সম্প্রতি বিড়লা সভাঘরে অনুষ্ঠিত হল ‘সুর’ আয়োজিত ‘সুর ফেস্টিভ্যাল ফর মিউজিক অ্যান্ড ডান্স’। উদ্বোধনে ছিলেন গিরিজা দেবী। এ ছাড়াও ছিলেন সমীরেশ্বর ব্রক্ষ্মচারী মহারাজ, অলকানন্দা রায়। প্রথম দিনের প্রথম নিবেদন ছিল সংহিতা নন্দীর কণ্ঠে খেয়াল। তাঁর নিবেদন ছিল প্রথমে রাগ পুরিয়া ধাণেশ্রী ও পরে রাগ খাম্বাজ-এ একটি ঠুমরি। সংহিতার গানে পরিণতবোধ, সুরেলা। তবলায় অরিন্দম চক্রবর্তী এবং হারমোনিয়াম-এ সনাতন গোস্বামী। দ্বিতীয় নিবেদনে ছিল সুজাতা মহাপাত্র এবং শাশ্বতী সেন-এর ওড়িশি ও কত্থক-এর যুগলবন্দি। তবলায় সঙ্গত করেন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।
দ্বিতীয় দিনের প্রথমে ছিল দেবপ্রিয় অধিকারী-র কণ্ঠে খেয়াল ও ঠুমরি-র উপস্থাপন। তিনি শুরু করেন রাগ শুদ্ধ কল্যাণে খেয়াল ‘রৈনওয়াঁ জাগি’। পরে দ্রুত ‘তানন গায়ে বাজায়ে’ দিয়ে। এরপর মাঝ-খাম্বাজ-এ ‘জাগ পড়ি ম্যায় তো পিয়া’ ঠুমরিটিতেও বেনারস ঘরানার পূরব অঙ্গের বোল-বনাও ও তার সঙ্গে পদ্মবিভূষণ গিরিজা দেবী-র তালিমের প্রভাব সুস্পষ্ট। তবলায় সুশান্ত তালুকদার ও হারমোনিয়ামে ধরমনাথ মিশ্র-র পরিমিত ও যোগ্য সঙ্গত দেবপ্রিয়-র গানে অন্য মাত্রা যোগ করে।
দ্বিতীয় নিবেদনে ছিলেন তবলায় কুমার বসু। তিনি তিন তালে তবলা লহরা পেশ করেন। তাঁকে সঙ্গ দেন তাঁরই ভ্রাতুষ্পুত্র রহেন বসু। হারমোনিয়ামে সঙ্গত করেন সনাতন গোস্বামী। তৃতীয় তথা শেষ সন্ধ্যার প্রথম পরিবেশনা ছিল সমন্বয় সরকারের সেতার। তিনি শুরু করেন রাগ ‘শ্রী’ দিয়ে, যা প্রচলিত হলেও এই সময় বহুশ্রুত নয়। প্রথমে আলাপ-জোড় তারপর ধামারে এবং দ্রুত আড়া চৌতালে গৎ। শেষে দ্রুত তিন তাল ও ঝালা। তবলায় উস্তাদ সাবির খান সাহেবের জ্যেষ্ঠ পুত্র আরিফ খানের সঙ্গত অনবদ্য। তানপুরায় রোহিত দে। এর পরে ছিল দেবপ্রিয় ও সমন্বয়-এর মিনিট কুড়ির একটি যুগলবন্দি।
শেষে ছিল বেনারস ঘরানার পদ্মভূষণ পণ্ডিত রাজন মিশ্র ও পণ্ডিত সাজন মিশ্রর খেয়াল। শুরু করেন আনন্দ কল্যাণে খেয়াল ‘এ বারে বারে সাঁইয়া’ দিয়ে এবং পরে দ্রুত ‘আজ হুনা আয়ে’। এর পর পেশ করেন রাগ হাম্বীর, কামোদ ও শেষে ভৈরবী-তে একটি ভজন। তবলায় কুমার বসু ও হারমোনিয়াম-এ ধরমা নাথ মিশ্র। সমগ্র অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত ধ্রুপদী আঙ্গিকে সঞ্চালনা করেন রায়া ভট্টাচার্য।
সুর ও ছন্দে
চৈতী ঘোষ
সুতপা তালুকদারের তত্ত্বাবধানে সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে আয়োজিত হল এই প্রতিষ্ঠানে তালিমরত শিক্ষার্থীদের নৃত্যানুষ্ঠান, ‘নৃত্যমেলা’। জয়দেবের গীতগোবিন্দ আধারিত ‘শ্রীতকমলা’ ছিল সেদিনের অনুষ্ঠানের প্রথম নিবেদন। এরপর একগুচ্ছ শিশুশিল্পীর দলগত নৃত্য দর্শকদের মাতিয়ে তোলে। এর মধ্যে বন্দেমাতরম্, বুদ্ধং স্মরণং গচ্ছামী ছাড়াও খেমটা তালে নিবদ্ধ ‘নাতাতি তিতিতিনাটানাগর’ পদটির নিপুন লয়বিন্যাস, বিশেষত পদ্য, সুর ও ছন্দের মূর্চ্ছনায় প্রেক্ষাগৃহ মুখরিত হয়। অনুষ্ঠানের স্বাদ বদল করে অভিভাবকদের ‘বসন্ত আবাহন’। এরপর বিলাহারি, শঙ্করাভরনম্ ও সাভেরী রাগে নিবদ্ধ একগুচ্ছ পল্লবী পরিবেশন করে গুরুকুলের সদস্যরা। এছাড়া বিভুষনপুষ্পে নৃত্যপদটিতে সীতার শৃঙ্গার ও রূপবর্ণনা এবং দেবী দুর্গার গরিমা সমৃদ্ধ ‘গন্ধেশ্বরী স্ত্রোত্র’ বিশেষ প্রসংশনীয়। গুরু সুতপা তালুকদারের সান্নিধ্যে দীর্ঘ অনুশীলন ও শিষ্যদের নিষ্ঠা ও নৈপুন্যের যুগপৎ প্রকাশ ঘটে এই উপস্থাপনাদ্বয়ে। অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে জয়দেবের গীতগোবিন্দ গৃহীত বহুলচর্চিত ‘অষ্টাপদী’ নৃত্যাংশের মাধ্যমে। সমগ্র অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সৌরজা ঠাকুর। আয়োজক-সাউথ গুরুকুল সোসাইটি।
গান ও পাঠে
অন্বেষার অনুষ্ঠানে শুরুতেই গাইলেন সাহানা বদ্যি। পরে রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে বাংলা আধুনিক গান গাইলেন কমলিকা চক্রবর্তী। তবে বেশ ভাল গাইল শিশুশিল্পী নীলার্ঘ মুখোপাধ্যায়। তানিয়া দাশের ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে’ অন্য মাত্রা এনে দেয়। এর পর বাচিক শিল্পী সুপ্রকাশ মুখোপাধ্যায় শোনালেন আবৃত্তি এবং শ্রুতিনাটক। ভাল লাগল শমীক পাল, প্রবুব্ধ রাহা, শ্যামল ভট্টাচার্য, দীপঙ্কর পাল, তনুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, সুতপা চৌধুরী প্রমুখ শিল্পীর গান। এ ছাড়াও আবৃত্তি করলেন স্বাগতা পাল।
লোকগানে
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে রুমা নাগ শোনালেন দুটি লোকগান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘শাল কাঁদে পিয়াল কাঁদে’। পরে শামা রহমান শোনালেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। সুদেষ্ণা সান্যাল শোনালেন ‘গহন কুসুম’। এ ছাড়াও ছিলেন বিশ্বরূপ রুদ্র।
স্বয়ংসিদ্ধা
চৈতী ঘোষ
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল গিরিধারী নায়েক ও সুজাতা মহাপাত্রের শিষ্যা শ্রুতির ওড়িশি নৃত্য। প্রথম নিবেদন ছিল কামবর্ধিনী রাগ ও একতালে নিবদ্ধ গুরুবন্দনা। পরে হংসধ্বনি রাগে নিবদ্ধ ওড়িশি নৃত্যের ধারাবাহিক পদ ‘পল্লবী’ দক্ষতার সঙ্গে পরিবেশন করেন শ্রুতি। পরিচ্ছন্ন দেহভঙ্গিমা ও সুদক্ষ পদকর্মে দীর্ঘ অনুশীলনের ছাপ বর্তমান। তবে মুখজ অভিনয়ের ক্ষেত্রে যত্নবান হলেই শ্রুতি নিজেকে স্বমহিমায় মেলে ধরতে পারবে আশা করা যায়। আয়োজক স্বয়ংসিদ্ধা।
শুধু গান নয়
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের বাংলা গান শোনালেন অমিতবন্ধু ঘোষ। সুনির্বাচিত গানগুলি শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। পরে নবীন শিল্পী সুস্মিতা ঘোষের গানগুলি বেশ নজর কাড়ে। কলকাতা উৎসবের সম্পাদক সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন অতিথিদের হাতে স্মারক উপহার তুলে দিলেন। অনুষ্ঠানে এসেছিল ছোট্ট রোশন আলি।
মনে ধরে
সম্প্রতি সরগরমের অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হয় কল্যাণ সেন বরাটকে। শুরুতেই ছিল সমবেত সঙ্গীত। প্রথম পর্বে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনালেন প্রিয়াঞ্জনা দাস। গাইলেন ‘তোমার পূজার ছলে’, ‘সহে না যাতনা’। এ ছাড়াও ছিলেন বিশ্বরূপ পাল, বেলা সাধুখাঁ, ইন্দ্রাণী ঘোষ বসু।