দৈনিক জীবনযাপনে খানিক বদল আনলেই এই সময়, বেশ কিছু রোগ এড়ানো যেতে পারে। বিশেষ করে খাওয়া-দাওয়া ও শরীরচর্চার ক্ষেত্রে কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে শরীর সুস্থ থাকবে।
বর্ষায় সাবধান! প্রতীকী ছবি
তীব্র দাবদাহ থেকে ক্ষণিকের রেহাই দেয় বৃষ্টি। কিন্তু বৃষ্টি মানেই কি স্বস্তির নিশ্বাস? এই বর্ষাতেই হানা দেয় বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস। তার উপরে সর্দি-জ্বর তো লেগে আছেই।
সম্প্রতি করোনা ভাইরাস, বিশ্বব্যাপী মানুষের ইমিউনিটিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। মানুষ সে ব্যাপারে সচেতন হলেও অন্যান্য ভাইরাসের কারণে কাবু হচ্ছে মাঝে মধ্যেই। মাথা চাড়া দিচ্ছে বিভিন্ন ভাইরাল ইনফেকশনও। যা ফুসফুসের ক্ষতি করছে। ছোটরা এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা, যাঁরা অ্যাজমার মতো কঠিন সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য বর্ষার এই সময়টা বেশ ভয়ের।
রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস, রাইনো ভাইরাস, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এই সবক’টি রোগের ক্ষেত্রেই সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে তা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বর্ষা বাড়লেই এই সব ভাইরাস ভীষণভাবে কাহিল করতে পারে মানুষকে। জ্বর, গলা ব্যাথা, সর্দি, শুকনো কাশি, নাক বন্ধ, সার্বিক দুর্বলতা ইত্যাদির মধ্যে কোনও একটি উপসর্গ দেখা গেলেই সাবধান। সেদিক থেকে দেখতে গেলে করোনার সঙ্গে এই সব উপসর্গের তেমন অমিল নেই। তাই রোগীদের রোগ নির্ণয় ডাক্তারবাবুদের কাছে রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই হয়তো জানেন না যে এই সব ভাইরাস সংক্রমণের সময়ে শরীরে নিউমোনিয়া বাসা বাঁধলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে ইনটেনসিভ কেয়ার ও সাপোর্ট দেওয়া সেই মুহূর্তে বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়। তাই প্রাক বর্ষার মুহূ্র্তে দাঁড়িয়ে মানুষকে ফুসফুস সংক্রান্ত সমস্যার গুরুত্ব মানুষকে বোঝানো, সর্বোপরি তাঁদের সচেতন করাটা জরুরি বলে মনে করছেন পালমোনোলজিস্টরা।
তা হলে কী করণীয়? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দৈনিক জীবনযাপনে খানিক বদল আনলেই এই সময়, বেশ কিছু রোগ এড়ানো যেতে পারে। বিশেষ করে খাওয়া-দাওয়া ও শরীরচর্চার ক্ষেত্রে কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে শরীর সুস্থ থাকবে।
বর্ষার সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার সমস্যা ঘরে ঘরে দেখা যায়। দীর্ঘদিন এই উপসর্গগুলিকে উপেক্ষা করলে সেটি ক্রমে ফুসফুসে সংক্রমিত হতে পারে। এখন প্রযুক্তি বিজ্ঞানের কল্যাণে আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট বায়োফায়ার নামক একটি পরীক্ষা হচ্ছে, যেটি নাক থেকে নমুনা নিয়ে সোয়্যাপ টেস্টের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। এই পরীক্ষাটিতে প্রায় তিরিশটি ভাইরাসের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে রোগীর শরীরে। একমাত্র বিশেষজ্ঞরাই সঠিক বলতে পারবেন যে আপনার উপসর্গগুলি কোন ভাইরাসের জন্যে হচ্ছে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি বায়ুবাহিত রোগ। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, করোনার মতোই সুরক্ষাবিধি মানতে হবে এই ক্ষেত্রে। অন্তত জনবহুল এলাকায় মাস্ক পরতেই হবে। হাত মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে। যখন তখন মুখে চোখে হাত দেওয়া যাবে না। বাইরে থেকে ঘুরে আসলে যথাযথভাবে স্নান করতে হবে। সর্বোপরি জীবাণুমুক্ত থাকতে সচেতন হতে হবে।
বর্ষার সময়ে বাড়ির চারপাশ ও অন্তবর্তী অংশ জীবাণুমুক্ত করার ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। জল জমে এই সময় যেমন মশার উপদ্রব বাড়ে, ঠিক তেমনই বৃদ্ধি পায় মশাবাহিত নানান রোগ। শুধু তাই নয়, পেটের সমস্যাও বাড়ে এই বর্ষার সময়েই। খেতে বসার আগে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যেস এই সময়ে ভুলে গেলে চলবে না। বাড়িতে মশা তাড়ানোর জন্য রেপেলেন্ট, স্প্রে মজুত রাখতে হবে। প্রয়োজনে মশারি টানাতে হবে। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে, যে জল আপনি খাচ্ছেন তা সঠিক উপায়ে পরিশ্রুত হয়েছি কিনা।
হিট ব়্যাশ, ব্রণ, ঘামাচি, অ্যালার্জির মতো ত্বকের সমস্যা এই সময়ে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। সেই ক্ষেত্রে স্কুল, কলেজ, অফিস বা বাইরে বেরিয়ে কাজ করার পর অবশ্যই স্নান করতে হবে। আর্দ্রতার তারতম্যের কারণে প্রচুর ঘাম হয় এই সময়ে। তার সঙ্গে বাইরের দূষণ, ধুলো-ময়লাতে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বাড়ে। তাই দিনে দু’বার স্নান জরুরি। বিশেষ করে বৃষ্টিতে ভেজার পর তো বটেই।
এই প্রতিবেদনটি সংগৃহীত এবং 'আষাঢ়ের গল্প' ফিচারের অংশ