ডোমের অভাবে ব্যহত হচ্ছে ময়না-তদন্তের কাজ!
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একাধিক মহকুমা হাসপাতাল, জেলা হাসপাতালের অবস্থাটা কমবেশি এমনই। অথচ, ময়নাতদন্তে ডোমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মৃতদেহ কাটা-ছেঁড়ার ভার থাকে ডোমের উপরে। অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে ডোম-সঙ্কট চললেও উদাসীন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরাও মানছেন, ঘাটাল, খড়্গপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডোম নেই। আপাতত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অন্যদের দিয়েই ময়নাতদন্তের কাজ চালানো হচ্ছে। গোটা বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরের উপরমহলে জানানো হয়েছে বলেও দাবি গিরিশবাবুর।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মহকুমাস্তরের হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ময়নাতদন্ত হয়। কোথায় কত জন ডোম লাগবে, সেই সংখ্যা হাসপাতালের রুগির সংখ্যা ও থানা এলাকার উপরে নির্ভর করে নির্দিষ্ট করা হয়। সাধারণত যে কোনও ময়নাতদন্ত চিকিৎসক ও ডোম যৌথ ভাবেই করেন। ডোমেদের প্রশিক্ষণ থাকায় তাঁরা জানেন, শরীরের কোন কোন অংশ কী কী ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। কিংবা কাটতে হয়। অভিযোগ, এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজে কর্মী-সঙ্কট চলায় ব্যহত হচ্ছে ময়নাতদন্তের কাজ।
ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে দু’জন ডোম থাকায় কথা। একজন দীর্ঘ দিন আগেই অবসর নিয়েছেন। লক্ষ্মী মাদ্রাজী অন্য কর্মী দীর্ঘ দিন অসুস্থ। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডোমও নেই ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে। একজন মৃতদেহ বাহকের কাজ করছেন। চিকিসকেরাই তাঁকে দিয়েই কোনও রকমে কাজ চালাচ্ছেন। একই সমস্যা রয়েছে অন্য হাসপাতালগুলিতেও। কেমন? খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে দু’জন ডোম থাকার কথা। কিন্তু, আছেন মাত্র একজন। আর ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে তিনটি পদই খালি। মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় সরকারি ভাবে নিযুক্ত নয়, অথচ অভিজ্ঞ এমন লোকদের দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে। দ্রুত এই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে।”
হাসপাতাল সূত্রের খবর, আগে ডোম পরিবারের সদস্যরাই উত্তরাধিকার সূত্রে এই কাজ সরকারি ভাবে পেতেন। কিন্তু এখন এই কাজে অনীহা বাড়ছে। বাড়ছে সমস্যা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসকের অবশ্য বক্তব্য, অবসর হওয়া অনেকেই ফের চুক্তির ভিত্তিতে কাজে ফিরতে ইচ্ছুক। তাঁরা অনেকে হাসপাতাল সুপারের কাছে লিখিত ভাবে আবেদনও করেছেন। অভিযোগ, নানা অজুহাতে তাঁদের নিয়োগ করা হচ্ছে না। ঘাটাল হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত ডোম শক্তি মার্গুল যেমন বলছেন, “আমি ফের কাজ করার আবদেন করেছি। কিন্তু নিয়োগ হয়নি।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের অবশ্য খবর, এখন ‘ডোম’ এই শব্দবন্ধটি উঠে যাচ্ছে। পরিবর্তে ‘অটোপসি অ্যাসিস্টেন্ট’ পদ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ দিয়ে দ্রুত ওই পদে কর্মী নিয়োগ করা হবে। নিয়মানুযায়ী, অটোপসি সার্জেনরাই একমাত্র ময়নাতদন্তে অভিজ্ঞ। তাঁদেরই যে কোনও ময়নাতদন্ত করার কথা। কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ওই অটোপসি সার্জেনদেরও অভাব রয়েছে। এর ফলে ময়নাতদন্ত হয় এমন সরকারি হাসপাতালের সব চিকিৎসককেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই কাজ করানো হচ্ছে। কবে এর স্থায়ী সুরাহা হয়, দেখার সেটাই।