ঘর জুড়ে রোশনাই

তা সে হোক না কয়েকশো বর্গফুটের ঠিকানা। আলোর সাজে ঘরের পরিধি বাড়িয়ে নিন অতিথিদের মনে। আর সেই আলো ছড়িয়ে পড়ুক নিজের অস্তিত্বে... তা সে হোক না কয়েকশো বর্গফুটের ঠিকানা। আলোর সাজে ঘরের পরিধি বাড়িয়ে নিন অতিথিদের মনে। আর সেই আলো ছড়িয়ে পড়ুক নিজের অস্তিত্বে...

Advertisement

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৮ ০০:৩২
Share:

বাঙালি বাড়ির আলোর সাজ বলতে একটা সময় পর্যন্ত ভরসা ছিল হাতে গোনা গুটিকতক আলো। ঘর জুড়ে আলোর জন্য একটা পেল্লায় টিউবলাইট। তার সঙ্গী হলুদ আলো ছড়ানো বাল্ব। আর খুব শৌখিন আলো বোঝাতে টেব্‌ল ল্যাম্প ও নাইট ল্যাম্প। ব্যস! ওই পর্যন্তই। কিন্তু পরিবর্তিত সমাজের হাত ধরে এখন বাঙালি বাড়ির অন্দরসজ্জায় আলোর সাজ বিশেষ গুরুত্ব রাখে।

Advertisement

প্রথমে আলোর ধরনটা বুঝে নিতে হবে। আপনার ঘরে অনেক আলো চাই, না কি কম আলো... সেটা বুঝে নিয়ে আলোর কাজ শুরু করতে হবে।

Advertisement

অ্যামবিয়েন্ট লাইটিং

পুরো ঘর জুড়ে হালকা আলোর খেলা বজায় রাখতে চাইলে এই ধরনের আলো ব্যবহার করুন। এই ধরনের আলোর মধ্যে পড়ে...

রিসেস্‌ড বা ট্র্যাক লাইট: একটা লাইনে অনেক আলো থাকে। যে কোনও ধরনের সিলিংয়েই এই আলো লাগিয়ে নিতে পারেন। রান্নাঘর বা খাওয়ার জায়গায় এই আলো বেশ ভাল লাগে।

কোভ লাইটিং: সারা দিনের কাজের পরে ক্লান্ত শরীরে বাড়িতে ঢুকে মনে হয় আলোটা হালকা হলেই ভাল হত। কোভ লাইটিংয়ের কাজটাই তাই। কোভ লাইটিংয়ে আলোর মুখ থাকে ঘরের ছাদের দিকে, ফলে আলো ছাদে প্রতিফলিত হয়ে সারা ঘরে ছড়িয়ে যায়। সরাসরি তা চোখে লাগে না।

শ্যান্ডেলিয়র ও পেনডেন্ট: শৌখিন আলোর ব্যবহার করতে চাইলে এই অপশনটা বেছে নিন। শ্যান্ডেলিয়র ও পেনডেন্টের মধ্যে ফারাকটা আয়তনে। শ্যান্ডেলিয়র যদি একটি বৃক্ষ হয় তা হলে তার একটি শাখা হল পেনডেন্ট। অর্থাৎ ঝাড়বাতিতে একটা আধারেই আলোর অনেক শাখাপ্রশাখা থাকে, সেখানে একটা চেন বা কর্ডের মাধ্যমে ঝুলিয়ে নিতে পারেন পেনডেন্ট। বসার ঘরের শ্রীবৃদ্ধিতেই ব্যবহার হয় এই ধরনের আলোর। তবে ডাইনিং বা বাথরুমেও এখন ব্যবহার করা হচ্ছে পেনডেন্ট লাইট।

ফ্লাশ লাইটিং: এই লাইট আবার অনেক ধরনের হয়। যেমন ফুল ফ্লাশ, সেমি ফ্লাশ। আপনার ঘরে কত পরিমাণ আলো দরকার, সেই অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন ফ্লাশ লাইট।

ওয়াল স্কন্স: দেওয়ালে লাগানো হয় এই আলো। বিভিন্ন রকমের আকারের এই আলো বড় হলের দেওয়ালে বা সিঁড়ির দেওয়ালে ভাল দেখায়। বেডরুমে বিছানার দু’পাশেও ওয়াল স্কন্স লাগাতে পারেন।

টাস্ক লাইটিং

এই ধরনের আলোর ফোকাস থাকে এক জায়গায়। রান্নাবান্না, বই পড়া, সেলাই করা, লেখার সময়ে একটা জায়গায় বেশি আলোর প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে কাজে লাগবে টাস্ক লাইট।

আন্ডার ক্যাবিনেট লাইট: রান্নাঘরের ক্যাবিনেটের নীচে এই রকম আলোর ব্যবহার হয়। আনাজ কাটা, বাছা, ধোয়ার জন্য এই আলো খুবই সহায়ক।

ভ্যানিটি লাইট: এই ধরনের আলো বাথরুমে বা আয়নার উপরে লাগিয়ে নিতে পারেন। তা হলে সাজগোজ করার সময়ে সুবিধে হবে।

টেব্‌ল ল্যাম্প: বিভিন্ন ধরনের টেব্‌ল ল্যাম্প এই ধরনের আলোর আওতায় পড়ে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, বড় আলোর চেয়ে টেব্‌ল ল্যাম্পের আলোয় পড়াশোনা করলে মনোযোগ বাড়ে। শুধু পড়াশোনাই নয়, ঘর সাজাতেও ফ্যান্সি টেব্‌ল ল্যাম্প ব্যবহার করতে পারেন।

অ্যাকসেন্ট লাইটিং

এই আলোর ফোকাস ফিক্সড, ফলে আলোর ফোকাসের জিনিসগুলো সুন্দর দেখায়। তেমনই আঁধারিতে থাকা জিনিসের অর্ধেক অংশে এই আলোর ঈষৎ আভা কল্পলোক তৈরি করে যেন! দেওয়ালের আর্টওয়র্ক বা শো কেসের ভিতরে রকমারি পুতুলকে আকর্ষক বানাতে এই আলোর জুড়ি নেই।

স্পট লাইট: এই ধরনের আলোর তালিকায় সর্বাগ্রে রয়েছে স্পট লাইট। দেওয়ালে বা বাড়ির ছাদ থেকে কোনও একটি পেন্টিং বা ছবিকে হাইলাইট করতে এই আলো ব্যবহার করতে পারেন।

ল্যান্ডস্কেপ লাইটিং: এই ধরনের আলো সাধারণত প্রবেশপথের ধারে বা বাগানে ব্যবহার করা হয়।

সাধারণত এই আলো দিয়েই সাজ সম্পূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু মেকআপে যেমন হাইলাইটার, লুমিনাইজ়ারের মতো সঙ্গী আছে, তেমনই আছে আলোর দুনিয়াতেও।

স্ট্রিং লাইট: এই আলোর জন্য ইলেকট্রিক লাইন করার দরকার নেই। বরং যে ইলেকট্রিক পয়েন্ট আছে, সেখানে স্ট্রিং লাইটের প্লাগ গুঁজে দিলেই কাজ হয়ে যাবে। কিছু লাইটে আবার ব্যাটারি থাকে। এই লাইট গৃহসজ্জায় অনেক ভাবে কাজে লাগানো যায়। মেসন জারে এই লাইটের কয়েল ভরে দিন। ঘরের জানালায় বা দেওয়ালে এই লাইট লাগিয়ে তার ফাঁকে ফাঁকে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিতে পারেন নিজের পছন্দের ছবি। শিফন বা লেসের সাদা পর্দার আড়ালে এই স্ট্রিং লাইট ঝুলিয়ে দিলে তা অনেক বেশি উজ্জ্বল দেখায়।

আলোর জন্য ফল্‌স সিলিং

এখন যে ধরনের আলো হয়, বিশেষত কোভ লাইটিং বা অ্যামবিয়েন্ট লাইটিংয়ের সংজ্ঞা বদলে দিয়েছে এই কৃত্রিম ছাদ। তবে সব সময়ে পুরো ছাদ জুড়ে ফল্‌স সিলিং করার দরকার নেই। বরং ঘরের চার পাশ দিয়েও কৃত্রিম ছাদ তৈরি করে নিতে পারেন। ঘরে আলো লাগানোর পরিকল্পনা করার সময়ে দেখে নিন, ফল্‌স সিলিং লাগবে কি না। তা হলে গোড়াতেই কাজটা সেরে নিন। এই ঝামেলায় যেতে না চাইলে বেছে নিতে পারেন পেনডেন্ট, শ্যান্ডেলিয়ার, স্কন্স ইত্যাদি আলো।

মনে রাখবেন

• বিভিন্ন স্তরে ভাগ করে ঘরে আলো লাগানোর পরিকল্পনা করবেন। একটা আলোতেই ঘরের সব কাজ হয় না। ফলে ওয়াল স্কন্স, পেনডেন্ট, টাস্ক লাইট... নানা ভাগে ঘরের আলো সাজান।

• ঘরের দেওয়ালের রঙের উপরে নির্ভর করে কত ওয়াটের আলো রাখবেন সেই ঘরে। হালকারঙা দেওয়ালে যে আলোয় কাজ হবে, গাঢ় দেওয়ালে তাতে কাজ হয় না।

• ঘরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যোগ করে যত ফুট হয়, খেয়াল রাখবেন শ্যান্ডেলিয়রের ব্যাস তত ইঞ্চি হবে। কেনার সময়ে এই মাপটা মাথায় রাখবেন।

• আলো কমানো বাড়ানোর জন্য ডিমার ব্যবহার করতে পারেন।

আলোর সাজে গ্ল্যামার ফিরুক আপনার ঘরের। দেখবেন নিজের মধ্যেও সেই গ্ল্যামারের ছোঁয়া উপলব্ধি করতে পারছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement