম বার ওদের শুনেই ঠিক করলেন ওদের ব্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলবেন। তুললেনও।
পরে বলেছেন, ‘‘শুনেই বুঝে গিয়েছিলাম এরা তাজা, সৎ, এদের উপস্থিতি ও তারকামহিমা আছে। এলভিসের চেয়েও বড় তারকা করার স্বপ্ন দেখেছিলাম।’’
১৯৬২-তে রেকর্ড হয়ে বেরোল বিটলদের প্রথম গান ‘লাভ মি ডু’। আর প্রায় গায়ে গায়ে ‘প্লিজ প্লিজ মি’ ও ‘পিএস আই লাভ ইউ’।
‘লাভ মি ডু’ পপ চার্টের সতেরো নম্বরে এসে গিয়েছিল, আর ‘প্লিজ প্লিজ মি’?
রেকর্ডিং শেষ হতেই ইএমআই সংস্থার নামজাদা প্রোডিউসার জর্জ মার্টিন বিটলদের দিকে চেয়ে বলেছিলেন, ‘‘ওহে বাবুরা, এই মাত্র তোমরা তোমাদের প্রথম এক নম্বর গানটা গেয়ে দিলে।’’
বলা বাহুল্য, প্রেমের আকুতিতে ভরভরন্ত ‘প্লিজ প্লিজ মি’ বিটলদের প্রথম টপ অফ দ্য চার্ট নাম্বার হল। এবং বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং-এর কথা মতো পপ গানে এক নতুন হাওয়া।
দ্যাখোই না খুদকুঁড়ো কী জুটল
টোনি ব্র্যামওয়েলের একটা মজার গল্প আছে বিটলদের গান গেয়ে বড় হয়ে ওঠার।
তখনও ওদের রেকর্ড ছেপে বেরোয়নি। রাতের আড্ডার গান গেয়ে যা প্রাপ্য হয় ম্যানেজার এসে ফেরার মুখে পাতলা পাতলা খামে করে ধরিয়ে দেয়। সামান্য কিছু পাউন্ড, তাও গুনেগেথে দেখে নিতে হয়।
এর পর এক দিন ওরা চার মূর্তি বাড়িতে আড্ডায় বসেছে যখন ওদের ‘প্লিজ প্লিজ মি’ অ্যালবামের বিক্রির স্টেটমেন্ট এল ডাকে।
ম্যাকার্টনি ‘কী আর হাতিঘোড়া আসবে!’ বলে খামটা না খুলেই ছুড়ে দিল টেবিলে। দেখে ছোকরা ব্র্যামওয়েল বলেছিল, ‘‘দ্যাখোই না খুদকুঁড়ো কী জুটল!’’
ম্যাকার্টনি হিসেবটা খুলে প্রাপ্য অঙ্কে শূন্যের বহর দেখে তো থ’। সংখ্যার ছ’টা শূন্যের দিকে তাকিয়ে ওর চোখ দুটো তখন মস্ত শূন্যের মতো। বিক্রির রয়্যালটি থেকে বিটলদের নামে জমা পড়েছে এক মিলিয়ন পাউন্ড!
ওরা জানেই না এত টাকা মানুষ খায়, না মাথায় মাখে।
যিশুর চেয়েও বিখ্যাত
বিটলদের প্রথম তিনটি এলপি ‘প্লিজ প্লিজ মি’, ‘উইথ দ্য বিটলস’ এবং ‘আ হার্ড ডেজ নাইট’ রেকর্ড বিক্রির রেকর্ড ভেঙে চুরমার করছিল ঠিকই, কিন্তু আরও বড় ঘটনাটা ঘটাচ্ছিল সংস্কৃতির মহল্লায়।
মাত্র বাইশ মাসে গাওয়া ও রেকর্ড করা তিন এলপি গান একটা বড়সড় আন্দোলন হেনে দিয়েছিল।
বিটলদের গানগুলো তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে একটা সংলাপের মতো হচ্ছিল বললে কিছুই বলা হয় না।
গানগুলো যেন আড়ি পেতে ওদের মনের কথা শুনেই লেখা আর সুর করা। বিটলদের আত্মকথা, বিটলদের যৌনতা, ড্রাগ ও মুক্তির বাসনা যেন ষাটের দশকের তরুণ সমাজের অন্তর্লীন সত্য বয়ে আনছে।
লেনন এ সব গানে লিড করার সময় জলসায় জোরসে হাঁকত, ‘‘বাবারা, আমরা কোথায় চলেছি?’’ ব্যান্ডের বাকি তিন জন জবাব জোগাত, ‘‘টু দ্য টপারমোস্ট অফ দ্য পপারমোস্ট, জনি!’’
অর্থাৎ পপ-এর টপে।
এই খুল্লামখুল্লা জীবনের জীবনসঙ্গীতই ধরা পড়েছে ১৯৬৩-র ফেব্রুয়ারিতে নিউ মিউজিক্যাল এক্সপ্রেসকে দেওয়া লেননের এক সাক্ষাৎকারে। যেখানে ‘পেশাদার আকাঙ্ক্ষা’-র উত্তরে ও সাফ জানিয়েছিল ‘তা হল বড়লোক ও বিখ্যাত হওয়া।’
তবে এই রিচ অ্যান্ড ফেমাস যে নিমেষে হওয়া যাবে তা কি ওরা অত আগে ভাবতে পেরেছিল?
বলা মুশকিল।
না হলে বলার এক বছরের মাথায় কেনেডি এয়ারপোর্টে নেমে মার্কিন ছেলেমেয়ের ভিড় দেখে, ওরা নিজের মধ্যে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বলাবলি করেছে, ‘‘যা দেখছি ঠিক দেখছি তো? এ আমরা কোথায়?’’
এই বিটলরাই ১৯৬৬-তে তৃতীয় মার্কিন সফরে এসে ভিড়, ভিড় আর ভিড় দেখে চিৎকার, চিৎকার আর চিৎকার শুনে ঠিক করল, ঢের হয়েছে, আর কোনও সফর বা জলসা নয়।
লেনন এই মস্ত সিদ্ধান্তের ফাঁকে এক নতুন বিতর্ক বাঁধিয়ে বসল। ঘোষণা করল, ‘‘আমরা যিশু খ্রিস্টের চেয়েও বিখ্যাত।’’ তাতে মার্কিন খ্রিস্টানরা রেগে লাল। সেখানকার স্প্যানিশ ও ডাচ মিউজিক চ্যানেলগুলো বিটলদের রেকর্ড বাজানো বন্ধ করল।
তাতে লেনন ক্ষমা চেয়েও প্রশ্ন করল, ‘‘যদি বলতাম টেলিভিশন মাধ্যম যিশুর চেয়েও বেশি শক্তিশালী, তা বলে কি এত কথা শুনতে হত আমাদের!’’
১৯৯৫-এ বিটলরা যখন ভেঙে গেছে কবেই, তখন বিখ্যাত পপ ব্যান্ড দ্য রোলিং স্টোনজ-এর লিড সিঙ্গার মিক জ্যাগার অবশ্য দিব্যি বলে দিয়েছিল, ‘‘যে-সময়ের কথা ওটা, সে-সময় কিন্তু যিশুর চেয়ে বিটলদেরই বেশি নামধাম।’’
বড় মিষ্টি সময় গেছে আমাদের
যে-দুটি অ্যালবাম দিয়ে বিটলরা নিজেদের গানের চেহারাচরিত্রই প্রায় পাল্টে ফেলতে চলল তাদের নামকরণও লক্ষ্যণীয়— ‘রাবার সোল’ (১৯৬৫) এবং ‘রিভলভার’ (১৯৬৬)।
‘রাবার সোল’-এর বিষয়বস্তুতে প্রেম-ভালবাসার এক নতুন গমক এবং দর্শন ধরা দিচ্ছে। বিটলদের নিয়মিত নেশাভাঙেরও ছাপ পড়েছে কম্পোজিশনে।
কিন্তু রাতারাতি কী এক পরিণতি বিটলস অ্যালবামে!
এই সংগ্রহের ‘‘ইন মাই লাইফ’ গান লেনন-ম্যাকার্টনির যৌথ বাণী ও সুর রচনার সেরা নমুনা। ‘রবার সোল’-কে হ্যারিসন ওঁর প্রিয়তম বিটলস অ্যালবাম বলেছে, রিংগো স্টার বলেছে ‘দ্য ডিপার্চার রেকর্ড’। নবযাত্রার সূচনা।
নবযাত্রাই বটে।
এই রেকর্ড হওয়ার সময় থেকেই লেনন এবং ম্যাকার্টনির অহং-এর ধাক্কার শুরু। ম্যাকার্টনি বলেই দিল, ‘‘বড় মিষ্টি সময় গেছে আমাদের। এ বার অন্য ভাবে বাড়তে হবে।’’
ভাবলে অবাক হতে হয়, এই ইগোর লড়াইয়ের মধ্যেই হয়ে পড়ছে ‘রিভলভার’ ও ‘সার্জেন্ট পেপার্স লোনলি হার্টস ক্লাব ব্যান্ড’-এর মতো অবিস্মরণীয় অ্যালবাম।
সূক্ষ্ম কবিতা, সুরের স্টাইলের সমাস-সন্ধি, ক্ল্যাসিক্যাল ও সাইকিফিলিক যন্ত্রায়োজন— সব মিলে বিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে, এক ‘কোয়ান্টাম লিপ’।
ভাবতে কষ্ট হয় যে, ‘অ্যাবি রোড’-এর মতো বৈপ্লবিক কাজ যখন বেরোচ্ছে বিটলদের মগজ, হাত ও স্টুডিয়ো থেকে, দলটা তখন ভেতর থেকে চুরচুর করে ভেঙে যাচ্ছে।
জনের হলটা কী
বিটলরা যে অপূর্ব গানটা গেয়েছিল— ‘টুমরো নেভার নোজ’, আগামী কাল জানে না— সেটাই সত্যি হল ওদের জীবনে।
যে-লেনন লিখেছিল কবিতাটা, সে-ই স্ত্রী সিন্থিয়া থাকতেও সঙ্গিনী করে জীবনে নিয়ে এল ইয়োকো ওনো-কে।
জাপানি শিল্পী ওনো প্রথম থেকেই নাক গলাতে লাগল বিটলদের গানবাজনা, কাজকারবারে।
স্টুডিয়োয় এসেও রেকর্ডিং-এর সময় দুমদাম মতামত দেওয়া ধরল এবং সেটা এমন চরমে উঠল যে জর্জ হ্যারিসন এক দিন হাতের গিটার রেখে ‘চললাম!’ বলে স্টুডিয়োর বাইরে হাঁটা লাগাল। রক্ষে সে-যাত্রায় ও ফিরে এসেছিল।
এর পর রিংগো বলা ধরল ‘জনের হলটা কী? কী করে সহ্য করছে এ সব? আর তো পারা যাচ্ছে না!’
ম্যাকার্টনি কিছু না বলে স্ত্রী লিন্ডাকে স্টুডিয়োয় আনতে লাগল। কিন্তু লিন্ডা এত রুচিশীলা এবং এলিগ্যান্ট যে তাকে দিয়ে ওনোর টক্কর দেওয়ার কোনও সুযোগ ছিল না।
অথচ লেননের মুখের উপর কিছু বলারও জো নেই কারও। বিটলস পরিচয় বাদ দিয়েও সে জগজ্জোড়া আইকন। আর সে তখন ওনোর নেশায় বুঁদ।
ফলত পল ম্যাকার্টনি ১৯৭০-এর ৩০ ডিসেম্বর বিটলস দলের পার্টনারশিপ খারিজের জন্য মামলা রুজু করল।
বাকিরা ভাল থাকুক
শেষ বিচারে অবশ্য কেবল ইয়োকো ওনোর ওপর দায় চাপানো উচিত হয় না। ১৯৬৪-র ৯ ফেব্রুয়ারি যে বিশ্বমঞ্চ ওরা পেয়েছিল তাতে ব্যান্ডের ছ’বছর এককাট্টা থাকাটাও কম অবাক করে না। ওই ছ’বছরে যে বিবর্তন, পরীক্ষানিরীক্ষা, উন্নতি ও প্রসার দেখা গেছে তাও আজ লোকগাথার অংশ।
আশির দশকের গোড়ায় যখন কলকাতায় এসেছিল জর্জ হ্যারিসন, তখন ওর যে সাক্ষাৎকার নিই এলগিন রোডের জাহাজবাড়িতে, তাতে বিটলদের নিয়ে কোনও প্রশ্নই রাখতে পারিনি।
ওর গুরু পণ্ডিত রবিশঙ্কর আমায় বলেছিলেন, ‘‘বিটলদের ছাড়াছাড়ি নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস কোরো না। ওর হয়তো কষ্ট হবে।’’
জিজ্ঞেস করিওনি। কিন্তু কথার শেষে জর্জ নিজে থেকেই হেসে বলল, ‘‘বিটলদের বিচ্ছেদ নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস না করার জন্য ধন্যবাদ।’’
বললাম, ‘‘কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আপনি কিছু বলতে চাইছেন যেন।’’
হেসে বলল, ‘‘প্রিয় জন লেনন তো চলে গেল। বাকিরা ভাল থাকুক এটাই চাই।’’ এর বছর দুই আগে, ১৯৮০-র ডিসেম্বরে আততায়ীর হাতে নিউইয়র্কে প্রাণ গিয়েছিল জন লেননের।
২০০১-এর নভেম্বরে ফুসফুসের ক্যানসারে মৃত্যু হল জর্জ হ্যারিসনের। বাকিরা ভাল থাকুক।
অমরত্ব যাদের বাঁধা তাদেরও মরজীবন সুন্দর হোক।