Aqua Bag

অ্যাকোয়া ব্যাগে বাজিমাত

শারীরচর্চায় ক্রমশ জনপ্রিয় সরঞ্জাম হয়ে উঠছে জলভর্তি এই বিশেষ ব্যাগ

Advertisement

কোয়েনা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:৪১
Share:

রোজ একই ধরনের শারীরচর্চা, একই সরঞ্জাম ব্যবহার করে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে যান। এক্সারসাইজ়েও নতুনত্ব প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন অ্যাকোয়া ব্যাগ। জলভর্তি বিশেষ ধরনের এই ব্যাগের ব্যবহার খানিকটা ডাম্বেল, বারবেল, কেটলবেলের মতোই। ২০১৫ সালে আবিষ্কার হয় অ্যাকোয়া ব্যাগ। ক্রমশ তা শারীরচর্চার জনপ্রিয় সরঞ্জাম হয়ে উঠছে।

Advertisement

অ্যাকোয়া ব্যাগের ব্যবহার

ডাম্বেল, কেটলবেল যেমন বিভিন্ন ওজনের হয়, অ্যাকোয়া ব্যাগও তেমনই। যার যেমন ওজন প্রয়োজন, সেই অনুযায়ী এই ব্যাগে জল ভরতে হয়। ফিটনেস প্রশিক্ষক গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “শারীরচর্চার সময়ে এই জল ক্রমাগত নড়াচড়া করে, যা শরীরের উপরে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। ক্যালরি বার্নের পাশাপাশি পেশির শক্তি, ফ্লেক্সিবিলিটি, স্টেবিলিটি বাড়াতে, অস্থিসন্ধির ব্যথা কমাতে কাজে লাগে এই অ্যাকোয়া ব্যাগ ওয়ার্কআউট। এতে সামগ্রিক ভাবে বিভিন্ন মাসলের কো-অর্ডিনেশন, ব্যাল্যান্সও বাড়ে।”

Advertisement

রকমভেদ

অ্যাকোয়া ব্যাগ বিভিন্ন ধরনের হয় -

  • অ্যাকোয়া বক্সিং ব্যাগ: নাম অনুযায়ী বক্সিং ব্যাগের মতোই দেখতে এই অ্যাকোয়া ব্যাগ গোল বা লম্বাটে আকৃতির হয়। সাধারণ অ্যাকোয়া ব্যাগের তুলনায় এর বাইরের দেওয়াল বেশি মজবুত। বক্সিং, কিকবক্সিং, মার্শাল আর্ট ইত্যাদির প্র্যাক্টিসে এই ব্যাগ ব্যবহার করা হয়।
  • অ্যাকোয়া কোর ব্যাগ (সিলিন্ড্রিক্যাল): নলাকৃতি বা চোঙাকৃতি এই ব্যাগের দু’পাশে হাতল থাকে। স্কোয়াট, লাঞ্জেস, প্রেস, রাশিয়ান টুইস্ট ইত্যাদিতে এই ব্যাগ ব্যবহার করা হয়।
  • অ্যাকোয়া স্যান্ডব্যাগ স্টাইল ব্যাগ: ক্লিনস, স্ন্যাচ, প্রেস, ক্যারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যাগ কাজে লাগে। এ ধরনের ব্যাগের গায়ে একাধিক হাতল থাকে। প্রয়োজন অনুযায়ী তার স্থান বদলও করা যায়।
  • অ্যাকোয়া কেটলবেল: জল ভর্তি এই ব্যাগ দেখতে যেমন কেটলবেলের মতো, তেমন এর কাজও। সুইং, স্ন্যাচিং ইত্যাদি এক্সারসাইজ়ের জন্য উপযোগী।
  • অ্যাকোয়া ডাম্বেল: দেখতে ছোট ডাম্বেলের মতো। সাধারণত জোড়ায় ব্যবহার করা হয়। সহজে গ্রিপ করা যায়। বাইসেপ কার্ল, শোল্ডার প্রেস, ফ্রন্ট রাইজ় ইত্যাদিতে কাজে লাগে।
  • অ্যাকোয়া স্লোশ পাইপ: অ্যাকোয়া ব্যাগ ওয়ার্কআউটের অ্যাডভান্স স্টেজে ব্যবহার করা হয়। লম্বা টিউব বা পাইপের মতো এই ব্যাগের ভিতরে জল নড়াচড়া করে, যার ফলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা কষ্টকর হয়। স্কোয়াট, ওয়াকিং লাঞ্জেস ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।

ফিটনেস ট্রেনার অরিজিৎ ঘোষালের কথায়, “অ্যাকোয়া ব্যাগ ওয়ার্কআউট করার আগে ঠিক ব্যাগ বেছে নেওয়া জরুরি। প্রাথমিক পর্যায়ে হালকা ব্যাগ দিয়ে শারীরচর্চা শুরু করুন। অ্যাকোয়া ব্যাগের সাহায্যে কার্ডিয়ো, অ্যাবস, কোর, গ্লুটস, হিপ ইত্যাদি পেশির ব্যায়াম করা সম্ভব।” ক্লিন, প্রেস, ওভারহেড ক্যারি, রাশিয়ান টুইস্ট ইত্যাদি পাঁচ-ছ’টি ব্যায়াম নিয়ে একটি সেট তৈরি করে সার্কিট করার পরামর্শ দিলেন অরিজিৎ।

অ্যাকোয়া ব্যাগের সুবিধে

এতে শরীরের স্ট্রেংথ, স্টেবিলিটি, ফ্লেক্সিবিলিটি যেমন বাড়ে, তেমনই মাথার সঙ্গে শরীরের সমন্বয়ও বাড়ে। নিয়মিত অ্যাকোয়া ব্যাগ ট্রেনিংয়ে দৈনন্দিন কাজে বা খেলার মাঠে শরীর দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।

  • অ্যাকোয়া ব্যাগের জল আঘাত শোষণ করে, শরীরের উপরে কম প্রভাব ফেলে। ফলে সংবেদনশীল পেশি বা অস্থিসন্ধির উপরে কম চাপ পড়ে।
  • এই ওয়ার্কআউট কার্ডিয়োভাসকুলার সিস্টেমকে সক্রিয় করে। এতে হার্ট রেট বৃদ্ধি পায়, দ্রুত ক্যালরি বার্ন করা যায়, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
  • ব্যাগের ভিতরে জল ক্রমাগত নড়াচড়া করে, মূলত নীচের দিকে চাপ বাড়ায়। আর তা নিয়ন্ত্রণ করতে শক্তিশালী গ্রিপের প্রয়োজন হয়। নিয়মিত এর অভ্যেসে তাই কব্জি ও হাতের মাংসপেশির শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • অ্যাকোয়া ব্যাগের জল কমিয়ে বা বাড়িয়ে ব্যাগের ওজন বাড়ানো-কমানো যায়। ফলে বিগিনারস থেকে অ্যাডভান্স, যে কোনও ফিটনেস স্তরের মানুষের জন্যই এটি উপযুক্ত। ঘুরতে বেড়াতে গিয়েও যারা ওয়ার্কআউট করতে পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য এই ব্যাগ উপকারী। জল বার করে নিলেই এই ব্যাগ একদম হালকা।
  • অ্যাকোয়া ব্যাগের জলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে শারীরিক ফিটনেসের সঙ্গে প্রয়োজন মনোযোগও। ফলে এই ব্যায়াম শরীরের সঙ্গে মনের উপরেও নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায়, মনঃসংযোগ ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

সতর্ক থাকুন

যাঁরা এই পদ্ধতি নতুন শিখছেন, তাঁদের প্রথম দিকে অ্যাকোয়া ব্যাগ নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা হতে পারে। বেসিক মুভমেন্ট, রোটেশনাল প্যাটার্ন না শিখে অ্যাকোয়া ব্যাগ ব্যবহার করতে গেলে বেকায়দা লেগে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। আগে কোর মাসলের শক্তি না বাড়িয়ে অ্যাকোয়া ব্যাগ ট্রেনিং শুরু করলে তেমন উপকার পাওয়া যাবে না। তাই অবশ্যই প্রশিক্ষকের নজরদারিতে ব্যায়াম করুন। সাধারণ ক্ষেত্রে এক্সারসাইজ়ের সময়ে সহজে ওজন বাড়ানো–কমানো যায়। কিন্তু জল ভরে বা কমিয়ে অ্যাকোয়া ব্যাগে ওজন বাড়ানো–কমানো কিন্তু বেশ ঝক্কির। সঙ্গে জল লিকেজের সমস্যাও থাকে। তা ছাড়া, হার্টের নির্দিষ্ট কোনও সমস্যা থাকলে, ভারী ওজন তোলা বারণ হলে অবশ্যই অ্যাকোয়া ব্যাগ ট্রেনিং এড়িয়ে চলুন। পিঠে বা কোমরে ব্যথার ক্ষেত্রেও এ ধরনের ট্রেনিং না করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অরিজিৎ বলছেন, “মূলত এটি লো-ইমপ্যাক্ট ওয়ার্কআউট। ফলে যাঁরা মাসল বাড়াতে চান, তাঁদের ক্ষেত্রে কিন্তু এই ব্যায়াম বিশেষ উপকারী নয়।”

লো-ইমপ্যাক্ট ওয়ার্কআউট হলেও অ্যাকোয়া ব্যাগ দিয়ে হাই-ইন্টেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং সম্ভব। রোটেশনাল মুভমেন্ট যে ধরনের এক্সারসাইজ়ে বেশি হয়, সে ধরনের শারীরচর্চায়ও এই ব্যাগ কার্যকরী। বক্সার, অ্যাথলিট, খেলোয়াড়দের জন্য এই ওয়ার্কআউট বেশ ভাল। তবে প্রশিক্ষকেরপরামর্শ ও নজরদারিতে তা ব্যবহার করতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement