আনন্দ কষ্টে না বদলায়, সতর্ক থাকুন। ছবি : শাটারস্টক
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কয়েক মাস গৃহবন্দি থেকে মাটি হয়ে যাওয়া বছরটাকে বিদায় জানাতে সকলেই উন্মুখ। অনেকেই ভাবছেন ‘বিশ সাল বাদ’ গেলেই বুঝিবা নোভেল করোনাও বিদায় নেবে। কিন্তু সে গুড়েও যে বালি পড়বে না এমন আশ্বাস কেউই জোর গলায় দিতে পারছেন না। নতুন স্ট্রেন রাজ্যে ঢুকে পড়ায় তো আতঙ্ক আরও বেড়েছে। দিল্লি-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় তো বর্ষবরণের পার্টিতেই নিষেধাজ্ঞা পড়েছে।
তাও সব ভয়কে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে সকাল থেকেই সাজ সাজ রব। প্রস্তুতি শুরু রাতপার্টির নানা আয়োজনের। মদ্যপানে বাঙালির এখন আর তেমন কোনও ছুঁৎমার্গ নেই। বরং জাঁকিয়ে শীতের দিনে মদ্যপানের আনন্দ নিতে অনেকেই উদগ্রীব। কিন্তু, অতিরিক্ত মদ্যপানের আগে ভেবে নিতে হবে পরিণতির কথাও। হ্যাংওভারের কষ্টের কথা মাথায় রেখেই ‘পিনা’য় নিয়ন্ত্রণ আনা উচিত বলে পরামর্শ দিলেন চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের মেডিক্যাল সুপারিন্টেনডেন্ট প্যাথলজির বিশেষজ্ঞ শঙ্কর সেনগুপ্ত।
আসলে নিউ ইয়ার্স ইভ পালন করতে গিয়ে অনেকেই একসঙ্গে অনেক বেশি পরিমাণে মদ্যপান করে বেসামাল হয়ে যান। ফলে নতুন বছরের প্রথম দিনটায় ঘুম ভাঙে মাথা ব্যথার কষ্ট নিয়ে। কিংবা মারাত্মক অ্যাসিডিটি, বমি, ডায়রিয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে। যা একেবারেই কাম্য নয়। শঙ্কর জানালেন, ৬০ মিলিলিটারের থেকে বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল পান করলেই শরীরে নানান বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন : বছর শেষের হাউস পার্টি, ফিউশন ফুডের ডিনার বানিয়ে চমকে দিন অতিথিদের
অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে আমাদের শরীরে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের ভারসাম্য বদলে যায়। বিশেষ করে অ্যাসিট্যাল্ডিহাইড নামক এক ক্ষতিকর উপাদান জমে শরীরে । ফলে নানা শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও তলানিতে এসে ঠেকে বলে জানালেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্ত।
দুই চিকিৎসকেরই মত বর্ষবরণের পার্টিতে মদ্যপান হোক নিয়ন্ত্রিত। কোনও অবস্থাতেই ৬০ মিলিলিটারের বেশি মদ্যপান করা উচিত হবে না। শঙ্কর সেনগুপ্ত জানালেন, “অনেকেই নানা ধরনের অ্যালকোহল একসঙ্গে পান করেন। এঁদের হ্যাংওভারের ঝুঁকি খুব বেশি। আবার অনেকে মনে করেন রেড ওয়াইন খেলে হার্ট ভাল থাকে। তাই বেশি পরিমাণে রেড ওয়াইন পান করেন। সেটাও ভুল। স্বচ্ছ অ্যালকোহলের থেকে কালারড স্পিরিটের খারাপ গুণ অনেক বেশি। তাই এর থেকেও হ্যাংওভারের আশঙ্কা বেশি। শটস এর থেকে ককটেল তুলনামূলক ভাবে ভাল। কেননা ককটেলে কিছুটা ফ্রুট জ্যুস থাকে বলে টক্সিসিটির পরিমাণ কমে যায়। তবে ফ্রুট জ্যুস দিয়ে তৈরি ককটেল পান করলে হাইপার অ্যাসিডিটির আশঙ্কা বাড়তে পারে।”
আসলে মদ্যপান করলে লিভার, কিডনি, ব্রেন-সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে তার প্রভাব পড়ে। ইউরিনারি ব্লাডার অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে যায়। ফলে বারবার টয়লেটে যেতে হয়। মোদ্দা কথা শরীর থেকে অনেকটা জল বেরিয়ে গিয়ে ডিহাড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ে। হ্যাংওভারের প্রধান কারণ কিন্তু শরীরে জল ও মিনারেলের ঘাটতিই।
আরও পড়ুন : মোবাইল স্ক্রিনেই গ্লাস ঠেকিয়ে চেঁচিয়ে বলুন উল্লাস!
হ্যাংওভারের উপসর্গ হল মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা। যাঁদের মাইগ্রেন আছে তাঁদের সমস্যা অনেকটাই বেশি। একই সঙ্গে হাইপার অ্যাসিডিটি, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া, ভয়ানক ক্লান্ত বোধ হওয়ার মতো উপসর্গও দেখা যায় বলে জানালেন দেবকিশোর গুপ্ত। অনেকের রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, প্রচুর ঘাম হয়। যদিও এ সব উপসর্গ মূলত মদ্যপানের পরদিন সকালের দিকে দেখা যায়। ঘাম হলে, হার্টবিট বেড়ে গেলেও শ্বাসকষ্ট হয়। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত বলে পরামর্শ শঙ্কর সেনগুপ্তর। অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ হিসেবেও এ সব হয়। বর্ষবরণের পার্টির আগে অ্যান্টাসিড খেয়ে নিলে অ্যাসিডিটির সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়। তবে মদ্যপান নিয়ন্ত্রণে না রাখলে সমস্যার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া মুশকিল।
তবে হ্যাংওভার যদি শেষমেশ হয়েই যায়, তবে তা থেকে মুক্তিলাভ কী ভাবে! জেনে নিন—
পর্যাপ্ত জলপান করতে হবে। মদ্যপানের সময় অনেকের গা গুলিয়ে ওঠে। সে ক্ষেত্রে অবশ্য একসঙ্গে বেশি জলপান করলে বমি হয়ে যেতে পারে। তাই অল্প অল্প করে বারে বারে জল খান। অ্যালকোহল শরীরে গিয়ে অনেকসময় রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়। এই কারণেই মাথা ব্যথা হয়, দূর্বল লাগে। তাই হ্যাংওভার হলে কিছুটা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়া দরকার। টোস্ট, রুটি তরকারি, মুড়ি বা যে কোনও খাবার খেতে হবে। খালি পেটে মদ্যপান করলে একদিকে অ্যাসিডিটি অন্যদিকে ডিহাইড্রেশন হয়ে শরীর খারাপ লাগে। গ্রিল্ড চিকেন, বাদাম, স্যালাড বা এই ধরনের কোনও খাবার খেয়ে অ্যালকোহল খেলে সমস্যা কম হয়। চা বা কফি পান করলেও হ্যাংওভার কমে যায়। অ্যাসিডিটির কারণে চা কফি না খেলে মাথার যন্ত্রণা বেড়ে যায়। এক গবেষণায় জানা গিয়েছে যে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও জিঙ্ক খেলে হ্যাংওভারের ঝুঁকি কমে।মদ্যপানের ফলে মাথার যন্ত্রণা, বমি, ডায়রিয়া প্রতিরোধে অল্প আদা খেলে ভাল ফল পাওয়া যায়। জিনসেং খেলেও নেশা কেটে যায়। তবে তেঁতুল জল বা লেবুর জল খেলে যে মদ্যপানজনিত শারীরিক অস্বস্তি কমে তার কোনও বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ এখনও মেলেনি।
আরও পড়ুন : বাইরে থেকে ফিরে শীতের পোশাকও কি এখন রোজ ধুতে হবে?