উত্তাল বর্তমান সময়। এক দিকে মূল্যবোধের অবক্ষয়, অন্য দিকে প্রতিবাদ না করার প্রবণতা। এমন মুহূর্তেই গোবরডাঙ্গা রূপান্তরের একটি সাহসী প্রযোজনা ‘লাশকাটা ঘর’ নাটকটি। এক সৎ আদর্শবান ডাক্তারবাবুর জীবন এবং মূল্যবোধকে কেন্দ্র করেই এ নাটকের কাহিনি। নাটক কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের এবং নির্দেশনায় শ্যামল দত্ত।
বিনয় রায়, একটি কলেজ হাসপাতালের জনপ্রিয় ডাক্তারবাবু, যিনি গরিবের কাছে দেবতুল্য। অন্যায় অবিচারের সঙ্গে কখনও তিনি আপোষ করেন নি। ওপর মহলের বিষ নজরে পড়ায়, দুর্দান্ত রেজাল্ট সত্ত্বেও প্রৌঢ় বয়স পর্যন্ত মেডিক্যাল কলেজের লেকচারার হতে পারেননি। তবুও উদাসীন তিনি। নিষ্ঠা ও ভালবাসায় নিজের কাজ করে যান। তাঁর স্বপ্ন যথার্থ মানুষ গড়া। এ কাজে তিনি পাশেও পেয়ে যান তাঁর প্রিয় কিছু ডাক্তারি পড়া ছাত্রছাত্রীদের। মূল্যবোধকে বাঁচিয়ে রাখতে গিয়েই তাঁর জীবনে আসে চরম বিপর্যয়। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে ভীষণ একা হয়ে যান। ঠিক এই সময়ে তাঁরই মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত মানুষেরা তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায়। সুদিনের আশায় থাকেন তিনি।
ডাক্তারের চরিত্রে আশিস পাল-এর সাবলীল অভিনয় চরিত্রটিকে আরও জীবন্ত করে তোলে। তাঁর অভিনয়ে ধরা পড়ে স্নেহবৎল পিতার মুখ। শর্মীর চরিত্রে অর্পিতা পালের অভিনয়ও প্রশংসনীয়। শর্মির জীবনের করুণ পরিণতি মনকে ভারাক্রান্ত করে। পুলিশ পিঠ বাঁচাতে কীভাবে সাধারণ মানুষকেও দাগি আসামি বানিয়ে তুলতে পারে, তেমন ঘটনাও প্রত্যক্ষ করা যায় নাটকে। এত গম্ভীর বিষয়ের মধ্যেও থানার একটি মজার দৃশ্য কমিক রিলিফ দেয়। এখানেই পরিচালকের মুন্সিয়ানার পরিচয়। স্বরূপ দেবনাথ, জীবন অধিকারী এবং অভীক দাঁ ও রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের অভিনয় মনে দাগ কাটে। এ ছাড়াও অভিনয়ে ছিলেন সুদীপ্তা মুখোপাধ্যায়, অতনু পাল, গৌতম দাস, চন্দন দেবনাথ, বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়, প্রভাত দত্ত, শুভ বিশ্বাস প্রমুখ।