Gyan Manch

যুগ্ম কত্থক নৃত্য উৎসব

প্রবীণ নলিনী-কমলিনী তাদের প্রস্তুতি আরম্ভ করেন শিবস্তুতি দিয়ে।

Advertisement

শতাব্দী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২০ ০১:৪৪
Share:

মঞ্চে তিন প্রজন্মের কত্থকশিল্পী

পদাতিক ডান্স থিয়েটার ও নয়াদিল্লির সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমির যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি জ্ঞান মঞ্চে আয়োজিত হয়েছিল এক ‘যুগ্ম কত্থক নৃত্য উৎসব’। আমন্ত্রিত দুই শিল্পী যুগলের মধ্যে প্রথমে প্রখ্যাত কত্থক-ভগিনীদ্বয় নলিনী আস্থানা ও কমলিনী আস্থানা, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কারে ভূষিত তাঁদের গুরু জিতেন্দ্র মহারাজের বোল পড়হন্তের সঙ্গে বেনারস ঘরানার কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন, যা রাজস্থানের পণ্ডিত জানকীপ্রসাদ প্রণীত প্রাক-মুঘল আমলের মন্দিরকেন্দ্রিক শৈলী রূপে পরিগণিত। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে, নবীন প্রজন্মের দুই প্রতিভাবান শিল্পী সন্দীপ মল্লিক ও শৌভিক চক্রবর্তী লখনউ ঘরানার কত্থক পরিবেশন করেন। ফলে একই সন্ধ্যায় এক মঞ্চে দুই প্রজন্মের শিল্পী যুগলের ভিন্ন ঘরানার কত্থক নৃত্য প্রত্যক্ষ করার সুযোগ ঘটে কলকাতার দর্শকের।

Advertisement

প্রবীণ নলিনী-কমলিনী তাদের প্রস্তুতি আরম্ভ করেন শিবস্তুতি দিয়ে। ধ্রুপদ অঙ্গের চৌতালে নিবদ্ধ এই নৃত্যসূচি শঙ্কর, ভূপালি ও মালকোষ রাগাশ্রিত। অন্য দিকে, নৃত্যের দুই অধিদেবতা নটরাজ শিব ও নটবর কৃষ্ণ আধারিত সন্দীপ-শৌভিকের প্রথম উপস্থাপনা আরম্ভ হয় বিলম্বিত তিন তালে আমদ, তেহাই, পরমেলু ও পরণ দিয়ে। পরবর্তী অংশে ধামার ও দ্রুত তিনতালে গৎ, লয়কারী, উপজ-আঙ্গিক, তোড়া, টুকরা সহযোগে তাণ্ডব ও লাস্যও একসঙ্গে নিবেদিত হয়।

নলিনী-কমলিনীর দ্বিতীয় নিবেদন ছিল শুদ্ধনৃত্য শওরঙ্গী ঝাঁপতাল। আকবর লতিফের অনবদ্য তবলা বাদনের সঙ্গে তাঁদের কায়দা, বাজ, ঠাট, পেশকারি ছিল দেখার মতো। পরতে পরতে প্রতিভাসিত হচ্ছিল তাঁদের প্রায় পাঁচ দশকের সাধনা। দেড় ঘণ্টা তাঁদের পরিবেশনা দেখে অনুমান করতে অসুবিধে হয় না, যৌবনে তাঁদের মঞ্চ দাপিয়ে বেড়ানো রূপ কী রকম ছিল! আবার সন্দীপ-শৌভিকের দ্বিতীয় নিবেদন ছিল পাঁচ ও সাত মাত্রার তালের একসঙ্গে পথ চলা, গিনতি তেহাই। রাগ দুর্গা।

Advertisement

ওই দিন কত্থক-ভগিনীদ্বয় তাঁদের পরিবেশনা শেষ করেন মল্লার রাগাশ্রিত তরানা ‘শাওন’, ‘সওয়াল জবাব’ ও রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘একলা চলো রে’-এর নৃত্যরূপ দিয়ে। তাঁদের সঙ্গে কণ্ঠে ছিলেন নলিনী নিগম, বেহালায় অতুল শঙ্কর ও বাঁশিতে আফসল জহুর।

অন্য দিকে, সন্দীপ-শৌভিকের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায় ও বিশ্বজিৎ পাল, সারেঙ্গীতে ছিলেন উমেশ মিশ্র এবং সেতারে চন্দ্রচূড় ভট্টাচার্য। সর্বশেষ নিবেদন ছিল কীর্তনের সুরে ও ভাবে, অভিনয় অংশ ‘সমাপন’। তাৎক্ষণিক নৃত্যবিন্যাসে অসামঞ্জস্য থাকলেও সন্দীপ-শৌভিকের প্রাণবন্ততা দর্শককে তৃপ্ত করে। বিশেষত, ভারত সরকারের জুনিয়র ফেলোশিপ প্রাপক সন্দীপ মল্লিকের মঞ্চ উপস্থাপনা ও উস্তাদ বিসমিল্লা খান যুব প্রতিভা সম্মানে ভূষিত শৌভিক চক্রবর্তীর অনায়াস পরিবেশনা নিশ্চিন্ত করে যে, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংস্কৃতি উপযুক্ত উত্তরসূরিদের হাতে রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement