Art Exhibition

প্রকৃতি ও প্রতিবেশ

প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার প্রায় সব দেশ। এমন পরিবেশে প্রকৃতির শান্তশ্রী রূপ নিয়ে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে শিল্পী পবিত্র সাহার এক একক প্রদর্শনী হয়ে গেল সম্প্রতি।

Advertisement

সোহিনী ধর

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৪৫
Share:

জলযান: অ্যাকাডেমিতে শিল্পী পবিত্র সাহার একক চিত্র প্রদর্শনীর কাজ। —ফাইল চিত্র।

আজ বিশ্ব জুড়ে প্রকৃতির যে ভয়াবহতা, তা নেহাতই হতাশার। প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার প্রায় সব দেশ। এমন পরিবেশে প্রকৃতির শান্তশ্রী রূপ নিয়ে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে শিল্পী পবিত্র সাহার এক একক প্রদর্শনী হয়ে গেল সম্প্রতি। আশির দশকের কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের প্রাক্তনী এই শিল্পীর কাজে প্রকৃতি ও তার শান্তময় রূপের মাধুর্য মনকে যেন এক সুসময়ের আশ্বাস জোগায়।

Advertisement

এই প্রদর্শনীতে মোট ১৮টি অ্যাক্রিলিক মাধ্যমে আঁকা ছবির মধ্যে বেশির ভাগ কাজেই নদীমাতৃক প্রকৃতির উপস্থাপন লক্ষণীয়। পৃথিবীতে তিন ভাগ জল ও এক ভাগ স্থল। জল মাত্রই জীবন। তাই সভ্যতার আদিকাল থেকে জল, জলযান— অর্থাৎ নৌকা কিংবা জাহাজ, তার বহুবিধ আকার, প্রকার, অলঙ্করণ ইত্যাদি বিষয়গুলি মানুষকে উৎসাহ জুগিয়েছে। সেই সব উৎকৃষ্ট নমুনার পরিচয় পেয়ে থাকি মিনোয়ান, মাইসেনিয়ান, গ্রিক, রোমান, ইজিপশিয়ান, মেসোপটেমিয়ান সভ্যতাগুলির শিল্পসম্ভারে। তাই এই বিষয়ের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরন্তন। তেমনই জল, নৌকা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে এই প্রদর্শনীটি সাজিয়েছেন শিল্পী পবিত্র সাহা। তাঁর ছবিগুলিতে বিস্তীর্ণ জলরাশি, নৌকায় স্তূপ করা পণ্যসামগ্রী, নৌকার ছাউনি, ভেঙে যাওয়া নৌকা ইত্যাদির বহুরূপ বিন্যাস দিয়ে নির্মিত সব চিত্রপট। নৌকার ব্যবহার বহু প্রকার। কখনও তা ব্যবসায়িক কাজে যুক্ত, তো কখনও দেবী দুর্গার আগমন ও বিসর্জনে, কখনও তা জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম— তবে পবিত্রর ছবির মধ্যে নৌকা নির্মাণ পর্ব থেকে তার ভগ্নরূপ বিশেষ ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ যেন মানুষের জীবনপ্রবাহে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নানা রূপ অধ্যায়ের যে দোলাচল, তারই এক প্রতীকী চিহ্ন হিসেবে নৌকার উপস্থাপন।

শিল্পী পবিত্র সাহা তাঁর শিক্ষানবিশ কালে কমার্শিয়াল আর্টের ছাত্র ছিলেন। আজও তিনি বিজ্ঞাপন জগতের বহু রকম কাজের সঙ্গে যুক্ত। বিজ্ঞাপন জগতের সঙ্গে এই নিবিড় সম্পর্কের ফলে, তাঁর চিত্ররচনার ক্ষেত্রেও সেই কাঠামোগত, আলঙ্কারিক বিন্যাস উল্লেখনীয়। নৌকাগুলির নিজস্ব ফর্ম ও তার আশপাশে বহু প্রকারের বাঁশ, লাঠি ইত্যাদি দ্বারা সজ্জিত যে সুঠাম বাঁধুনি, তা এক নান্দনিক আমেজ তৈরি করে। শিল্পীর সুষম পরিমিতি বোধের পরিচয় ঘটায়। কোনও কোনও ছবিতে আবার মাছ ধরার জন্য বাঁশের বেড়া, অথবা জাল শুকোনোর যে বিস্তার ও ছান্দিক রূপ, তা নৌকার বিন্যাসগুলির মধ্যে বৈচিত্র সৃষ্টি করে। অন্য দিকে, বিস্তৃত নীল জলরাশির মাঝে সাজানো নৌকাগুলি এক অনন্তের আভাস জোগায়। কারণ কোনও ছবিতেই প্রায় কোনও দিগন্তরেখা দেখা দেয় না। ‘স্পেস’-এর এই পরিব্যাপ্ত বিস্তার, নৌকা ও তার আনুষঙ্গিক আকারগুলির সমন্বিত রূপসমূহ, ফর্ম ও স্পেসের মাঝে এক লুকোচুরি খেলে বেড়ায়। এই মায়াজাল যেন মানুষের জীবনের দৈনন্দিন ঘাত-প্রতিঘাতের এক সঙ্কেতস্বরূপ। নদীমাতৃক বাংলায় এমন দৃশ্য খুবই প্রচলিত। কিন্তু পবিত্র সেই চিরাচরিত নদীবাঁকের রূপগুলিকে এক শৈল্পিক বিন্যাস প্রদান করায়, ছবিগুলি এক চমৎকার মাত্রা পেয়েছে। একই সাথে ডিজ়াইনের উৎকর্ষও বিশেষ ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

Advertisement

প্রায় সব ছবিই বার্ডস আই ভিউ পার্সপেক্টিভ থেকে চিত্রিত। ফলত নৌকার ভিতর ও বাইরের সার্বিক রূপ দৃশ্যমান। এ যেন বর্তমানের ড্রোন মাধ্যমে শিল্পীর দেখা ও তার পরিবেশন। আজকের যান্ত্রিক জীবনযাত্রার মাঝে প্রকৃতির এই সহজ সাবলীল চিত্রায়ণ, জলরাশির এই আদিগন্ত বিস্তার, নৌকাগুলির এই আলঙ্কারিক সমারোহ দর্শককে এক সুস্থিত ভাবনার সঙ্গে যুক্ত করে ও আনন্দ প্রদান করে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement