সর্ষের তেল খেলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে

এমন কি সপ্তাহে দু-দিন তৈলাক্ত মাছ ও একদিন এক চামচ ঘি-ও খেতে পারেন। বলছেন হৃদশল্যবিদ ডা: সত্যজিৎ বসু। কথা বললেন সুজাতা মুখোপাধ্যায়। যোগাযোগ-৯৮০০৮৮১৭০১ প্র: এখনও অবধি হার্ট অ্যাটাকেই কি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু? উ: হ্যাঁ। শুধু মাত্র প্রতি বছর ভারতেই প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের হার্ট অ্যাটাক হয়। সারা পৃথিবী জুড়েই যদিও এর রমরমা, আমাদের দেশে সমস্যা আরও বেশি। তবে করোনারি আর্টারি ডিজিজের কারণে সব থেকে বেশি মৃত্যু হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

প্র: এখনও অবধি হার্ট অ্যাটাকেই কি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু?

Advertisement

উ: হ্যাঁ। শুধু মাত্র প্রতি বছর ভারতেই প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের হার্ট অ্যাটাক হয়। সারা পৃথিবী জুড়েই যদিও এর রমরমা, আমাদের দেশে সমস্যা আরও বেশি। তবে করোনারি আর্টারি ডিজিজের কারণে সব থেকে বেশি মৃত্যু হয়।

প্র: ঠিক কী কারণে এই করোনারি আর্টারি ডিজিজ হয়?

Advertisement

উ: অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিক, হাইপার টেনশন, নিয়মিত ব্যায়াম না করা এর বড় কারণ। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, ধূমপান বা তামাকও এই বিপদকে ডেকে আনছে। তবে এটাও ঠিক, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা বংশগত কারণেও হয়। ফলে খুব কম বয়সেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

প্র: আমরা সাধারণ মানুষ বুঝব কী করে যে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে?

উ: ঠিক বুকের মাঝখানে চাপ বা খুব ব্যথা অনুভব হবে।

প্র: কিন্তু গ্যাস বা অম্বল হলেও তো তাই হয়?

উ: না, এই ক্ষেত্রে বুকের ব্যথা অনেক সময় চোয়াল বা কাঁধ এমনকী হাত অবধি ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে প্রচুর ঘাম। তবে যাঁরা ডায়াবেটিক রোগী তাঁদের অনেক সময় সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। অনেক সময় রোগীদের মনে হয় তাঁদের পেট ফেঁপে রয়েছে বা গ্যাসট্রাইটিস হয়েছে।

প্র: এ ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ কী করা উচিত?

উ: যদি মনে হয় এ রকম কষ্ট হচ্ছে দুটো অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট জলে গুলে খেয়ে নিতে হবে। ক্লোপিডোগ্রেল ট্যাবলেট খান চারটে। জিভের নীচে সরবিট্রেট দিয়েই কাছাকাছি কোনও হাসপাতালে নিয়ে যান, যেখানে ২৪ ঘণ্টা কার্ডিয়াক ক্যাথল্যাব খোলা থাকে। দু তিন ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছতে পারলে প্রাইমারি অ্যা়ঞ্জিওপ্লাস্টি করে হার্টের মাসলকে বাঁচিয়ে তোলা যায়। একাধিক আর্টারিতে ব্লক বেরোলে তখন যে ধমনির কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে শুধু সেটিই খুলে দেওয়া হয়। যাকে বলা হয়, কালপ্রিট ভেসেল অ্যা়ঞ্জিওপ্লাস্টি।

প্র: আচ্ছা আপনি তো আগে বলেছেন তিনটি ধমনি ব্লক থাকলেও তা ওষুধ দিয়েই নিরাময় সম্ভব। সত্যি?

উ: নিশ্চয়ই। যদি হার্টের পাম্পিং বা ইজেকশন ফ্র্যাকশন স্বাভাবিক থাকে এবং ওষুধ খেয়ে বুকের ব্যথা কম হয়, তবে ওষুধ দিয়েই তা সারানো ভাল। এ ক্ষেত্রে অ্যা়ঞ্জিওপ্লাস্টি বা বাইপাস সার্জারি করে কোনও লাভ হয় না। কিন্তু হার্টের পাম্পিং যদি কমে গিয়ে থাকে বা ওষুধ খেয়েও স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে গেলে বুকে ব্যথা হয় তবে বাইপাস করিয়ে নেওয়া ভাল।

প্র: শুনেছি ইজেকশন ফ্র্যাকশন বা হার্টের পাম্পিং ৩০-এর নীচে হলে বাইপাস সার্জারি করে কোনও লাভ হয় না। তাই কি?

উ: সে ক্ষেত্রে কার্ডিয়াক এম আর আই বা মায়ো-কার্ডিয়াল পারফিউশন করে দেখে নিতে হবে যে হার্টের মাংসপেশিতে কোনও প্রাণ আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে বাইপাস সার্জারিতে লাভ হবে।

প্র: প্রায়ই শুনি হার্ট চলমান অবস্থাতেই বাইপাস সার্জারি করা যায়?

উ: হ্যাঁ। একে বলা হয় বিটিং হার্ট সার্জারি। এটা নতুন কিছু নয়। ১৯৯৮ সাল থেকে এই সার্জারি করা হচ্ছে এবং এতে খুব ভাল ফল পাওয়া যাচ্ছে। অক্টোপাস নামে একটি যন্ত্রের সাহায্যে এই সার্জারি করা হয়।

প্র: তা হলে বাইপাস সার্জারিতে ‘লিমা-রিমা-ওয়াই’ কী?

উ: বুকের পিছনে থাকে দুটি ধমনি লিমা ও রিমা। এদেরকে জুড়ে লিমা-রিমা-ওয়াই করা হয়। এর সাহায্যে গ্র্যাফটিং করে হার্টের মাংসপেশিতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ানো হয়।

প্র: ‘লিমা-রিমা-ওয়াই’তে সত্যিই লাভ কিছু হয়?

উ: রোগীর আয়ু পঁচিশ থেকে তিরিশ বছর অবধি বেড়ে যায়।

প্র: কিন্তু সব রোগীর ক্ষেত্রেই কি ‘লিমা-রিমা-ওয়াই’ করা যায়?

উ: হার্ট অ্যাটাকের পরে বা হার্টের ইজেকশন ফ্র্যাকশন যদি ৩০ থেকে ৩৫ এর নীচে থাকে বা করোনারি ধমনিতে ডিজিজ থাকে সে ক্ষেত্রে ‘লিমা-রিমা-ওয়াই’ না করে লিমা এবং পায়ের থেকে ভেন নিয়ে গ্র্যাফটিং করা যেতে পারে।

প্র: কিছু মনে করবেন না, ইদানীং প্রায়ই শোনা যায়, দরকার না থাকলেও রোগীকে বাইপাস সার্জারি করে দেওয়া হয়?

উ: ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে কোনও যুক্তি খাটে না। তিনটি ধমনি ব্লক থাকলে বাইপাস সার্জারি করে নেওয়াই ভাল।

প্র: বাইপাসে এখন কী রকম খরচ পড়ে?

উ: বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এক লক্ষ নব্বই হাজার টাকা থেকে দু’লক্ষ টাকার মধ্যেই সম্ভব।

প্র: একসঙ্গে এতগুলো টাকা। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে খুব বোঝা নয়?

উ: কেউ যদি দু-কাপ চা বা দিনে দুটো সিগারেট কম খেয়ে প্রতিদিন দশ টাকা করে জমিয়ে রাখে তা হলে বছরে হয় তিন হাজার ছ’শো পঞ্চাশ টাকা। যা থেকে ইনসিওরেন্স করানো যায় অনায়াসেই। এই পদ্ধতিতেই তিন থেকে চার লক্ষ টাকা হাতে পাওয়া কোনও ব্যাপারই নয়। বেড়াতে যাওয়া থেকে শুরু করে বাইরে খাওয়া বা জামা-কাপড় কেনার একটা বাজেট সবাই করে থাকেন। সে রকমই দশ টাকা করে জমিয়ে স্বাস্থ্যের বাজেট অবশ্যই করা উচিত।

হার্ট অ্যাটাক ঠেকাতে

•দিনে ৪০-৬০ মিনিট যতটা পারেন জোরে জোরে হাঁটুন।

•ওজন, বিশেষ করে ভুঁড়ি যাতে না বাড়ে সে দিকে খেয়াল রাখুন।

•ডায়াবেটিস ও হাইপ্রেশারকে বশে রাখুন যে কোনও মূল্যে।

•যোগা ও মেডিটেশন করে স্ট্রেস কমান। এতে হার্টও ভাল থাকে।

•লো ক্যালোরির সুষম খাবার খান। সপ্তাহে দু-দিন তৈলাক্ত মাছ ও একদিন এক চামচ ঘি খাবেন। অল্প করে বাদাম খান নিয়মিত।

•খাসির মাংস, চর্বি, অতিরিক্ত তেল ও ফাস্টফুড যত কম খাবেন তত ভাল। মদ সপ্তাহে দু-তিন দিন দু-এক পেগের বেশি নয়।

প্র: হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে ফাস্ট ফুডের কী সম্পর্ক?

উ: সম্পর্ক আছে বই কী। যে ধরনের তেল দিয়ে ফাস্ট ফুড বানানো হয় তাতে থাকে ট্রান্স ফ্যাট। হার্টের ধমনিতে চর্বির ডেলা জমিয়ে ইস্কিমিক হৃদরোগকে ডেকে আনতে সে একাই একশো।

প্র: হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে কোন তেলে রান্না করা উচিত?

উ: সর্ষের তেলে রান্না করুন। কারণ এই তেল কড়াইয়ে উচ্চ উষ্ণতায় ভাঙে না, অবিকৃত থাকে। মনে রাখবেন সর্ষের তেল খেলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে।

প্র: আর অলিভ অয়েল?

উ: অলিভ অয়েল অবশ্যই ভাল। স্যালাডে মেশালে বা মাখনের বদলে ব্রেডে মাখিয়ে খেলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমে।

প্র: আজকাল শুনছি রাইস ব্র্যান অয়েলের কথা। এই তেল ভাল?

উ: রাইস ব্র্যান তেলের সঙ্গে স্যাফায়ার তেল মিশিয়ে খান। ক্যানোলা ও ফ্ল্যাক্সিড তেল, নারকেল এবং তিল তেল মিশিয়ে খেলেও ভাল হয়।

প্র: কিন্তু এত কাল যে শুনে এসেছি নারকেল তেল খাওয়া খারাপ!

উ: একদম নয়। নারকেল তেলকে যতটা খারাপ ভাবা হতো, ততটা সে নয়, প্রমাণিত।

প্র: আর মাখন? কিছু দিন আগে পর্যন্ত জানতাম মাখনের বদলে মার্জারিন খাওয়া ভাল। এখন আবার শুনছি মার্জারিনে বিপদ বেশি।

উ: মার্জারিনে ট্রান্স ফ্যাট বেশি থাকে। সেই তুলনায় মাখন ভাল। সপ্তাহে দু-একদিন খেতে পারেন।

প্র: সব নিয়ম মেনে চললেই কি হার্ট অ্যাটাক ঠেকানো যায়?

উ: বংশে থাকলে নিয়ম মানা সত্ত্বেও রোগ হতে পারে। তবে নিয়ম মানলে প্রকোপ কম থাকে। তা ছাড়া সমস্যা হয়েছে বুঝতে পারামাত্র ব্যবস্থা নিলেও বিপদের পরিমাণ কম থাকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement