মঞ্চে ইমন চক্রবর্তী
রবীন্দ্রগানে, নাটকে বা কবিতায় এই মহাকাল, সময় বা শুভক্ষণের ঘাত-প্রতিঘাত, অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সময়গত হিসেব আর সর্বোপরি সময়ের টুকরো ব্যঞ্জনা নিয়েই ব্রতী তাদের বিংশতিতম বর্ষে সম্প্রতি রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহে প্রযোজনা করেছিল ‘সময় যে দিন’।
অনুষ্ঠানের সূচনা পর্বে সুকুমার ঘোষের সঞ্চালনায় ব্রতীর শিশুবিভাগ উপস্থাপন করল ‘প্রার্থনা’। সুন্দর প্রয়াস।
দ্বিতীয়ার্ধে উপস্থাপিত হল ‘সময় যে দিন’। অনুষ্ঠানের শুরুতে ভূমিকার অবতারণা চমৎকার ভাবে ফুটে উঠল শিল্পী ইমন চক্রবর্তীর ভাষ্যে। ‘মহাবিশ্বে মহাকাশে’ গানটি দিয়ে নৃত্য সহযোগে শুরু হল গীতি আলেখ্য। এই অনুষ্ঠানে সমবেত সঙ্গীতগুলি ছিল ‘বসে আছি হে’, ‘কবে আমি বাহির হলেম’, ‘বিপুল তরঙ্গ রে’, ‘জানি জানি কোন আদিকাল হতে’, ‘দুই হাতে কালের মন্দিরা যে’, ‘দূর রজনীর স্বপন লাগে’, ‘জানি গো, দিন যাবে’, ‘মধুর তোমার শেষ যে না পাই’ এবং সবশেষে ‘এ ভারতে রাখো নিত্য, প্রভু তব’। সমবেত সঙ্গীতগুলি সুগীত ও পরিবেশনায় নিষ্ঠার পরিচয় পাওয়া যায়।
একক গানগুলির মধ্যে ‘কোন শুভক্ষণে উদিবে নয়নে’ (দীপাঞ্জন পাল), ‘এখন আমার সময় হল’ (জয়তী চক্রবর্তী), ‘সময় কারও যে নাই’ (সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়), ‘যখন তুমি বাঁধছিলে তার’ (অরিন্দম দাশগুপ্ত), ‘পুরানো জানিয়া চেয়ো না’ (মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়), ‘গোধূলি গগনে মেঘে’ (অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়), ‘নাই বা এলে যদি সময় নাই’ (ইমন হালদার) শুনতে ভাল লাগে।
গানের মাঝে ‘রাজা’ নাটকের অংশ এবং ‘রক্তকরবী’ নাটকের অংশ সে ভাবে মন ছুঁতে পারেনি। তবে তারই মধ্যে সুদর্শনার ভূমিকায় আরিত্রিকা ভট্টাচার্যকে ভাল লাগে। সুকুমার ঘোষের উপস্থাপনা অত্যধিক নাটকীয়তা বর্জন করতে পারলে ভাল হয়।
ইমন চক্রবর্তী একক দক্ষতায় শ্রোতাদের মন জয় করলেন। কী গানে, কী পাঠে... তাঁর অভিব্যক্তি মনে রাখার মতো। এই অনুষ্ঠানে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য গানগুলি ছিল ইমন চক্রবর্তীর কণ্ঠে ‘সকল জনমভরে’, সোমা রায়ের কণ্ঠে ‘তোমায় নতুন করে পাব বলে’, সুমেলা চক্রবর্তীর কণ্ঠে ‘বিরস দিন বিরল কাজ’। ‘অনন্ত সাগর মাঝে’ গানটির ব্যঞ্জনা অনুরাগ দত্তের পরিবেশনায় মূর্ত হয়ে উঠল। মনে রাখার মতো উপস্থাপনা। জয়তী চক্রবর্তীর কণ্ঠে ‘শেষ গানেরই রেশ’ শিল্পীর পরিবেশনের নিজস্বতায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। পাঠে সাম্য কার্ফা প্রতিশ্রুতিময়।
সমগ্র অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন অপালা বসু (সেন)। অনুষ্ঠান চলাকালীন মঞ্চের উপরে ওঁর যথেচ্ছ ঘোরাঘুরি খুবই দৃষ্টিকটু লেগেছে। এ ছাড়া সমগ্র অনুষ্ঠানটি এতটাই দীর্ঘায়িত ছিল যে, তা ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। পরিচালিকাকে অনুরোধ, অনুষ্ঠানটি আর কিছুটা সংক্ষিপ্ত করলে দর্শক-শ্রোতা পরিপূর্ণ ভাবে এই সুন্দর উপস্থাপনার অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে পারতেন।
যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় (কি-বোর্ড), নন্দন দাশগুপ্ত (এস্রাজ), পার্থ মুখোপাধ্যায় ও পার্থ সেন (তালবাদ্য), সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় (গিটার), বুবাই নন্দী (বাঁশি) এবং সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় (মন্দিরা)। এঁরা সকলেই অনুষ্ঠানটিকে সফল করতে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন।
নৃত্যে অংশগ্রহণ করেছিলেন সুদর্শন নন্দী, মেহেলি সাঁই, সুলগ্না রায়, সুপ্রতিম পাল এবং বিনতা চক্রবর্তী।