এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে আসা দুই দিনাজপুরের রোগীদের পরীক্ষার জন্য ‘রেফার’ করতে হচ্ছে মালদহ কিংবা শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অথচ, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করলেন, ওই দুই জেলার সদর হাসপাতালেই এনসেফ্যালাইটিস জীবাণু চিহ্নিতকরণের ব্যবস্থা রয়েছে। কীসের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী এমন ঘোষণা করলেন, তা অবশ্য বুঝে উঠতে পারছে না দুই জেলার স্বাস্থ্য দফতর।
দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে দুই দিনাজপুরের প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে এ দিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী এনসেফ্যালাইটিসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেন। তবে এই দুই জেলায় এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ তেমন নেই বলে পরে গঙ্গারামপুর স্টেডিয়ামের প্রকাশ্য সভায় উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট হাসপাতাল এবং উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ হাসপাতালে এনসেফ্যালাইটিস পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে।”
বাস্তব কিন্তু অন্য কথা বলে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বালুরঘাট হাসপাতালে এনসেফ্যালাইটিস নির্ধারণে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থাই নেই। এই হাসপাতালে ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়া রোগ পরীক্ষার জন্য ম্যাক-অ্যালাইজা পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কাজল মণ্ডল জানান, গত এক বছর ম্যাক-অ্যালাইজা পরীক্ষা বালুরঘাট হাসপাতালে করা হয়। ফলে, মুখ্যমন্ত্রী ‘কেন এমন বললেন’, সে প্রশ্ন পাক খাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরেই।
একই ছবি উত্তর দিনাজপুরেও। রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে এখনও পর্যন্ত এনসেফ্যালাইটিস পরীক্ষার কিট আসেনি। জুলাই মাস থেকে এখনও পর্যন্ত ৩৭ জনের রক্ত উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালের সুপার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “সব রিপোর্ট চলে এসেছে। কারও রক্তে এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু পাওয়া যায়নি।” জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত ১ জুলাই থেকে এখনও পর্যন্ত রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতাল থেকে এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত সন্দেহে দু’জন পুরুষ রোগীকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে রেফার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা এক যুবকের শরীরে এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মেলে। প্রায় দু’সপ্তাহ আগে ওই ব্যক্তি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
তা হলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বালুরঘাট হাসপাতাল এবং রায়গঞ্জ হাসপাতালে এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু চিহ্নিতকরণের পরিকাঠামো রয়েছে বলে দাবি করলেন কেন? রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, মালদহ মেডিক্যাল কলেজ, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি সব জায়গাতেই এনসেফ্যালাইটিস পরীক্ষার কিট রয়েছে। শুধু বালুরঘাটে এবং রায়গঞ্জে কিট নেই। বালুরঘাট হাসপাতালের জন্য কিট কেনার অর্ডার দেওয়া হয়েছে। এখনও আসেনি। এলেই সেখানে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের পরীক্ষাগুলি শুরু হবে।”
তবে বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে এই দাবিরও পুরো মিল নেই বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে। কারণ, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার হাসপাতালে কিট সবে গিয়ে পৌঁছেছে। সেখানে এখনও জীবাণু চিহ্নিতকরণের পরিকাঠামো তৈরিই হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণায় উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের স্বাস্থ্য কর্তারা কিছুটা বিভ্রান্ত। তাঁদের অনেকেই ঘনিষ্ঠ মহলে বলে ফেলেেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে কেউ যদি আমাদের এখানে এসে এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু চিহ্নিতকরণের জন্য চাপাচাপি করেন, তা হলে কিছু বলার থাকবে না।”
এই ‘পরিস্থিতি’তে স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের একাংশ বলছেন, “ওই সব জায়গায় কিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সেটাই হয়তো বলতে চেয়েছিলেন।