সম্প্রতি পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে গান ও কবিতার কোলাজে ছিলেন শোভনসুন্দর বসু, ইমন চক্রবর্তী, মৌনিতা চট্টোপাধ্যায়, সৌভিক চৌধুরী। পরিচালনায় শোভনসুন্দর বসু। পূর্ণেন্দু পত্রীর ‘রবিঠাকুর’ রচনার নির্বাচিত অংশের আবৃত্তি দিয়ে শুরু করলেন শোভনসুন্দর। ইমনের গান ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’ সেদিন ছিল শিল্পীর ব্যক্তিগত অনুভবের নিজস্ব সংযোজন। সৌভিকের ‘আমার মন মানে না’ গান ছিল সাবলীল। রূপক চক্রবর্তীর ‘দুজনে দেখা হল’ রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দের ঐতিহাসিক সাক্ষাতের চিত্রায়ণ, যা শোভনসুন্দরের কণ্ঠে বিস্ময় ও বিরহ বিমূর্তটিকেই ভাস্বর করে রাখল। ইমনের গান ‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা’ দুজনের ব্যক্তিগত ভাবনার রঙিন মেলবন্ধন। ‘কৃষ্ণকলি’ কবিতাটির আবৃত্তি এবং সুরারোপিত রূপটি একসঙ্গে উপস্থাপিত হল ইমন ও মৌনিতার কণ্ঠে। ব্রত চক্রবর্তীর ‘কোন এক তরুণ কবিকে’ কবিতায় মৌনিতার আবৃত্তির সঙ্গে ‘রাতজাগা দুটি চোখ’ শোনালেন সৌভিক চৌধুরী।
আগামী শতাব্দীর প্রেমের রূপটি শোভনসুন্দর আবৃত্তির মাধ্যমে যেভাবে তুলে ধরলেন তা বেশ বুদ্ধিদীপ্ত। যেমন শ্রীজাতর লেখা ‘প্রেম পিয়াসী বন্ধু’ কবিতা শিল্পীর গলায় কৌতুক, প্রহসন ও বিশুদ্ধ হাস্যরসের ঝকমকে অভিঘাতে উজ্জ্বল।
বা বলা যায় আঞ্চলিক ভাষার কবিতা ‘বাবা রাম’ শোভনসুন্দরের আঞ্চলিক উচ্চারণ শৈলীতে ও আবৃত্তির গুণে সার্থক রূপ পেয়েছে। সঙ্গে ইমনের ঝুমুর গান। এ দিন বিভিন্ন পাশ্চাত্য ও ধ্রুপদী যন্ত্রসঙ্গীতের বর্ণময় সঙ্গতের যে সাঙ্গীতিক ছবি ফুটে উঠেছিল তাতে গান কবিতার রসাস্বাদনে কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি। যা অবশ্যই ব্যতিক্রম।
বত্রিশ পেরিয়েও
বর্ষীয়ান তবলিয়া বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়-এর পরিচালনায় কলাশ্রী-র ৩২ তম উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতানুষ্ঠানের সূচনা হল রমা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে সিন্দুরা রাগপ্রধান দিয়ে। ছড়াকার শৈলেন্দ্র প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘কঞ্চি কেটে কলম করে’ শোনায় ছাত্র-ছাত্রীরা। শ্রাবণী ঘোষালের কণ্ঠে নজরুলগীতি, অমিতাভ ঘোষের কণ্ঠে শ্যামকল্যাণ রাগে খেয়াল, তাপস রানার কণ্ঠে গজল, সান্তা নন্দী (ঘোষ)–র পঞ্চকবির গান শ্রোতাদের ভাল লাগে। দুই যমজ ভাই রাজশীর্ষ দাস, রূপ শীর্ষ দাস উপহার দিল অনবদ্য সঙ্গীত। তবলায় শিবনাথ মুখোপাধ্যায়, জয়দীপ চক্রবর্তী, রাজেশ নন্দী, নীলেশ নন্দী। দেবাশিস অধিকারী শোনান নন্দ রাগে খেয়াল, তিন তালে বন্দেশ পাহাড়ি ফোক অসাধারণ তান সরগম বোল তান ইত্যাদি। তবলায় অনবদ্য শ্যামল কাঞ্জিলাল। শেষ নিবেদন চতুরঙ্গ মধু বর্মন (তবলা), গোপাল বর্মন (শ্রী খোল), গৌতম চক্রবর্তী (পাখোয়াজ), গৌতম দত্ত (বাংলা ঢোল) এই চার জনের শিল্পীর বাদন প্রশংসনীয়।