Art exhibition

করোনা আবহে কলাভবন প্রাক্তনীদের কল্পবাস্তবের শিল্প

ভারতখ্যাত শিল্পী থেকে অতি নবীনদের কাজের বৈচিত্র যেমন ছিল, পাশাপাশি বহু পুরনো, এমনকি দায়সারা কাজও দেখিয়েছেন কেউ কেউ, যা কাম্য ছিল না তাঁদের কাছ থেকে।

Advertisement

অতনু বসু

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২১ ০৪:৫৭
Share:

কাব্যিক: ‘নন্দন শান্তিনিকেতন’-এর ১৯তম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।

তাঁ রা চাননি যে, গ্যালারি বুক করা সত্ত্বেও অতিমারির কারণে প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যাক। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি সাইট খুলে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, ১৯তম ‘নন্দন শান্তিনিকেতন’-এর আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীটি তাঁরা অনলাইনেই দেখাবেন। ষাট জন শিল্পী-ভাস্করের একশো কুড়িটি কাজ ছিল প্রদর্শনীতে। সকলেই শান্তিনিকেতন কলাভবনের প্রাক্তনী। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা নবীন-প্রবীণের এ এক শৈল্পিক মেলবন্ধন। ভারতখ্যাত শিল্পী থেকে অতি নবীনদের কাজের বৈচিত্র যেমন ছিল, পাশাপাশি বহু পুরনো, এমনকি দায়সারা কাজও দেখিয়েছেন কেউ কেউ, যা কাম্য ছিল না তাঁদের কাছ থেকে।

Advertisement

রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় কালো একটি রেখায় অসম্পূর্ণতাকেও সম্পূর্ণ করেছেন নারীর শরীরী অবস্থানে। তাঁর চিরাচরিত কাব্যিক রেখা ও দু’-তিন স্বল্পবর্ণের মিশ্রলাবণ্যে স্পেস ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে চমৎকার এক সংগঠনের প্রক্রিয়া অচিরেই তৈরি হয়ে যায়। এই গভীরতর অভিজ্ঞতায় প্রাঞ্জল হয় সেই অনির্বচনীয় অথচ প্রয়োজনীয় এক-একটি অধ্যায়। তাঁর দু’টি কাজেই এই ধারণা বাস্তবায়িত। কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভারতীয় ঐতিহ্যানুসারী লাবণ্যময় দুটি জলরং করেছেন বর্ণোচ্ছ্বাসহীন নমনীয় রচনায়।

পার্থপ্রতিম দেব কালচে সবুজ মানবের ম্যাজিক-মুহূর্তকে প্রতীকায়িত করেছেন অ্যাক্রিলিকে। সদ্যপ্রয়াত শুচিব্রত দেবের নৈঃশব্দ্যের নিসর্গটি দৃষ্টিনন্দন। সরার প্যাটার্নে অ্যাক্রিলিকের রঙিন দু’টি গোলাকার রচনায় শান্তনু ভট্টাচার্য লোকশিল্পের অনুষঙ্গে পুরাণকেই যেন প্রত্যক্ষ করিয়েছেন। বহুবর্ণের রূপ ও রূপবন্ধে মশারির জালির মতো টেক্সচার, নানা জ্যামিতিক ফর্মের জমাট রচনায় মনোজ সরকারের অ্যাক্রিলিকের কাজ দু’টিও বেশ। রেখার ছন্দ ও সংযত বর্ণের সমন্বয়ে ভারতী চৌধুরীর দু’টি ক্যানভাসই কাব্যিক রচনায় সম্পৃক্ত। লাল, নীলের সহাবস্থানে অন্য হালকা ও গাঢ় বর্ণের মধ্যেও একরৈখিক ব্যঞ্জনায় নারীমুখ ও শরীরী বিভাজনে নাটকীয়তা এনেছেন প্রবীর বিশ্বাস। আলপনা দাঁ-র এচিংয়ের তুলনায় টেরাকোটার চমৎকার কাজটি স্টাইল ও রচনার বিভাজনে অনেক বেশি অর্থবহ। প্রত্ন-ভাস্কর্যের সঙ্গে আধুনিকতার ডিজ়াইন মিলেমিশে বেশ অন্য আবহ তৈরি করেছে।

Advertisement

ফাইবার গ্লাসের দু’টি অসাধারণ প্রতিকৃতি দেখা গেল চঞ্চলকৃষ্ণ দে-র ভাস্কর্যে। সর্দার বল্লভভাই পটেল ও মহাত্মা গাঁধী। কাজ দু’টি রাঁচীতে ভারত সরকারের এক বৃহৎ সংস্থার প্রাঙ্গণের ভিতরে অবস্থিত। ব্রোঞ্জ ও স্টোনের বিভ্রম জাগানো দু’টি জীবন্ত কাজ।

পবনকুমার ধীবরের ফাইবার গ্লাসে করা দুই নারীর মুখোমুখি রিলিফ-প্রধান কাজটিও প্রশংসার দাবি রাখে। হরেন ঠাকুরের মিশ্রমাধ্যম দু’টিও টেক্সচারাল কোয়ালিটি ও বিস্তৃত শূন্যতার মাঝে খুবই নাটকীয়। শর্মিলা ঠাকুরের পেপারম্যাশে ও প্লাস্টারে নির্মিত দু’টি ভাস্কর্যে মিশরীয় লোকশিল্প ও আধুনিক পপের মূর্ত-বিমূর্ত ফর্মেশন যেন সেরামিক ভাস্কর্যকে মনে পড়ায়। চমৎকার কাজ। কিরণ দীক্ষিত থাপার ফাইবার গ্লাসে বেঞ্চে বসা চারজন মানুষের চারটি মুহূর্তকে দারুণ ভাবে ধরেছেন। উপভোগ্য ভাস্কর্য। বিকাশ ঘোষের অয়েলে করা দু’টি প্রতিকৃতিই যথাযথ। উপাসনা বোরার সাদাকালো এচিং দু’টি তাৎপর্যময়। হিমাংশুশেখর দাসের হালকা জলরং ও কালো রেখায় করা বসে থাকা কুকুরের ড্রয়িংটিতে বড্ড বেশি সোমনাথ হোরের প্রভাব। মুদ্রিত কাগজের উপরে করা ড্রাই প্যাস্টেলে দুই মহিলার কর্মোদ্যমের দৃশ্যটি তুলনায় বেশ। অমিতকুমার ধারা উড ও ওয়েল্ডেড আয়রনে দু’টি প্রাকৃতিক শাখা-প্রশাখার সঙ্গে আয়রনের ফর্মকে মিশিয়ে অন্য ধারার কাজ করেছেন। সুশান্তকুমার অধিকারী টেম্পারায় কাগজের উপরে বিন্দু বিন্দু টেক্সচারের সূক্ষ্মতায় দু’টি সংবেদনশীল ছবি এঁকেছেন। আপাত-সংযত বর্ণ ও ড্রয়িংয়ের স্বল্পতায় রিয়্যালিজ়মকে প্রতীকায়িত করেছেন। দৃষ্টিনন্দন কাজ। মনোজকুমার প্রজাপতির টেরাকোটার দু’টি কাজই মনোগ্রাহী। লম্বোদর নায়েক তাঁর নিজস্ব স্টাইল-টেকনিকে অ্যাক্রিলিকে ক্যানভাসে দু’টি প্রাণবন্ত ড্রয়িং করেছেন। সম্পূর্ণ পেন্টিং কোয়ালিটি ও ড্রয়িং যেন এখানে সমার্থক।

এ ছাড়াও দিলীপ তামুলির সাদাকালো লিথোপ্রিন্টটি অনবদ্য। শৈবাল রায়, মাম্পি সাহা, বিকাশ আচার্য, সুরজিৎ রায়, চুগুলিকুমার সাহু, শান্তনু মাইতি, অমিতাভ চক্রবর্তী, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, মালবিকা মণ্ডল অ্যান্ড্রু, জীবেন ঘোষ (ভাস্কর্য), তপন মিত্র, অমিত বসু, এস এস সাহা (ট্যাপেস্ট্রি) প্রমুখ শিল্পীও ভাল কাজ করেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement