বৃষ্টি হলেই মন বলে ঘুরতে যাই
বৃষ্টিভেজা দিনে মন হয়ে ওঠে ভ্রমণবিলাসী। কেউ সঙ্গে এলে ভাল, নয়তো একলা চলো রে। বর্ষায় ধরণী সবুজ হয়ে ওঠে ঠিকই। কিন্তু সবুজের যে এত বৈচিত্র, তা পাহাড়ে না গেলে জানা যেত না হয়ত। আকাশে যে কত রকমের নীল তা চোখ না মেললে কি অনুভূত হতো? ভ্রমণপিপাসু বাঙালি এই বর্ষায় কোথায় যেতে পারেন? রইল কিছু মন ভাল করা জায়গার হদিশ।
শিলং
শিলং:
এ যেন রূপকথারই দেশ। মেঘের গল্প তো সবাই শুনেছেন, মেঘকে ছুঁয়ে দেখতে চাইলে চলে যেতে হবে শিলংয়ে। ভারতের যে কোনও স্থান থেকে চলে যেতে হবে গুয়াহাটি স্টেশনে, সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ১০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলেই পৌঁছে যাবেন শিলংয়ে। ব্রক্ষ্মপুত্রের ধার দিয়ে সেই যাত্রাপথ আপনার মন ভাল করতে বাধ্য। বর্ষার সময়ে জলে পরিপূর্ণ থাকে সেভেন সিস্টার ফলস্, ক্রাঙ্গসুরি ফলস্, বোর ফলস্। এছাড়া ডাউকি, মাওনিলং, সিঙ্গেল রুট ব্রিজ এগুলি তো আছেই। তবে এই সময় স্থানীয় পাহাড়ি গুহাগুলি এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়। বর্ষায় শিলং আসলে ব্যাগে একটি বর্ষাতি আপনাকে রাখতেই হবে। মোটামুটি পাঁচ থেকে ছ'দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা করলেই যথেষ্ট। সপরিবারে আসুন কিংবা একা, শিলং আপনার জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা হয়ে থেকে যাবে চিরকাল।
লোনাভলা
লোনাভলা:
বর্ষার প্রকৃতিকে প্রাণভরে অনুভব করার জন্য পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পাহাড়ি এই স্টেশনটি একেবারে আদর্শ ভ্রমণস্থল। চারিদিকে সবুজে মোড়া পাহাড়, জলপ্রপাত, মনোরম আবহাওয়া এই সবকিছু লোনাভলাকে করে তুলেছে ভীষণ রোম্যান্টিক। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হল বুশি ড্যাম জলপ্রপাত এবং প্রাচীনকালে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীগণ দ্বারা নির্মিত কারলা গুহা। মুম্বই ও পুণে শহর থেকে গাড়িতে ঘন্টা দু’য়েকের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় এখানে। অল্পদিনের ছুটি হাতে থাকলে আপনারা এই বর্ষায় প্ল্যান করে ফেলতে পারেন লোনাভলা।
কুর্গ
কুর্গ:
কর্ণাটকের এই অঞ্চলটি ঘন অরণ্যে পরিবেষ্টিত। বহু অচেনা উদ্ভিদ ও প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যাবে এখানে। বর্ষায় কুর্গের জলপ্রপাতের চেহারা দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। সে রূপ অসাধারণ। এছাড়া কফির বাগান, মনোরম প্রকৃতি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এখানকার অন্যতম স্থানগুলি হল পুষ্পগিরি অভয়ারণ্য, কোটেবেট্টা পাহাড়, যোগ জলপ্রপাত ইত্যাদি। মাইসোর বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১২- কুড়ি কিলোমিটার দূরত্বেই অবস্থিত কুর্গ।
ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্স
ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্স:
দেরাদুন থেকে প্রায় তিনশো কিলোমিটার দূরত্বে আছে রাণিখেত। ঘন সবুজ অরণ্য এবং স্নিগ্ধ তুষারে মোড়া হিমালয় পরিদর্শন করতে হলে আপনাকে পাড়ি দিতে হবে উত্তরাখণ্ডের এই অংশে। বর্ষাতে এখানকার মূল আকর্ষণ হলো ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স। ফুলের বৈচিত্র দেখতে হলে এখানে অন্তত আপনাকে আসতেই হবে একবার। ভাগ্য ভাল থাকলে দেখা মিলতে পারে লুপ্তপ্রায় পশু ব্ল্যাক বিয়ারের। এছাড়া এখানে স্নো লেপার্ডও রয়েছে। অ্যাডভেঞ্চার ভাল লাগলে, এই ট্রিপ আপনাকে দারুন অভিজ্ঞতা দেবে।
গোয়া
গোয়া:
দেশেই, বিদেশের আমেজ পেতে চাইলে, আর সমুদ্র ভাল লাগলে ঘুরে আসতে পারেন গোয়া। প্রথমত, বর্ষায় সমুদ্রের রূপ অসাধারণ হয়ে ওঠে। তাছাড়া এই সময়টাতে গোয়াতে পর্যটকের পরিমাণও কম থাকে। ফলে গোয়ার প্রকৃতিকে একটু প্রাণভরে নিরিবিলিতে উপভোগ করার সুযোগ পাবেন আপনি। গোয়াতে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার সুযোগও রয়েছে। যদিও এই সময়টাতে আবহাওয়া বুঝেই সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এখানকার দুধসাগর জলপ্রপাত, আগুন্ডা ফোর্ট এবং প্রাচীন গির্জাগুলি খুবই সুন্দর। সবথেকে সুস্বাদু এখানকার সামুদ্রিক খাবার। উইকেন্ড খানিকটা রঙিন করে তুলতে চাইলে, ঘুরে আসতে পারেন গোয়া থেকে।
এই প্রতিবেদনটি সংগৃহীত এবং 'আষাঢ়ের গল্প' ফিচারের অংশ।