বদহজমে ভোগেননি, এমন বাঙালি পাওয়া দায়। হজমশক্তি বাড়ানোর কিছু সহজ উপায় আমাদের হাতের কাছেই রয়েছে। নিয়মিত যোগাসন করলে অম্বল, অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে পরিত্রাণ মিলবে। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতাও বাড়বে।
যোগ বিশেষজ্ঞ তাপস মণ্ডল কয়েকটি আসনের কথা জানালেন, যেগুলো বদহজম থেকে রেহাই দেবে এবং হজমশক্তি বাড়াবে...
বজ্রাসন
তাপস মণ্ডল সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বজ্রাসনের উপরে। প্রত্যেক দিন দুপুর ও রাতে খাওয়ার পরে বজ্রাসনে বসলে খাবার দ্রুত হজম হবে। এই আসনে শরীরের নীচের অংশ ৮০-৯০ শতাংশ ব্লক থাকে। এর ফলে রক্তপ্রবাহ শরীরের নিম্নাংশে না গিয়ে স্টমাক সংলগ্ন অংশে অধিক পরিমাণে সঞ্চারিত হয়, এটি জ্বালানির কাজ করে। খাদ্য হজম হওয়ার জন্য তা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই খাওয়ার পরে পাঁচ-ছ’মিনিট বজ্রাসনে বসলে খাবার চট করে হজম হয়। বলা হয়, খেয়েদেয়ে উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করা ভাল। এটি কি ভ্রান্ত ধারণা? তাপস মণ্ডল বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন, ‘‘অফিসযাত্রীরা কোনও রকমে খেয়ে প্রায় ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে পড়েন। এটা ইনডাইজেশনের অন্যতম কারণ। খাওয়ার পরে যেমন শুয়ে পড়বেন না, তেমনই খুব বেশি হাঁটাহাঁটিও করবেন না। রাতে খেয়েই শুয়ে পড়ার অভ্যেস থাকে অনেকের। খাওয়ার পরে মিনিট তিনেক বজ্রাসনে বসুন। এমনি রেস্ট নিন। বাড়িতে স্বাভাবিক হাঁটচলা করা যাবে। আর খিদে পেলে, তবেই খান। আমরা একটা খাবার হজম হওয়ার আগেই আর একটা খেয়ে নিই। এটাও বদহজমের বড় কারণ।’’
অন্যান্য কিছু আসন
বক্রাসন, অর্ধমৎসেন্দ্রাসন, জানুশিরাসন, পশ্চিমোত্তাসন — এগুলো সব বসে করার আসন। দাঁড়িয়ে পদহস্তাসন করা যায়। পশ্চিমোত্তাসন দাঁড়িয়ে করলে সেটাকেই পদহস্তাসন বলা হয়। পবনমুক্তাসন করতে হয় শুয়ে থাকা অবস্থায়। হজমক্ষমতা বাড়াতে এই আসনগুলোই সবচেয়ে কার্যকর।
আরও একটি আসনের কথা যোগ বিশেষজ্ঞেরা বলে থাকেন— ময়ূরাসন। কথায় আছে ময়ূরাসন করলে বিষও হজম হয়ে যায়। তাপসের কথায়, ‘‘প্রত্যেক দিন ময়ূরাসন অভ্যেস করলে হজমক্ষমতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে এই আসনের বিধিনিষেধ আছে। কম বয়সি এবং সন্তান হওয়ার আগে মহিলাদের এই আসন করা উচিত নয়। এতে ইনফার্টিলিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ নেই।’’
ধৌতি ক্রিয়া
যোগাভ্যাসে অনেক রকম ক্রিয়া থাকে। হজমশক্তি বাড়ানোর সঙ্গে ধৌতি ক্রিয়াও প্রয়োজন, জানালেন তাপস মণ্ডল। সপ্তাহে অন্তত একদিন বমন ধৌতি ক্রিয়া করতে হবে। এতে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক-দু’লিটার জল খেয়ে বমি করতে হবে। এতে স্টমাক ওয়াশ হবে এবং পেটের মধ্যে জমে থাকা ময়লা বেরিয়ে যাবে। তার সঙ্গে সকালের দিকটা উপবাস করতে হবে। এই ক্রিয়া সপ্তাহে একদিনের বেশি নয়। নয়তো শরীর থেকে প্রয়োজনীয় এনজ়াইম বেরিয়ে যাবে।
যোগের প্রস্তুতি ও নিষেধ
মনে রাখতে হবে, সব আসন সকলের জন্য নয়। শরীর ও বয়স বুঝে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে করতে হবে। যোগাসনের আগে ওয়ার্মআপ এক্সারসাইজ় দরকার। ঘাড় থেকে গোড়ালির জয়েন্ট পর্যন্ত কিছু ব্যায়াম আছে, সেগুলো করতে হবে। তার পর আসন। তারও পরে প্রাণায়াম। ‘‘প্রতিটা আসনের এফেক্টিভ ডিউরেশন আছে। তিন মিনিট করে এক একটা আসন করতে হবে। প্রথমেই সেটা হবে না। ১০-২০ সেকেন্ড দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে হবে। আসন করার সময়ে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে,’’ বললেন তাপস মণ্ডল।
গ্যাস, অ্যাসিডিটির সমস্যায় কষ্ট পেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তখন কোনও আসন করতে যাবেন না। হার্নিয়া, পেটের অংশে কোনও রকম সার্জারি হয়েছে, কার্ডিয়াক সমস্যা আছে এবং দু’বছরের মধ্যে সিজ়ারিয়ান হয়েছে— এ সব ক্ষেত্রে যোগব্যায়ামে কিছু বিধিনিষেধ আছে। যোগ বিশেষজ্ঞের
পরামর্শ ছাড়া এগুলো করা উচিত নয়।
অঙ্কন: প্রসেনজিৎ নাথ