সদ্যোজাতের চিকিৎসাকেন্দ্র নেই খড়্গপুর মহকুমায়

রাজ্যের প্রতিটি মহকুমায় অন্তত একটি অসুস্থ নবজাতকের পরিচর্যা কেন্দ্র (এসএনসিইউ) তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবচেয়ে বড় খড়্গপুর মহকুমায় এখনও কোনও এসএনসিইউ গড়ে ওঠেনি। যদিও জেলার অন্য তিন মহকুমা মেদিনীপুর (সদর), ঝাড়গ্রাম, ঘাটালে এসএনসিইউ রয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে খড়্গপুর মহকুমা এলাকার গুরুতর অসুস্থ নবজাতকদের মেদিনীপুরে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করাতে হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫১
Share:

রাজ্যের প্রতিটি মহকুমায় অন্তত একটি অসুস্থ নবজাতকের পরিচর্যা কেন্দ্র (এসএনসিইউ) তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবচেয়ে বড় খড়্গপুর মহকুমায় এখনও কোনও এসএনসিইউ গড়ে ওঠেনি। যদিও জেলার অন্য তিন মহকুমা মেদিনীপুর (সদর), ঝাড়গ্রাম, ঘাটালে এসএনসিইউ রয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে খড়্গপুর মহকুমা এলাকার গুরুতর অসুস্থ নবজাতকদের মেদিনীপুরে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করাতে হয়। অসুস্থ শিশুর পরিবারের লোকজনও নানা সমস্যায় পড়েন।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরে শিশু মৃত্যুর হার ৩২। অর্থাৎ, এক হাজার শিশু জন্মালে তারমধ্যে ৩২টির মৃত্যু হয়। অনেক সময় চিকিৎসার অবহেলায় শিশু মৃত্যুর ঘটনারও অভিযোগ ওঠে। এই পরিস্থিতিতে খড়্গপুরের মতো মহকুমায় কেন অসুস্থ নবজাতকের পরিচর্যা কেন্দ্র গড়ে উঠল না, সেই প্রশ্ন উঠছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “এসএনসিইউ নেই। তবে খড়্গপুরে এসএনএসইউ রয়েছে।” শুধু এ জেলা নয়, রাজ্যের প্রায় সব মহকুমায় যেখানে এসএনসিইউ তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানে খড়্গপুর নয় কেন? জেলার এক স্বাস্থ্য- কর্তার জবাব, “বিষয়টি আমাদের ভাবনায় রয়েছে।”

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রের অবশ্য দাবি, এ ক্ষেত্রে অন্য সমস্যা রয়েছে। এক সময় সব মহকুমাতেই এসএনসিইউ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই মতো জেলা থেকে রাজ্যে পরিকল্পনাও পাঠানো হয়। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে এসএনসিইউ চালুর পরিকল্পনা পাঠানো হয়নি, কারণ খড়্গপুর পুরসভার হাসপাতালে অসুস্থ নবজাতকের পরিচর্যার ওই কেন্দ্র চালুর কথা ছিল। অবশ্য পুরসভার হাসপাতালে এখনও এসএনসিইউ গড়ে ওঠেনি। রাজ্যে পালাবদলের সময় রেলশহরের পুরসভা ছিল তৃণমূলের হাতে। পরে ক্ষমতার হাতবদল হয়। পুরসভা আসে কংগ্রেসের হাতে। জেলার স্বাস্থ্য- কর্তাদের একাংশ মনে করেছিলেন, পুরসভার হাসপাতালে যখন এসএনসিইউ চালু হবেই তখন খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে আর এখনই এই কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রয়োজন নেই। তবে দেখতে দেখতে মাসের পর মাস পেরিয়ে গিয়েছে। পুরসভার হাসপাতালে প্রস্তাবিত এসএনসিইউ চালুর পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। কেন? এ ক্ষেত্রেও সেই রাজনৈতিক চাপানউতোর অব্যাহত। রেলশহরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তৃণমূলের জহরলাল পাল বলেন, “আমার সময়ই হাসপাতালে ওই কেন্দ্র তৈরির পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ হয়। তারপর আর কাজ সেই ভাবে এগোয়নি। আসলে এ ক্ষেত্রে উদ্যোগের অভাব রয়েছে।” দাবি উড়িয়ে রেলশহরের বর্তমান পুরপ্রধান কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “এক সময় আমরাই পুরসভার হাসপাতালে অসুস্থ নবজাতকের পরিচর্যা কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নিই। পরিকাঠামো তৈরিও করা হয়। অথচ, প্রয়োজনীয় মেশিনপত্রের জন্য রাজ্য সরকার অর্থ বরাদ্দ করছে না। তাই কেন্দ্রটি চালু করা যাচ্ছে না।”

Advertisement

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এখন পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট তিনটি এসএনসিইউ চালু রয়েছে। একটি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। একটি ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে। অন্যটি ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে। সবমিলিয়ে ২২টি এসএনএসইউ (অসুস্থ নবজাতকের স্থিতিস্থাপক কেন্দ্র) চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরমধ্যে ১৮টি চালু হয়েছে।

এসএনসিইউ এবং এসএনএসইউ, এই দু’টি কেন্দ্রের মধ্যে পার্থক্য কী? জেলার এক স্বাস্থ্য- কর্তা বলেন, “পার্থক্য অনেকটাই। বিশেষ করে পরিকাঠামোগত। ব্লক হাসপাতালে যে পরিষেবা মেলে, মহকুমা হাসপাতালে তো তার থেকে কিছু বেশি পরিষেবা মেলে। এ ক্ষেত্রেও তাই।” তাঁর কথায়, “এসএনসিইউতে অনেক সময় গুরুতর অসুস্থ শিশুকেও বাঁচানো সম্ভব হয়। এসএনএসইউতে তা হয় না। হওয়ার কথাও নয়। কারণ, সেখানে পরিকাঠামো কিছু কম থাকে।”

এসএনসিইউতে ঠিক কী কী থাকার কথা?

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রে খবর, ১২ থেকে ২০টি শয্যা থাকবে। ১০- ১২টি বেবি ওয়ার্মার বা ইনকিউবিটর থাকবে। ৮- ১০টি ফটোথেরাপি থাকবে। ২- ৪টি সিপ্যাপ থাকবে। ২- ৪টি সিরিঞ্জ পাম্প যন্ত্র থাকবে। সব সময় এক জন শিশু বিশেষজ্ঞও থাকবেন। সদ্যোজাতরা গুরুতর অসুস্থ হলে বা কোনও অসুখ নিয়ে জন্মালে তাদের এখানে স্থানান্তরিত করার কথা। অর্থাৎ, যাঁদের শারীরিক অবস্থা ‘সঙ্কটজনক’, এই কেন্দ্র তাদেরই রাখা হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরেও মাঝে-মধ্যে চিকিৎসার অবহেলায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রে অবশ্য দাবি, যে সব সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়, তাদের কেউ কেউ জন্মগত শ্বাসকষ্টের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়। চিকিৎসার পরিভাষায় যার নাম ‘বার্থ অ্যাসপেকসিয়া’। কেউ কেউ সেপ্টিসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়। জেলার এক স্বাস্থ্য- কর্তার কথায়, “শিশু মৃত্যুর ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। তবে এমন ঘটনা ঘটলে আমরা তার গভীরে গিয়ে দেখার চেষ্টা করি। দেখা গিয়েছে, নবজাতকের অনেকের ওজন অস্বাভাবিক কম থাকে। অস্বাভাবিক কম ওজনের নবজাতকের ফুসফুস ঠিক মতো কাজ করে না। এরফলে, চেষ্টা করেও সঙ্কটজনক শিশুকে অনেক সময় বাঁচানো সম্ভব হয় না।” তাঁর কথায়, “নবজাতকের ফুসফুস ঠিক মতো কাজ না করলে সিপ্যাপ যন্ত্রের সাহায্যে ওষুধ দিতে হয়। ফটোথেরাপি যন্ত্রের সাহায্যে জণ্ডিসের মতো রোগের চিকিৎসা হয়। এসএনসিইউতে এই সব পরিকাঠামো থাকে। ফলে, হাসপাতালে এসএনসিইউ থাকলে সবদিক থেকেই সুবিধে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement