ব্রিটিশ কাউন্সিলের সৌজন্যে লন্ডনের ফিলটার থিয়েটার মঞ্চস্থ করল শেক্সপিয়রের ‘টুয়েলফথ নাইট’-এর এক অভিনব প্রযোজনা (পরি: শ্যন হোমস)। অনেক কাটছাঁট করলেও মূল নাটকের মেজাজ অক্ষত থেকেছে। নাটকের নামেই যে অবাধ রঙ্গতামাসার ইঙ্গিত এবং প্রথম ছত্রেই যে সঙ্গীতের প্রাচুর্য আর অতিরেকি প্রেমের সোচ্চার ঘোষণা সে নাটক যথার্যই মঞ্চস্থ হয়েছে যেন রঙ্গকৌতুকে ঠাসা এক সঙ্গীতালেখ্য।
রকসঙ্গীতের নাচগান, ভাঁড়ামো-প্রবণ ব্যঙ্গরস সব মিলিয়ে এই প্রযোজনা এতই সমকালীন যেন মৃত্যুর চারশো বছর পরে শেক্সপিয়রের যেন নবজন্ম হল।
স্মার্টফোন, ট্র্যানজিস্টর বৈদ্যুতিন ও বৈদ্যুতিক বাদ্যযন্ত্র, মাইক সাউন্ডবক্সের সমাবেশে এক রক কনসার্টের মঞ্চে কুশীলব, রঙ্গরসের দুটি উৎস—পুরুষ বেশে ভায়োলা এবং তার যমজ ভাই সেবাস্টিয়ানকে নিয়ে লিঙ্গ পরিচিতির ধন্ধ আর পিউরিটান গোঁড়ামির জন্যে ম্যালভোলিওর হেনস্থা।
হেনস্থা যাদের চক্রান্তে সেই মারায়া, স্যার টোবি বেলচ, অ্যানডু এগিউচিক এবং ম্যালভোলিওর নিজের নানা কীর্তিকলাপে মঞ্চ মাতে কৌতুক হুল্লোড়ে, যা উপচে পড়ে হলে। অনেক অভিনব নাট্য-চমক আর তাৎক্ষণিক হাসির খোরাক দর্শকদের মাতিয়ে রাখে। হ্যারি জার্ডিন (অরসিনো/এগিউচিক) শুরু করেন নাটকের প্রথম ছত্রের অনাড়ম্বর অনাটকীয় উচ্চারণে। দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় ছাড়াও মঞ্চের কমিক নৈরাজ্য সুশৃঙ্খল রাখেন। দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় করেছেন—স্যান্ডি ফস্টার (মারায়া/ফেসটে) ও এমি মার্চন্ট (ভায়োলা সেবাস্টিয়ান) অভিনয়ে সকলকে টেক্কা দিয়েছেন মার্চন্ট, তাঁর ভায়োলা এই নৈরাজ্যের জগতে এক আকস্মিক আগন্তুক।
সারাক্ষণ পুরুষবেশে থেকেও আসল পুরুষ হয়ে ওঠে যখন সে চকিতে সেবাস্টিয়ান হয়ে গেল। যদিও শেষদৃশ্যে একাই দুটি ভূমিকায় উপস্থিত থাকায় পরিচিতি-বিভ্রান্তির কমিক মজা জমেনি। অনেক সময় একটি চরিত্রের প্রাধান্যে অন্যটি চাপা পড়ে, যেমন ফেস্টের কৌণিক রসিকতায় মারায়ার বুদ্ধিদীপ্ত চতুরালি আর এগিউচিকের কসরতে অরসিনোর সাড়ম্বর প্রেমার্তনাদ।
অবশ্য রোমান্টিক প্রেম নিয়ে কৌতুক করাই এই কমেডির অন্যতম উদ্দেশ্য। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে যায় প্রযোজনার কার্নিভ্যাল মেজাজের প্রধান উৎস স্যার টোবি বেলচের (ড্যান পুল) মত্ততা আর ম্যলভোলিওর (ফার্গাস ওডোনল) উন্মত্ততা। এদের পাশে নাটকের অন্যতম নায়িকা রোনকে আডেকোলুয়েজোর অলিভিয়া অনেকটাই নিস্প্রভ।