Review of Digital Print

চলচ্চিত্র অনুপ্রাণিত কিছু স্তব্ধ ভাবনা

চলচ্চিত্রের চলমানতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নীতীশ রায় মানবিকতার হাহাকার, সর্বহারা মানুষের বেদনা এবং কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্যের স্তব্ধ মুহূর্তকে তাঁর চিত্রের বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছেন।

Advertisement

সোহিনী ধর

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪ ০৭:২৫
Share:

নীতীশ রায়ের ডিজিটাল ছবি।

চিত্র যখন চলমান হয়, তাকেই আমরা বলে থাকি চলচ্চিত্র। ভারতে চলচ্চিত্রের আবির্ভাব ঘটে ১৯১৩ সাল নাগাদ। দাদাসাহেব ফালকের নীরব সিনেমা ‘রাজা হরিশচন্দ্র’। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত বহু বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার দ্বারা নির্মিত হয়েছে উল্লেখযোগ্য সব চলচ্চিত্র, যা বিশ্বের দরবারে আমাদের দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। এ বিষয়ে আমরা সকলেই প্রায় অবগত। তবে চলচ্চিত্র মাত্রেই তার প্রেক্ষাপট নির্মাণ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। প্রখ্যাত শিল্পী, শিল্প নির্দেশক ও প্রোডাকশন ডিজ়াইনার নীতীশ রায় সেই স্তরের এক নির্মাণকর্তা, যিনি সম্প্রতি অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে তাঁর কিছু ডিজিটাল প্রিন্টের প্রদর্শনী করলেন। যৌথ ভাবে এই প্রদর্শনীতে আরও কিছু কাজ ছিল শিল্পী মনোজ পালের। দুই শিল্পীই তাঁদের ডিজিটাল প্রিন্ট দিয়ে প্রদর্শনীটির আয়োজন করেন।

Advertisement

চলচ্চিত্রের চলমানতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নীতীশ রায় মানবিকতার হাহাকার, সর্বহারা মানুষের বেদনা এবং কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্যের স্তব্ধ মুহূর্তকে তাঁর চিত্রের বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছেন। সত্তরের দশকে কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের প্রাক্তনী নীতীশ রায় ভারতের বহু প্রখ্যাত নির্দেশক, যেমন মৃণাল সেন, শ্যাম বেনেগাল, গুলজ়ার, কল্পনা লাজমি, রাজকুমার সন্তোষী প্রমুখের সঙ্গে কাজ করেছেন। এ ছাড়াও হায়দরাবাদের রামোজি ফিল্ম সিটি নির্মাণে তাঁর অবদান রয়েছে। তিনি ‘খারিজ’, ‘মান্ডি’ ইত্যাদি চলচ্চিত্রের জন্য সেরা আর্ট ডিরেক্টরের পুরস্কারে সম্মানিত। তবে এই নতুন মাধ্যমে তাঁর আর এক সৃষ্টিশীল দিকের পরিচয় পাওয়া যায়।

মানুষের দুঃখ-কষ্টের নিদারুণ আর্তনাদ তাঁর ছবিতে বারংবার ফুটে উঠেছে। ‘চিলড্রেন অ্যাট ওয়ার’ বা ‘ব্লিডিং সোলস’ অথবা ‘স্ট্রাইকিং টেরর’-এর মতো ছবিতে তা সুস্পষ্ট। পাশাপাশি, প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলির উজ্জ্বল রং, মাঝ আকাশে কখনও চাঁদ বা সূর্যের জ্যোতির্বলয়, দুর্গা ও অপুর কাশফুলের খেত দিয়ে দৌড়ে যাওয়া... কাজগুলির ইম্প্রেশনিস্ট আদল অনায়াসেই নজর কাড়ে।

Advertisement

অন্য দিকে, শিল্পী মনোজ পাল সত্তরের দশকে গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের প্রাক্তনী এবং দীর্ঘ দিন যাবৎ ডিজিটাল পেন্টিংয়ের চর্চায় নিমগ্ন। প্রবাসী এই শিল্পী সুপরিচিত ভাস্কর ও লেখক হিসেবেও। তাঁর যাবতীয় চিত্রের বিষয় ও ভাবনায় সিনেমার প্রতি শিল্পীর অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালবাসার নিদর্শন মেলে। আকিরা কুরোসাওয়া, ফেদেরিকো ফেলিনি, চার্লি চ্যাপলিন, আন্দ্রেই তারকোভস্কি, জাঁ লুক গোদার, সত্যজিৎ রায় প্রমুখ বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতাদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে ঋদ্ধ তাঁর প্রতিটি ক্যানভাস। প্রদর্শিত সিরিজ়টি তাই দর্শককে খুবই আকৃষ্ট করে। চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে নিবিড় সান্নিধ্যের ফলেই এমন সুরুচিপূর্ণ মনোজ্ঞ কম্পোজ়িশন নির্মিত হয়েছে।

চিত্র ও চলচ্চিত্র যে একে অপরের পরিপূরক, তারই উৎকৃষ্ট পরিচয় পাওয়া যায় এই দুই শিল্পীর কাজের মধ্য দিয়ে। বর্ষীয়ান এই দুই শিল্পীর সমকালীন মাধ্যম অর্থাৎ ডিজিটাল প্রিন্ট দ্বারা পরিবেশিত কাজের এই উৎকর্ষ দর্শকদের নতুন ভাবনায় সঞ্জীবিত করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement