প্র: ওজন বাড়ছে। তোড়জোড় করে ডায়েটিং শুরু করলেও এটা খাব না, সেটা খাব না’র মধ্যে নিজেকে আটকাতে পারছি না।
উ: ওজন কমাতে গেলে না খেয়ে থাকতে হবে, তেমনটা একেবারেই নয়। বরঞ্চ খাওয়া বন্ধ করলে বা অনেক ক্ষণ না খাওয়ার অভ্যেস থাকলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এতে দেহের বিএমআর কমে যায়। যার থেকে ওজন বাড়ার প্রবণতা বাড়ে।
প্র: কিন্তু ডায়েট চার্ট মানেই শুধু ফল আর জল খাও গোছের ব্যাপার...
উ: একেবারেই নয়। স্বাভাবিক ভাত, ডাল, তরকারি, মাছ খেয়েও আপনি দিব্যি ডায়েটিং করতে পারেন। তাতেও ওজন ঝরবে বেশি ও শরীরেরও কোনও ক্ষতি হবে না।
প্র: এই যে বলা হয় শুধু প্রোটিন খান। ডায়েটিং-এ কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট কিচ্ছু খাবেন না।
উ: ম্যাগাজিন খুললে এ ধরনের ডায়েটিং-এর কথা খুব দেখা যায়। শুধু প্রোটিন খেয়ে থাকা। মাছ, ডিম, মাংস। কোনও কার্বোহাইড্রেট যাবে না শরীরে। সাত দিন হয়তো সাত রকমের খাবার খেতে বলা হয়। এতে রোগা হতে পারেন বটে। কিন্তু সেটা ধরে রাখা মুশকিল হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ফল পাওয়া যায় না। আবার এমনও হতে পারে অন্য কোনও খাদ্যগুণ না ঢোকায় শরীরে এর ক্ষতিকর প্রভাবও পড়তে পারে।
প্র: তবে?
উ: রোজকার স্বাভাবিক খাবার খেয়েই ওজন কমাতে পারেন। শুধু পরিমাপের দিকটা খেয়াল রাখতে হবে। যে ভাবে ছোট থেকে খেয়ে অভ্যস্ত সে খাবারের অভ্যাস বজায় রেখে সবচেয়ে বেশি রোগা হওয়া যায়।
প্র: ভাত খাওয়া যাবে?
উ: খেতেই পারেন। ডায়েটিং করছেন বলে ভাত খেতে পারবেন না, এ রকম কোনও কথা নেই। যারা ভাত খেতে অভ্যস্ত, ভাত না খেলে তাদের বার বার খিদে পেয়ে যায়। আর ভাত না খেলে অনেকেই ভেবে বসেন ভাত খাই না, সুতরাং ওজন কমছে। আর সেই করে দুটো মিষ্টি খেয়ে ফেললেন। ভাত অবশ্যই খাবেন। কিন্তু মেপে। সেটা ডায়েটেশিয়ান আপনার ওজন, বয়স, উচ্চতা দেখে ঠিক করে দেবেন।
প্র: কিন্তু বলা হয় যে ওজন কমাতে ভাত না খেয়ে রুটি খেলে উপকার মেলে?
উ: তেমনটা নয়। ভাত ও রুটি দুটোই জটিল কার্বোহাইড্রেট। ভাত খেলে মুশকিল হল পরিমাণটা অনেক সময় বেঁধে রাখা যায় না। ভাল লাগল আরও দুটো ভাত খেয়ে নিলেন। তবে ভাত খিদে মেরে দেয়। অনেক ক্ষণ খিদে পাবে না। ডায়েটিং-এ এমন সব খাবার রাখতে হবে, যাতে বার বার খিদে না পায়। সুতরাং ভাত খেতে অভ্যস্ত হলে অবশ্যই খাবেন।
প্র: কী খেলে খিদে পাবে না?
উ: আপনার স্বাভাবিক খাবার। যেমন সকালে রুটি তরকারি, দুপরে ডাল, ভাত, তরকারি। ধরুন সকালে ফলের রস আর দুটো ডিমের সাদা অংশ খেলেন। দেখবেন খানিক বাদে খিদে পেয়ে গেল। তখন চার্টে যাই থাকুক না কেন, অনেকেই এটা সেটা খেয়ে ফেলেন। খিদে আটকে রেখে বেশি দিন ডায়েটিং করা যায় না। কিন্তু সকালে রুটি-তরকারি খান, দেখবেন অনেক ক্ষণ আর খিদে পেল না। খাই-খাই ব্যাপারটা চলে গেল। খাওয়াটা মানসিক প্রয়োজনও বটে।
প্র: কিন্তু শুনেছি ডায়েটিং মানেই ওটস বা কর্নফ্লেক্সস ?
উ: ওটস, কর্নফ্লেক্স, বা মাখন-পাউরুটি, সব কিছুই সকালে খাওয়া হয়, সব থেকে ভাল আটার রুটি আর তরকারি। এতে প্রচুর ফাইবার থাকে। তরকারিতে ভিটামিন, মিনারেল থাকে। তা ছাড়া যে খাবারে আপনি অভ্যস্ত সে রকম খাবার খেলে ডায়েটিং-ও সহজ হবে।
প্র: ঠিকই বলেছেন। ভাত না খেলে মনে হয় সারা দিনই যেন কিছু খাইনি।
উ: তাই বলে জমিয়ে অনেকটা খেয়ে ফেললেন, তা নয়। আসলে ডায়েটিং-এ প্রায় সবই খেতে পারেন। তবে পরিমাপটা মাথায় রেখে।
প্র: কিন্তু মেপেজুকে এক কাপ ভাত খেতে বললে কী আর খিদে মেটে? উল্টে বেশি খিদে পায়।
উ: খিদে পাবে কেন? তার সঙ্গে তো আপনি ডাল, তরকারি, মাছ সব খাচ্ছেন। এগুলোই তো ব্যালেন্স ডায়েট। বাঙালি খাবারের শুরু থেকে শেষ করলে দেখবেন সবক’টা পুষ্টিগুণ বজায় রয়েছে খাবারগুলোতে।
প্র: কী রকম?
উ: ধরুন বাঙালি খাবারের শুরুতেই থাকে তেতো। তা সে করলা ভাজাই হোক বা শুক্তো। করলায় থাকে প্রচুর আয়রন। আর এটি খাবার হজম করতে সাহায্য করে। তাই প্রথম পাতেই এটি দেওয়া হয়। তার পর ডাল হল ভেজিটেবল প্রোটিন। তরকারিতে থাকে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল। আর মাছে থাকে প্রোটিন ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। ভিটামিন ‘এ’, ‘ডি’ ও ক্যালসিয়াম, ফসফরাস। মানে শরীরের যা যা পুষ্টিগুণ দরকার, সবই পাচ্ছেন ডাল, ভাত, তরকারি থেকে। তেলের থেকে আপনি ফ্যাট পেয়ে যাচ্ছেন। শরীর চায় সুসংহত ব্যালেন্স খাবার। আমাদের বাঙালি খাবারের মধ্যে সেটা আছে।
প্র: কিন্তু এগুলোই তো রোজ খাচ্ছি। তবে ওজন বাড়ছে কেন?
উ: খেতে হবে পরিমাপ মতো। আপনার বয়স, ওজন ও কাজের ওপর নির্ভর করে ডায়েটেশিয়ান ঠিক করে দেবেন আপনার খাবারের তালিকা। খাওয়ার সময় সেটি মেনে চলতে হবে। আর তেলে-ঝোলে-অম্বলে খেলে চলবে না। বেশ করে তেল মশলা দিয়ে কষিয়ে রান্না করলে চলবে না।
প্র: তেল-মশলা বাদ?
উ: না। দিনে তিন থেকে চার চামচ তেল খেতে পারেন। সর্যের তেলে মাছ বা মাংস রান্না করুন। সাদা তেলে তরকারি। দামি অলিভ অয়েল খাওয়ার দরকার নেই। আর মশলায় প্রচুর খাদ্যগুণ রয়েছে। যেমন হলুদে থাকে অ্যান্টি অক্সি়ডেন্ট। ক্যানসার, অ্যালঝাইমার্স, বার্ধক্য রোগ, লিভারের অসুখ প্রতিরোধ করে। জিরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ডায়রিয়া বা বমি বমি ভাব আটকায়। বদহজম দূর করে। রসুন গাউট আর্থারাইটিসে উপকারী। ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করে। খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। কিন্তু মশলা কষানো চলবে না। তাতে খাদ্যগুণ চলে যাবে। তবে রান্না অনেকক্ষণ ফোটাবেন না।
প্র: তাড়াতাড়ি রোগার জন্য কিছু বলুন।
উ: ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ মতো মেপে খাবেন। তিন ঘণ্টা অন্তর অল্প খাবেন। দিনে তিন লিটার জল খাবেন।
যোগাযোগ-৯৮৩০১৫১৪১৩