Music

যাত্রায় মঞ্চগানের উজ্জ্বল উদ্ধার

উনিশ থেকে বিশ শতক কালের যাত্রায় মঞ্চগানেই প্রকাশ পেয়েছে কলকাতা তথা বাংলার বাবুজীবনের অন্তরাল-উদ্ধার।

Advertisement

সৌম্যেন সরকার

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২০ ০১:২৮
Share:

দেবজিৎ ও ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়

উনিশ শতকের কলোনিয়াল কলকাতা জুড়ে ছিল নবাব-জমিদার-রাজা-রইসদের বাবুগিরির বিনোদ-বিলাস। তাঁদের সাহচর্যে বাই-বারাঙ্গনা নটী-বিবিদের রকমফের চরিত্রগাথায় নাট্যকারভেদে মুখর হয়েছে বহুবিচিত্র থিয়েটারের গান বা মঞ্চগান। উনিশ থেকে বিশ শতক কালের যাত্রায় মঞ্চগানেই প্রকাশ পেয়েছে কলকাতা তথা বাংলার বাবুজীবনের অন্তরাল-উদ্ধার।

Advertisement

মঞ্চগানের ঘেরাটোপে বাবু সংস্কৃতির জীবনদর্শন আর ইতিহাস ঘিরে ৩৬তম উদ্্যাপন বর্ষে অ্যাকাডেমি থিয়েটার সম্প্রতি আইসিসিআর-এর প্রেক্ষাগৃহে সৃন্যা এবং ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় মিউজ়িক অ্যাকাডেমির সহযোগে গান, নাচ ও ভাষ্যে নিবেদন করল অপেরাধর্মী প্রযোজনা ‘বাবু-বিবি সংবাদ’।

ঋদ্ধির বিষয়ভাবনায় এবং দেবজিতের রচনা ও নির্মাণে মূর্ত হল সে প্রযোজনা। ১৮৩৫-এ অভিনীত বাবু নবীন বসুর লক্ষাধিক টাকার প্রযোজনা বিদ্যাসুন্দর-এর ‘কী বলিলি মালিনী’ বসন্তবাহারে রূপ পেল ঋদ্ধির কণ্ঠে। পরের গানে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বিষবৃক্ষ’ গিরিশচন্দ্রের নাট্যরূপে ও বিনোদিনীর অভিনয়ে মূর্ত ভৈরবীতে নিবদ্ধ ‘কাঁটাবনে তুলতে গেলাম’ এই বাবুকীর্তি ঠাঁই পেল দেবজিতের নিপুণ পরিবেশনায়।

Advertisement

উনিশ শতকের শেষে অমরেন্দ্রনাথ দত্তের পরিচালনায় ক্ষীরোদাপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের ‘আলিবাবা’র আইকনিক যুগলবন্দি ‘আয় বাঁদি তুই বেগম হবি’ প্রাণবন্ত হয়ে উঠল দেবজিৎ ও ঋদ্ধির দ্বৈত কণ্ঠে।

কোরাসে দ্বিজেন্দ্রলালের ‘বিরহ’ প্রহসনের ‘হেসে নেও দুদিন বই তো নয়’, ‘ভীষ্ম’ নাটকের ‘আমরা মলয় বাতাসে’, ‘সাজাহান’ নাট্যের ‘আজি এসেছি, আজি এসেছি’ এবং নাট্যকার ক্ষীরোদপ্রসাদ ও পরিচালক শিশিরকুমারের মেলবন্ধনে ‘আলমগীর’-এর গান ‘অতিথি এসেছে দ্বারে’ প্রশংসনীয় উপস্থাপনা।

রবীন্দ্রনাথের ‘বিসর্জন’ নাট্যের সাহানা দেবীর স্মৃতিবিজড়িত গান ‘তিমির দুয়ার খোলো’ প্রকাশ পেল শিল্পীর যথাযথ গায়নে। প্রভা ও কঙ্কাবতীর স্মৃতিবাহী সীতা’ নাট্যের ‘অন্ধকারের অন্তরেতে’ এবং ইন্দুবালার স্মৃতিবাহী ‘রক্তকমল’ নাট্যের ‘মোর ঘুমঘোরে এলে’ দেবজিৎ ও ঋদ্ধির কণ্ঠে অন্য মাত্রায় পৌঁছেছিল। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রূপান্তরিত ব্রেখটের ‘তিন পয়সার পালা’র ‘এই ফাঁকেতে ভদ্দবাবু’ দ্বৈত কণ্ঠে শোনালেন ঋদ্ধি ও দেবজিৎ। এর পর ঋদ্ধি শোনালেন ‘ভালোমানুষ’ নাটকের ‘আমি যখন মেয়ে থাকি’। পরিবেশনাটি সময়কে মেলে ধরে। দেবজিতের কণ্ঠে মনোজ মিত্রের ‘নরক গুলজার’-এর ‘কথা বোলো না, শব্দ কোরো না’ একটি সরস পরিবেশনা।

এই অনুষ্ঠানে নৃত্যে অংশগ্রহণ করেছিলেন অভিরূপ সেনগুপ্ত, সুলগ্না রায় প্রমুখ। তাঁদের নাচ মনে রাখার মতো। ভাষ্যে শর্বরী দত্ত, এবং কোরক বসুর সঙ্গে দেবজিৎ-ঋদ্ধির অভিনয়াংশ উপস্থাপনার দাবি মেটায়। মঞ্চবিন্যাসে সুমিতাভ রায়চৌধুরী ও ইন্দ্রাণী বসু এবং সাজপোশাকে শর্বরী দত্ত বিশেষ প্রশংসনীয়। যন্ত্রসঙ্গীতে সহযোগিতা করেন বাবুল মুখোপাধ্যায় (কি-বোর্ড), তরুণ চৌধুরী (বাঁশি) এবং সব্যসাচী সরকার (তবলা)।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement