সন্দেশখালির গ্রামে চলছে স্বাস্থ্য শিবির। নিজস্ব চিত্র
প্রত্যন্ত গ্রামে স্বাস্থ্য-পরিষেবা দিতে হাতিয়ার হতে পারে ‘স্বাস্থ্যব্রতী’। উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির খাস শাঁকদহ গ্রামে এই প্রকল্প চালু করে এমনই আশা প্রকাশ করলেন চিকিৎসকেরা।
সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসকদের পাঠাতে হিমসিম খেতে হয় সরকারকে। উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকাঠামো এখনও গড়ে তোলা যায়নি সর্বত্র। দীর্ঘ পথ উজিয়ে শহরের হাসপাতালে আনার পথে শোচনীয় হাল হয় রোগীর। তা ছাড়া, আর্থিক সামর্থ্যটুকু না থাকায় রোগীকে শহরে আনার কথা ভাবতেই পারেন না গাঁ-গঞ্জের বহু মানুষ।
এ হেন সুন্দরবনের খাস শাঁকদহে তিনটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে রবিবার যে প্রকল্প শুরু করা হয়েছে, তাতে আশপাশের এলাকার দরিদ্র মানুষ কিছুটা হলেও আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবার সুফল পাবেন। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে রোগীরা শহরের নামজাদা চিকিৎসকদের পরামর্শ পাবেন। সেই সঙ্গে গ্রামেরই কিছু মেয়েকে প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন উদ্যোক্তারা। ফলে রাতবিরেতে জরুরি প্রয়োজনে উপকৃত হবেন গ্রামের মানুষ।
রবিবার ‘স্বাস্থ্যব্রতী’ নামে এই প্রকল্পের সূচনা উপলক্ষে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নিজস্ব ভবনে এসেছিলেন চিকিৎসক কৌশিক চাকী, ফারুক হোসেন গাজি, সৌগত সান্যাল, অরূপ ঘোষ, অরুণ চক্রবর্তী-সহ বহু বিশিষ্ট মানুষ। আশপাশের এলাকার প্রায় সাতশো জনের বিনা খরচে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়েছিল। “গ্রামের মেয়েদের হাতে গ্রামের মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসার ভার তুলে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য,” বলছিলেন কৌশিক চাকী, ফারুক হোসেন গাজি, সৌগত সান্যাল, অরূপ ঘোষরা। এ জন্য প্রতি মাসে এক বার এ ধরনের শিবির করা হবে বলেও জানান। তাঁদের কথায়, “আপাতত এক বছর ধরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টেলি-মেডিসিনের ব্যবস্থা করা হবে। শহরের চিকিৎসকদের থেকে রোগী বা তাঁদের আত্মীয়েরা সরাসরি পরামর্শ পাবেন। প্রয়োজনে তাঁদের শহরে এনে বিনা খরচে ছানি কাটা বা অন্যান্য অস্ত্রোপচারেরও ব্যবস্থা করা হবে।”
প্রশিক্ষিত কয়েক জন নার্স স্কুল-কলেজে পড়া ৬০ জন তরুণীকে এ দিন হাতে-কলমে শেখান, কী ভাবে প্রেসার মাপতে হয়, কী ভাবে বা ইসিজি করতে হয়। জরুরি প্রয়োজনে কিছু কিছু ওষুধপত্র দেওয়ারও প্রশিক্ষণ পেয়েছে রুকসানা পরভিন, নিলুফা পরভিন, হাবিবা খাতুনরা। তাদের হাতে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র তুলে দেওয়া হয়। মেয়েদের শেখার আগ্রহের তারিফ করেন নার্স সানিয়া, সৌদামিনী ও কুমকুম রায়। দরিদ্র মানুষ বিনা খরচেই এই সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারবেন, জানান উদ্যোক্তারা।