সম্প্রতি বিড়লা অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল নান্দীমুখ আয়োজিত ‘বরষায় কবির গান’। সুন্দর সংকলন। প্রতিটি গানই ছিল সুনির্বাচিত। সুকন্যা নাথ এবং ইন্দ্রানি ভট্টাচার্য মোট ১১টি গান শোনালেন। গ্রন্থনায় ছিলেন শঙ্করলাল ভট্টাচার্য। শুরুতেই সুকন্যা নাথের ‘মেঘের পরে মেঘ জমেছে’ পরিবেশনার গুণে অনবদ্য হয়ে ওঠে। ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য এর পরে গাইলেন ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’। গানের ফাঁকে অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় সেতারে বন্দিশ পরিবেশন করলেন।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর ৬৪ বছর বয়সে যেন শ্রাবণের পূর্ণিমা খুঁজছেন। সেই বয়সে কবি তাঁর জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছিলেন, ছবি আঁকা। সেই রূপকে প্রত্যক্ষ করে ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য শোনালেন ‘আমার নিশীথরাতের বাদল ধারা’। গানটি শ্রোতাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ করে। শিল্পীর পরের নিবেদন ছিল ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’।
রবীন্দ্রনাথ ১৮৯৫-এর ২০ সেপ্টেম্বর শিলাইদহে বসে মিশ্র মল্লারে গান বাঁধলেন বর্ষার গান।
ভরা বর্ষায় কবি আনমনে চলে গিয়েছিলেন প্রকৃতির সেই মেঘ-কন্যার দেশে। কালো মেঘের ঘনঘটায় কখন যেন তিনি মেঘদূতের প্রতিনিধি হয়ে লিখে ফেললেন অমূল্য সেই সব গান। যা আজও মনকে নাড়া দেয়।
এ দিন সুকন্যা নাথের কণ্ঠে ‘ঝর ঝর বরিষে বারিধারা’ যেন সেই কথাই মনে করিয়ে দিল। অপূর্ব গেয়েছেন শিল্পী। আবেগও ছিল কণ্ঠে। তবে শিল্পীর কণ্ঠে শেষ গান ‘ছায়া ঘনাইছে বনে বনে ’ এদিনের সেরা প্রাপ্তি বলা যায়।
স্বদেশী গানের টানে
রবীন্দ্রসদনে নূপুরছন্দা ঘোষ
সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে নূপুরছন্দা ঘোষ শোনালেন দ্বিজেন্দ্রলাল, অতুলপ্রসাদ ও রজনীকান্তর গানের সংকলন ‘মা লহো প্রণাম’। নূপুরছন্দা ও তাঁর ছাত্রছাত্রীদের সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় একের পর এক স্বদেশী গান। অনুষ্ঠানটি অন্য মাত্রা পায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অসাধারণ আবৃত্তির উচ্চারণে। প্রথম পর্বে শিল্পী ও তাঁর ছাত্রছাত্রীদের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গে’, ‘একবার গাল ভরা মা ডাকে’, ‘ভারত কাব্য নিকুঞ্জে’ প্রভৃতি গান। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে শিল্পীর একক কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘নিঁদ নাহি আঁখি পাতে’, ‘আজি এসেছি’, ‘ভারতভানু কোথা লুকালে’ প্রভৃতি বিখ্যাত সব গান। সমবেত কণ্ঠে স্বদেশ পর্যায়ের গানের একটি কোলাজ পরিবেশনার মধ্য দিয়েই সমাপ্তি ঘটে অনুষ্ঠানের।
মনে পড়ে
নির্মলেন্দু চৌধুরী ও উৎপলেন্দু চৌধুরীর লোকগান ভোলার নয়। নির্মলেন্দুর জন্মদিন উপলক্ষে পিতা পুত্রকে নিয়েই লোকগীতির আয়োজন ‘স্মরণে বরণে’। আয়োজক মাদল। পরপর একক ও সমবেত গান। অমর পাল ও পূর্ণদাস বাউল অনুষ্ঠানে বাড়তি মাত্রা এনে দিলেন। প্রথম জন গাইলেন ‘কই রে আমার প্রাণবন্ধু’ আর পূর্ণদাস ‘আমার যেমন বেণী তেমনি রবে’। তারও আগে সঙ্গীত বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের গাওয়া এই সন্ধ্যার সেরা সমবেত ‘চল রে মাঝি চল’। শুভ রায় সুরে তালে গাইলেন কিন্তু লোকগানের মেজাজ নেই। একই কথা সুজাতা সরকারের গানেও। তবে ভাল লাগল রঞ্জিত চক্রবর্তীর গান। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সাসা ঘোষালও এ দিন লালনের গান গাইলেন। স্বপন বসুর ‘সুজন মাঝি রে’ এ দিনের সেরা প্রাপ্তি। প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের ‘ও রহিমের ঘোড়া’, ‘সুজন নাইয়া রে’ শোনালেন সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়। প্রায় চার ঘণ্টার আসরে দীর্ঘ শিল্পী তালিকা যথেষ্ট বিরক্তিকর। সংযোজনায় ছিলেন মধুমিতা বসু।
ফিরল ‘মহুয়া’
সোহিনী মজুমদার
মৈমনসিংহ গীতিকার ‘মহুয়া’ পালা তাঁর সুরে প্রথম বার মঞ্চস্থ হয় ১৯৭০ সালে। ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে এক বৈঠকে সম্পাদনা করে সুরারোপ করেছিলেন ‘গান্ধার’ গোষ্ঠীর জন্মদাতা জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রযোজনা এর পর বহু বার মঞ্চস্থ হয়। সুতপা সরকার বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সম্প্রতি ‘মহুয়া’র প্রথম মঞ্চ প্রযোজনা হয়ে গেল জিডি বিড়লা সভাঘরে। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন হিরণ। ‘শিঞ্জন’ গোষ্ঠীকে নিয়ে নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন কোহিনূর সেন বরাট। মহুয়া এবং নদের ভূমিকায় মধুপর্ণা কুমার এবং বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় অনবদ্য। নজর কেড়েছে হুমরা বাইদ্যা এবং পালঙ্ক সইয়ের চরিত্রাভিনেতারাও। গানে জয়ন্তবাবু, সুতপা, দীপায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, ইমন চক্রবর্তী, চন্দন মজুমদারের সুরের নিখুঁত প্রয়োগে, যথার্থ উচ্চারণে ভাব ব্যক্ত করার প্রয়াস প্রশংসার দাবি রাখে। সুতপা, ইমন, দীপায়ন, বৈশালী ফনির গায়ন শৈলী সন্ধেটিকে মনোগ্রাহী করে তোলে।
মধুর আমার
আইসিসিআর-এ অনুষ্ঠিত এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নানা স্বাদের সঙ্গীত পরিবেশন করলেন প্রিয়াঙ্গী লাহিড়ী, সুস্মিতা রায় ও অনিন্দিতা রায়। রবিছন্দম শিল্পীগোষ্ঠীর সমবেত নিবেদনে নজর কাড়েন স্বাগতা দাস বসাক, রুক্মিণী দত্ত ও তিতাস চক্রবর্তী। চন্দ্রাবলী রুদ্র দত্ত রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করলেন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে অলক রায়চৌধুরী ‘মধুর আমার মায়ের হাসি’র মতো কিছু স্মৃতিমেদুর গান শোনান।
কবির কবিতায়
বালা অ্যাকাডেমিতে কবি দেবব্রত দত্তের কবিতাপাঠ শ্রোতাদের মনে থাকবে অনেক দিন। এমনকি তাঁর লেখা বিভিন্ন কবিতাই পাঠ করলেন অন্য কবিরা। এ দিন নবীন ও প্রবীণ শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন রত্না মিত্র, শোভনসুন্দর বসু, সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়, রণবীর দত্ত, অন্তরা দাস, কাজল সুর, অর্ণব চক্রবর্তী প্রমুখ।
কবির গানে
গানে গল্পে রবীন্দ্র-নজরুল। শিল্পীরা ছিলেন মাধবী দত্ত, অনিন্দিতা কাজী ও মধুমিতা বসু। মাধবীর কণ্ঠে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে ‘মধুর ধ্বনি বাজে’, ‘এ কি লাবণ্যে’, ‘চিরসখা’ প্রভৃতি। নজরুলের গানগুলি ভাল গাইলেন অনিন্দিতা কাজী। গল্প পাঠে ছিলেন মধুমিতা বসু।