এনসেফ্যালাইটিস চিহ্নিত করতে যে ‘কিট’ লাগে, উত্তরবঙ্গে তার অভাব নেই বলে মঙ্গলবারই আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনা হল, বুধবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ওই ‘কিট’ কার্যত শেষের পথে। মুখ্যমন্ত্রীর আর এক দাবি ছিল, দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট হাসপাতাল এবং উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ হাসপাতালে এনসেফ্যালাইটিস পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে। বাস্তবে ওই দুই হাসপাতালে এখনও ‘কিট’ পৌঁছয়নি।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এক বাক্স ‘কিট’ দিয়ে ৯৬ জনের রক্ত পরীক্ষা হতে পারে। কিন্তু এক বার বাক্স খোলার পরে ব্যবহৃত না হলে ‘কিট’-এর বাকিটা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে এখন মাত্র দেড় বাক্স ‘কিট’ রয়েছে। তাই মঙ্গলবার হাসপাতালের এবং শিলিগুড়ির কয়েকটি নার্সিংহোম মিলিয়ে ১০টি রক্তের নমুনা এলেও তা পরীক্ষা করা হয়নি। হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাসের বক্তব্য, “যে কিট হাতে রয়েছে তা দিয়ে ১০০ টির কিছু বেশি নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। আরও কিটের আবেদন করা হয়েছে।” সুপারের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। অথচ, মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, প্রতিদিনই জ্বর নিয়ে গড়ে তিন-চার জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। বুধবারও ভর্তি হয়েছেন চার জন। ফিভার ক্লিনিকগুলিতে রোগীদের ভিড়-ও হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রক্ত-পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন হাসপাতালে জ্বর নিয়ে চিকিৎসাধীনদের আত্মীয়েরা।
কোচবিহার এমজেএন হাসপাতালে এনসেফ্যালাইটিসের রক্ত পরীক্ষার জন্য ‘কিট’ পাঠানোর হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেখানে এ দিনও ‘কিট’ পৌঁছয়নি। রক্ত পরীক্ষাও শুরু হয়নি। জলপাইগুড়ি হাসপাতালে এক বাক্স ‘কিট’ পৌঁছয় মঙ্গলবার। এ দিন সেখানে কোনও রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য বলেছেন, “অন্য জেলাগুলিতেও রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
বালুরঘাট ও রায়গঞ্জ হাসপাতালে বুধবার রাত পর্যন্ত এনসেফ্যালাইটিস জীবাণু চিহ্নিতকরণের পরিকাঠামো তৈরি না হলেও ‘অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম’ (এইএস) নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে মঙ্গলবার রাত থেকে এ দিন দুপুর পর্যন্ত যে তিন জন মারা গিয়েছেন , তাঁদের মধ্যে রায়গঞ্জের দু’জন আছেন চকদুয়ারের প্রীতম বর্মন (১৮) ও রায়পুরের ধনমালা সূত্রধর (৮৫)। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারিতে চণ্ডীচরণ মোহান্ত (৫৫) নামে এক প্রৌঢ়ও ‘এইএস’ নিয়ে মারা গিয়েছেন। একই উপসর্গ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে মারা যান আলিপুরদুয়ারের ভোলারডাবরির সুকুমার ধর (৫৫)।
জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যু ঘটেছে শিলিগুড়ি শহরেই। বুধবার সেবকরোডের নার্সিংহোমে মারা যান মিলনপল্লির বাসিন্দা অমূল্যকুমার রায় (৭২)। তিনি ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএমের কাউন্সিলর দীপায়ন রায়ের বাবা। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী এ দিন জানান, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন হাসপাতালে ‘এইএস’ সন্দেহে সাত জন ভর্তি হয়েছেন। এঁদের মধ্যে দু’জন বর্ধমানে, এক জন হুগলিতে, এক জন মুর্শিদাবাদে, এক জন পশ্চিম মেদিনীপুরে, এক জন নদিয়ায় এবং এক জন কলকাতায়। কলকাতায় ভর্তি হওয়া রোগীকে মালদহ থেকে ‘রেফার’ করা হয়েছে।